ঢাকা, সোমবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ইউএনওর বোন পরিচয়ে কোটি টাকা হাতানো সেই স্বপ্না আটক

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০২৩
ইউএনওর বোন পরিচয়ে কোটি টাকা হাতানো সেই স্বপ্না আটক নাসিমা আক্তার স্বপ্না

লালমনিরহাট: ইউএনওর বোন পরিচয়ে হতদরিদ্র নারীদের প্রশিক্ষণ, চাকরিসহ নানা সরকারি অনুদান পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রতারণা করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া সেই প্রতারক নাসিমা আক্তার স্বপ্নাকে আটক করেছে পুলিশ।

বুধবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে আদিতমারী হ্যালিপ্যাড এলাকায় নিজ বাড়ি থেকে তাকে আটক করে লালমনিরহাটের আদিতমারী থানা পুলিশ।

 

ইউএনওর বোন এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেওয়ার কথা অস্বীকার করলেও হতদরিদ্র নারীদের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন প্রতারক স্বপ্না।  

এর আগে মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) দুপুরে প্রতারক স্বপ্নাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় ঘেরাও করে স্মারকলিপি দেন ভুক্তভোগী হতদরিদ্র নারীরা।

আটক প্রতারক নাসিমা আক্তার স্বপ্না আদিতমারী টিএনটি পাড়া হেলিপ্যাড এলাকার নুর ইসলামের মেয়ে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, গ্রামীণ হতদরিদ্র বেকার নারীদের স্বাবলম্বী করার প্রতিশ্রুতিতে সেলাইসহ নানান প্রশিক্ষণ ও মাসিক ১০ হাজার করে সম্মানী দেওয়ার নাম করে জনপ্রতি ২/৩ হাজার করে কয়েকশত নারীর কাছে টাকা নেন নাসিমা আক্তার স্বপ্না। একইসঙ্গে নারীদের মহিলা বিষয়ক, সমাজসেবা, সমবায় ও যুবউন্নয়ন দফতরের বিভিন্ন সরকারি ভাতাসহ নানান সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ৪/৫ হাজার করে টাকা আদায় করেন তিনি। নাসিমা আক্তার স্বপ্না নিজেকে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বোন পরিচয় দিয়ে গ্রামীণ নারীদের সঙ্গে প্রতারণা করে কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছেন।

জানা গেছে, শুরুর দিকে নিজেকে ইউএনওর বোন পরিচয় দিয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের একটি কক্ষ
ভাড়া নিয়ে আদিতমারী মহিলা উন্নয়ন সংস্থার ব্যানার ব্যবহার করে প্রশিক্ষণ চালু করেন নাসিমা আক্তার স্বপ্না। যা দেখে নারীরা তার প্রতারণার ফাঁদে পা বাড়ায়। এভাবে পুরো উপজেলায় জাল বিস্তার করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেন নাসিমা আক্তার স্বপ্না।

গত ৩/৪ মাস আগে স্থানীয়রা বিষয়টি ইউএনওকে মৌখিক অবগত করলে তিনি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে থেকে স্বপ্নার প্রশিক্ষণ বন্ধ করে দেন। পরে প্রতারক স্বপ্ন কৌশলে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নিজ বাড়ি আদিতমারী হ্যালিপ্যাড এলাকায় স্থানান্তরিত করেন। এরই মাঝে প্রথম দফায় প্রশিক্ষণ নেওয়া নারীদের প্রশিক্ষণের ৩ মাস মেয়াদ শেষ হলেও সম্মানী পাননি। ফলে সম্মানী নিয়ে নারীদের সঙ্গে কয়েক দফায় মারামারির ঘটনা ঘটে স্বপ্নার। প্রতিবাদকারী নারীদের শায়েস্তা করতে স্বপ্নার লাঠিয়াল বাহিনী ব্যবহার করে।

এতেই শেষ নয়, অনেক বেকার নারীকে সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে ৪/৫ লাখ করে টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন স্বপ্না। চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছে স্বপ্না সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের নিকটাত্মীয় পরিচয় দিতেন বলেও ভুক্তভোগীরা জানান।

চাকরি, সরকারি অনুদান ও প্রশিক্ষণের ভাতা না পেয়ে এক পর্যায়ে ভুক্তভোগীরা তার প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেয়ে বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।  

মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) সকালে প্রথমে লালমনিরহাট বুড়িমারী মহাসড়কে থানার গেটে মানববন্ধন করে প্রতারক স্বপ্নার গ্রেপ্তার দাবি করেন ভুক্তভোগী শত শত হতদরিদ্র নারী। ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে নারীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আদিতমারী ইউএনওকে স্মারকলিপি দিয়ে প্রতারক স্বপ্নাকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানায়।  

ভুক্তভোগী হতদরিদ্র নারীদের এমন অভিযোগে মঙ্গলবার বাংলানিউজসহ দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে প্রশাসনের নজরে পড়ে এবং প্রতারক স্বপ্নকে আটকে অভিযান চালায় আদিতমারী থানা পুলিশ। অবশেষে বুধবার দুপুরে নিজ বাড়ি থেকে প্রতারক নাসিমা আক্তার স্বপ্নাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।

স্বপ্নার প্রতিবেশীরা জানান, স্বপ্না একজন প্রতারক। তার বিরুদ্ধে অনেক প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। প্রতারণা করাই তার পেশা।  

আদিতমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মোজাম্মেল হক বলেন, হতদরিদ্র নারীদের সঙ্গে প্রতারণার করার অভিযোগে নাসিমা আক্তার স্বপ্নাকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) জিআর সারোয়ারও একই তথ্য দিয়েছেন।

আরও পড়ুন >> ইউএনওর বোন পরিচয়ে প্রতারণা, হাতিয়ে নিলেন কোটি টাকা 

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০২৩
এসএএইচ


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।