ঢাকা, শনিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ মে ২০২৪, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

২০২৬ সালের আগেই জাপানের সঙ্গে এফটিএ সই

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২২
২০২৬ সালের আগেই জাপানের সঙ্গে এফটিএ সই

ঢাকা: ২০২৬ সালের আগেই জাপানের সঙ্গে ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (এফটিএ) বা ইকোনোমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট (ইপিএ) চুক্তি হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

সোমবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেলে সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ জাপান এফটিএ সই উপলক্ষে যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা আরম্ভকরণ বিষয়ে জয়েন্ট স্টেটমেন্ট দেওয়া এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকির নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে জাপানের টোকিওতে জাপান কেবিনেট সেক্রেটারি এ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।  

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের এই সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার সংরক্ষণ, সম্প্রসারণ ও বিভিন্ন দেশে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা পাওয়ার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দেশ ও ট্রেড ব্লকের সঙ্গে আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতের দেশ জাপান এবং এটি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশিদার। জাপান বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য একটি বাণিজ্য সম্ভাবনাময় এলাকা। পণ্য ছাড়াও সেবা এবং বিনিয়োগ খাতেও জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের সম্ভাবনা রয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে দুই দেশের মধ্যে এফটিএ বা ইপিএ সইয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে জাপান ও বাংলাদেশ যৌথভাবে দুই দেশের মধ্যে এফটিএ বা ইপিএ সম্পাদনের লক্ষ্যে যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করবে। যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনার পর সমীক্ষা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দুই দেশের মধ্যে এফটিএ বা ইপিএ সম্পাদনের লক্ষ্যে শিগগরিই নেগোসিয়েশন আরম্ভ করা সম্ভব হবে।

কবে নাগাদ এফটিএ চুক্তি সই হবে বা এ ফিজিবিলিটি পরীক্ষা কতো বছর চলবে এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, আজ তো মাত্র পথ চলা শুরু হলো। এটা এতো সহজ ব্যাপার না যে, দুই- চার, দশ দিনের মধ্যে শেষ করা যাবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হবে। আজ শুরু করা মানে যতো দ্রুত সম্ভব এটা আমরা করবো।

তিনি বলেন, আমাদের প্রকৃত ক্রাইসিস শুরু হবে ২০২৬ সালের পর থেকে। আমাদের মূল টার্গেট থাকবে ২০২৬ সালের আগেই যেন আমরা দুই পক্ষ একটি এফটিএ বা ইপিএ যে কোনো একটি বিজনেস চুক্তি করা। যাতে বাংলাদেশ এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পর যেন রপ্তানিতে কোনো সমস্যা সৃষ্টি না হয়।

২০২৬ সালের পর কোনো ধরনের সংকট হতে পারে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, আমরা যখন আপ গ্রাজুয়েশনে যাবো তখন কোটা ফ্রি, ডিউটি ফ্রি সুবিধা নিয়ে বিভিন্ন সমস্যা আসতে পারে। যদিও আমরা জানি জিএসপি প্লাসের একটি বিষয় আছে সেটা ২০২৯ সাল পর্যন্ত থাকবে। তবে সেটা একটু কঠিন হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ২০২৬ সালকে মাথায় রেখে এখন থেকেই চুক্তি গুলো করতে। হঠাৎ করে যাতে আমাদের সমস্যা না হয়। সেজন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, জাপানের সঙ্গে গত ৫০ বছরের যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ব্যবসা-বাণিজ্যের যে বিশ্বাসযোগ্যতা, সেটা অনেক গভীরে আছে। তা কোনো ছোট খাটো ব্যাপার নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই।

জাপান ছাড়া অন্য কোনো দেশের সঙ্গে এফটিএ করার চিন্তাভাবনা আছে কিনা জানতে চাইলে টিপু মুনশি বলেন, আপনারা জানেন ভূটানের সঙ্গে চুক্তি করেছি, ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে কথা চলছে। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে প্রাথমিক চুক্তি করেছি। নেপালের সঙ্গে কাগজপত্র তৈরি হয়ে আছে এবং শ্রীলঙ্কার সঙ্গে কথা চলছে। আপাতত ভারত ও চীনের সঙ্গে সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (সেপা) করা হচ্ছে। তবে এটা ঠিক যে রাতারাতি কিছু করা যায় না। কথা চলছে আমরা রিচ করবো শিগগিরই।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ বর্তমান সরকারের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। এ অর্জন বিশ্বে বাংলাদেশের পজিটিভ ইমেজ এবং বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টির পাশাপাশি বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও তৈরি করবে। যার মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে পণ্য রপ্তানিকালে শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা ২০২৬ সালের পরে হারানো অন্যতম। এর ফলে, বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যকে ওই সব দেশের বাজারে প্রবেশের সময় সাধারণভাবে আরোপিত শুল্কের সম্মুখীন হতে হবে। ফলে ওই সব দেশে বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার সংকোচনের সম্ভাবনা রয়েছে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, জাপান ও বাংলাদেশের সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (ইপিএ) সইয়ের  লক্ষ্যে যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শুরু করার। ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণ করবে। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে উল্লেখ করার মতো উন্নয়ন হয়েছে। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশে অনেক বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। সেটি করা সম্ভব হলে বিভিন্ন পণ্য সরবরাহের ধারা অব্যাহত থাকবে। সম্প্রতি জাপান-বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের অনেক উন্নয়ন হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২২
জিসিজি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।