ঢাকা: পুলিশ বলছে কিছু অপরাধী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে নানা অপরাধকর্ম চালিয়ে নাগরিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিনষ্ট করার পায়তারা করছে। অপরাধীদের কেউ কেউ গোয়েন্দা (ডিবি) শাখার পরিচয়ে ছিনতাই, ডাকাতি ও অপহরণসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে আসছে রাজধানীসহ সারাদেশে।
সম্প্রতি, গত ২৮ নভেম্বর একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী ৩৮.৯৭০ ভরি স্বর্ণালংকার ও ৩ লাখ ৪৬ হাজার টাকা নিয়ে ফরিদপুরে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার জন্য সিএনজি অটোরিকশা যোগে পোস্তগোলার উদ্দেশে রওয়ানা হন। রাত ৮টার দিকে শ্যামপুরের পোস্তগোলা ব্রিজের পূর্ব পাশে পৌঁছলে কেরানীগঞ্জের দিক থেকে আসা একটি সাদা রংয়ের মাইক্রোবাস হঠাৎ তার সিএনজির গতিরোধ করে। তিনি কিছু বুঝে উঠার আগেই মাইক্রোবাস থেকে দুইজন নেমে নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দেয় এবং তাকে টেনেহেঁচড়ে মাইক্রোবাসে উঠায়।
ওই গাড়িতে ড্রাইভারসহ আরো ৪/৫জন ছিলো। তারা সবাই মিলে ভুক্তভোগীর হাত-পা ও চোখ বাঁধার চেষ্টা করে। তিনি বাধা দিলে কিলঘুষি মেরে আহত করে এবং একপর্যায়ে তাকে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে স্বর্ণালংকর ও নগদ টাকা ভর্তি ব্যাগ এবং ২টি মোবাইল ফোন নিয়ে নেয় ডাকাত চক্রের সদস্যরা।
এই ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে শ্যামপুরে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনায় স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকাসহ দুর্ধর্ষ ৪ ডাকাতকে গ্রেপ্তার করেছে থানা পুলিশ। গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন- মো. আলম, মো. আলমগীর হোসেন, মো. পলাশ শেখ ও মো. সাব্বির হোসেন।
পুলিশ বলছে, এই ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ডাকাতরা গাড়িটি ঢাকার দিকে চালিয়ে যাচ্ছিল। ঘটনাস্থল থেকে ৫০ গজ দূরে রাস্তায় প্রচণ্ড জ্যাম থাকায় তারা গাড়িটি ঘুরিয়ে উল্টোপথে আসতে থাকে। এ সময় শ্যামপুরের পোস্তগোলা এলাকায় কর্তব্যরত সার্জেন্ট গাড়িটি থামিয়ে কাগজপত্র দেখতে চায় ও উল্টাপথে আসার কারণ জিজ্ঞাসা করেন। তখন একজন নিজেকে সেনাবাহিনীর অফিসার পরিচয় দেয়। এ সময় ভুক্তভোগী পুলিশ দেখে গাড়ির ভেতর থেকে তাকে বাঁচানোর জন্য চিৎকার করে। তখন সার্জেন্টের সন্দেহ হলে আশপাশের টহল পুলিশের সহায়তা নেন।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) ড. খ: মহিদ উদ্দিন বলেন, এই ঘটনায় কর্তব্যরত সার্জেন্ট, টিআই ও শ্যামপুর থানা টহল পুলিশ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। সেই সঙ্গে লুণ্ঠিত স্বর্ণালংকার, নগদ টাকাসহ ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করেন।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, ডিবি পুলিশ পরিচয়ে যাতে কোনো ধরনের আপরাধ কেউ সংঘটতি করতে না পারে সেজন্য গোয়েন্দা পুলিশ সদস্যরা তৎপর রয়েছে। প্রতিনিয়ত আমাদের অভিযান চলছে।
এদিকে গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, এসব অপরাধ দমনের জন্য ডিবিতে সংযোজন করা হয়েছে নতুন জ্যাকেট। এ জ্যাকেট নকল করা সম্ভব হবে না। যারা আসল ডিবি পুলিশ তারা অবশ্যই বিশেষ ওই জ্যাকেট পড়ে অভিযানে যাবেন। আর ওই জ্যাকেটে কিউআর কোড সংযোজন করা হয়েছে। এতে করে মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে ডিবি পুলিশের পোশাকে সংযোনিত কিউআর কোডটি স্ক্যান করলে পূর্ণাঙ্গ সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪১ ঘণ্টা,নভেম্বর ৩০, ২০২৩
এসজেএ/এমএম