ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

বন্ধ হয়ে গেছে পশ্চিম রেলের ৫২ স্টেশন

শরীফ সুমন, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১০
বন্ধ হয়ে গেছে পশ্চিম রেলের ৫২ স্টেশন

রাজশাহী: স্টেশন মাস্টার, গার্ড, চালক ও অন্যান্য অপারেশনাল স্টাফের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ৫২টি স্টেশন। আংশিকভাবে বন্ধ রয়েছে আরও ২৭টি।



পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সদর দপ্তরের একটি সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, পাকশী ডিভিশনের ফুলতলা, চেংগুটিয়া, রূপদিয়া, যশোর ক্যান্টনমেন্ট, মেহেরুল্লাহনগর, জয়রামপুর, মোমিনপুর, মুন্সিগঞ্জ, ইয়াসিনপুর, শাহাগোলা, তিলকপুর, বেলাইচন্ডি, দারোয়ানি, মির্জাগঞ্জ, ঝিকরগাছা, নাভারন, নন্দনগাছি, নাচোল, জগতি, চড়াইকোল, মাছপাড়া, বেলগাছি ও পাঁচুড়িয়া রেলস্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে। অপরদিকে লালমনিরহাট ডিভিশনে বন্ধ হয়ে যাওয়া স্টেশনগুলোর মধ্যে রয়েছে বালাসীঘাট, কাঞ্চিপাড়া, আনন্দবাজার, ভরতখালি, নশরতপুর, অন্নদানগর, মন্মথপুর, চৌধুরানী, বাউড়া, কিসমত, রুহিয়া, নয়নীগুরুজ, পাঁচপীর মাজার, বালাবাড়ি, টগরাইহাট, সিঙ্গার ডাউরিহাট, শহীদ বোরহান নগর, সুলতানপুর স্কুল, বাজনাহার, রমনাবাজার ও রাজারহাট। এছাড়া পাকশী ডিভিশনে আংশিক বন্ধ হয়ে গেছে মালঞ্চি, জামালগঞ্জ, হিলি, মিরপুর, সবলনগর, সিতলাই, কাঁকনহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রহনপুর, গোয়ালন্দঘাট, দর্শনা ও গোয়ালন্দবাজার এবং লালমনিরহাট ডিভিশনে কাঞ্চন-পঞ্চগড় সেকশনের মাঝের ও লালমনিরহাট-বুড়িমারি সেকশনের মধ্যবর্তী স্টেশনগুলো।
 
লালমনিরহাট ডিভিশনের ট্রাফিক সুপার জহুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ ডিভিশনে ৮৮ জন স্টেশন মাস্টার, ৫২ জন পয়েন্টসম্যান ও ৪২ জন গার্ডের পদ এখনও খালি রয়েছে। বর্তমানে এ ডিভিশনে ৩৭টি ইঞ্জিন দরকার হলেও আছে মাত্র ২০টি। ইঞ্জিন, গার্ড ও অন্য লোকবলের অভাবে প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২টি ট্রেন বাতিল করতে হয়। মাসে ৩ শ’র ওপর ট্রেন বাতিল হয়। গত জানুয়ারি মাসে পশ্চিম জোনে ৩২৪টি ট্রেন বাতিল হয়। ট্রেনগুলো গড়ে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা বিলম্বে চলাচল করে। ’
 
পাকশী ডিভিশনাল ম্যানেজার এসএম মাহবুবুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ ডিভিশনে ২১ জোড়া আন্তঃনগর, ১৬ জোড়া মেইল ও ১৯ জোড়া লোকাল ট্রেন চালাচল করে। এ জন্য ৬২টি সচল ইঞ্জিন দরকার। তবে ৭১টি ইঞ্জিন থাকলেও ১৪টি বিকল থাকে সব সময়। এ ছাড়া পুরনো হওয়ায় চালু ইঞ্জিনগুলোও হারিয়েছে কার্যমতা। পথের মধ্যে মাসে অন্ততঃ ৫টি ইঞ্জিন ফেল করে। ’

তিনি বলেন, ‘ধীরে ধীরে লোকবল সঙ্কট আরও প্রকট হচ্ছে। পাকশী ডিভিশনে একজন মেক্যানিকাল সহকারী ইঞ্জিনিয়ার একাই ১৩টি পদ সামলাচ্ছেন। ’
 
জানা গেছে, পশ্চিম জোনে ১৮৮ জন স্টেশন মাস্টার ও ২৭১ জন ইঞ্জিন চালক পদ খালি রয়েছে। গত জুন মাসে  আর ৫০ জন ইঞ্জিন চালক অবসরে গেছেন। তাদের দিয়ে অতিরিক্ত ডিউটি করানো ঝুঁকিপূর্ণ হলেও তারা বর্তমানে তা করছেন। ৫০ জনের ওপর রেলওয়ে গার্ডের পদ শূন্য রয়েছে। ফলে গার্ডদেরও ওভার টাইম ডিউটি করতে হচ্ছে। রেলের গুরুত্বপূর্ণ টেকনিক্যাল পদ হচ্ছে পয়েন্টস ম্যান। ১২০ জন পয়েন্টসম্যানের পদ শূন্য রয়েছে। লোকবল সঙ্কটের কারণে পশ্চিম জোনে শতকরা ৭০ ভাগ ট্রেন সিডিউল টাইমে চলাচল করতে পারছে না। ফলে যাত্রীরা ট্রেন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
 
পশ্চিম রেলের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে জানান, ১৯৮৫ সাল থেকে লোকবল নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। গত বছর থেকে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অবসরে যাওয়ার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে।

পশ্চিম রেলের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) আনহার মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘২০০৯ ও ২০১০ সালে যারা অবসরে গেছেন তাদের শরীর সুস্থ থাকলে অর্ন্তবর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসাবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ধরনের প্রস্তাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপরে কাছেও পাঠানো হয়েছে। ’

জিএম বলেন, ‘পশ্চিমাঞ্চল রেলের মান উন্নয়নে ব্যাপক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেগুলি বাস্তবায়ন শুরু হলে সব সমস্যা কেটে যাবে। ’

তিনি বলেন, ‘স্টেশন মাস্টার নিয়োগের ব্যাপারে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অচিরেই শূন্য পদগুলিতে নিয়োগের জন্য সার্কুলার দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময় : ০৬০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।