ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অগণতান্ত্রিক পথে ক্ষমতায় যেতে চায় বিএনপি: শেখ হাসিনা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২২
অগণতান্ত্রিক পথে ক্ষমতায় যেতে চায় বিএনপি: শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা | ফাইল ছবি

ঢাকা: একটি গোষ্ঠী দেশে অরাজকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তারা এখন অগণতান্ত্রিক পথে ক্ষমতায় যাওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

মহান বিজয় দিবস-২০২২ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ যখন নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, সে সময় স্বাধীনতা এবং উন্নয়ন বিরোধী একটি গোষ্ঠী অরাজকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

তিনি বলেন, দেশের মানুষের ওপর আস্থা হারিয়ে বিএনপি-জামায়াত এখন বিদেশিদের কাছে দেশের বদনাম করার জন্য কিছু ভাড়াটিয়া লোক নিয়োগ করেছে। পাচারকৃত অর্থ ব্যবহার করছে আর দেশের বদনাম করে বেড়াচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, এখনও এদেশে একাত্তরের ‘শকুনি’ এবং পঁচাত্তরের হায়নাদের বংশধরেরা সক্রিয় আছে। সুযোগ পেলেই তারা দন্ত-নখর বসিয়ে দেশটাকে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলে। সাধারণ মানুষ ভালো আছে দেখলে এদের গায়ে জ্বালা ধরে। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু, বাংলাদেশের মানুষ এদের চিনে ফেলেছে। ষড়যন্ত্র করে আর তাদের বিভ্রান্ত করা যাবে না।

সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসুন, এবারের বিজয় দিবসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সম্মিলিতভাবে শপথ নেই, সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে আমরা বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাব। একটি সুখী-সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণ করবো।

২০০৮ সালেই বিএনপি-জামায়াতকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ২০০৬ সালে এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটারসহ ভোটার তালিকা করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রচেষ্টা চালায়। বিএনপির দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও দুঃশাসনের কারণে দেশে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারি হয় এবং নির্বাচন বাতিল হয়ে যায়। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছিল।

তিনি বলেন, ৩০০ আসনের মধ্যে তারা মাত্র ৩০টি আসন পেয়েছিল। একইভাবে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনেও জনগণ বিএনপি-জামায়াত জোটকে ভোট দেয়নি। জনগণের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়ে তারা এখন অগণতান্ত্রিক পথে ক্ষমতায় যাওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির শীর্ষ নেত্রী এতিমখানার অর্থ আত্মসাৎ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত। আরেক শীর্ষ পলাতক নেতা অর্থ পাচার, দশ-ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান ও একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। সাধারণ জনগণ কেন তাদের ভোট দিতে যাবেন?

আওয়ামী লীগ টানা ক্ষমতায় থাকায় দেশের উন্নতি হচ্ছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে। জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত রয়েছে। সে কারণেই আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকলে কোনদিনই বাংলাদেশ এত উন্নতি করতে পারত না। উন্নয়নশীল দেশ হতে পারত না। এখন, দেশবাসী আপনাদেরই বেছে নিতে হবে আপনারা কী চান—উন্নত মর্যাদাশীল জীবনের ধারাবাহিকতা নাকি বিএনপি-জামায়াত জোটের দুর্বৃত্তায়নের দুর্বিসহ জীবন?

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের সরকার। মানুষের কল্যাণের জন্যই কাজ করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। মানুষের ভোগান্তি হোক, কষ্ট হোক—তা আমরা কখনোই চাই না। বৈশ্বিক কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পেয়েছিল। তা এখন অনেকটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। মূল্যস্ফীতিও হ্রাস পাচ্ছে। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলসহ কোনো জিনিসের দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে আমরা তা সমন্বয় করবো।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কথা তুলে ধরে সবাইকে উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমাদের মাটি ঊর্বর। মাটিতে বীজ ফেললেই যেখানে গাছ জন্মে, ফল হয়, সেখানে বাইরে থেকে কৃষিপণ্য আমদানি করতে হবে কেন? আমি আপনাদের অনুরোধ করছি, এক ইঞ্চি জমিও পতিত রাখবেন না।

তিনি বলেন, সঙ্কট আসবে। সঙ্কটে ভয় পেলে চলবে না। জনগণের সহায়তায় আমরা করোনা ভাইরাস মহামারি সফলভাবে মোকাবিলা করেছি। বর্তমান বৈশ্বিক মন্দাও আমরা মোকাবিলা করবো, ইনশাআল্লাহ। এজন্য আপনাদের সহযোগিতা চাই।

আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য সরকারের আমলের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বিজয়ের ৫১ বছর পূরণ হলো। আমাদের অব্যাহত প্রচেষ্টা হলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের দারিদ্র্য-ক্ষুধামুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলা।

তিনি বলেন, পঁচাত্তরের পর ২৯ বছর মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল এবং তারা দেশের সম্পদ লুটে-পুটে খেয়ে দেশটাকে খোকলা বানিয়েছিল।

আরও পড়ুন:
জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
রিজার্ভ নিয়ে অনেকে মনগড়া মন্তব্য করছেন: শেখ হাসিনা
টাকা ঘরে রেখে বিপদ ডেকে আনবেন না: প্রধানমন্ত্রী


বাংলাদেশ সময়: ১৯৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২২
এমইউএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।