ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

লাইফস্টাইল

চ্যানেলের ঈদ আয়োজন : বিজ্ঞাপনের ফাঁকে অনুষ্ঠান!

বিনোদন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১০

বিটিভিসহ দেশের নয়টি স্যাটেলাইট চ্যানেল এবারও প্রচার করেছে ৬ থেকে ৭ দিনব্যাপী বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। এর মধ্যে নাটকের সংখ্যা ছিল সর্বাধিক।

প্রায় দেড়শ একক নাটক প্রচার হয়েছে। টেলিফিল্ম দেখানো হয়েছে প্রায় ৩০টি। বিশেষ ধারাবাহিক ও খন্ডনাটক প্রচার হয়েছে ৫টি। একটি ছবির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ারসহ নতুন-পুরনো মিলিয়ে বাংলা সিনেমা দেখানো হয়েছে ৩০টির বেশি। নন-ফিকশন অনুষ্ঠানের মধ্যে সর্বাধিক ছিল সঙ্গীতানুষ্ঠান। খ্যাতিমান সঙ্গীতশিল্পীদের চেয়ে উঠতি শিল্পীদের গানের অনুষ্ঠান বেশি প্রচার হয়েছে এবার। প্রায় প্রতি রাতেই একাধিক চ্যানেলে ছিল লাইভ মিউজিক প্রোগ্রাম। বিনোদনমূলক ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান প্রচার হয়েছে তুলনামূলক কম। সেই তুলনায় বেড়ে গেছে টক শো প্রচারের সংখ্যা।

সব মিলিয়ে কেমন হলো বিভিন্ন চ্যানেলের ঈদের অনুষ্ঠান? দেশের কয়েকজন মিডিয়া-ব্যক্তিত্বের কাছে ছিল বাংলানিউজের এই প্রশ্ন। উত্তরে তারা প্রায় প্রত্যেকেই টিভি চ্যানেলগুলোর মাত্রাতিরিক্ত বিজ্ঞাপন প্রচারে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। এই অভিযোগ সাধারণ দর্শকেরও। তাদের মতে, ঈদে প্রায় প্রতিটি চ্যানেলের অতিরিক্ত বাণিজ্যিকীকরণ টিভি অনুষ্ঠান দেখার প্রতি মানুষের আগ্রহ কমিয়ে দিয়েছে বহুগুণ।
আসুন জানা যাক ঈদ-অনুষ্ঠান সম্পর্কে তাদের মূল্যায়ন।

নাটক নিয়ে নিরীক্ষাকে স্বাগত জানাই : আতিকুল হক চৌধূরী

উৎসব বা বিশেষ দিনের টিভি অনুষ্ঠান দেখতে আমি আগ্রহের সঙ্গেই টিভি সেটের সামনে বসি। এক পর্বের টিভিনাটকের প্রতি আমার আছে বিশেষ দুর্বলতা। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে যে, ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ধৈর্য ধরে কোনও নাটকের পুরোটা দেখা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। মান নিয়ে ভালোমন্দ বলার আগে নাটকটি তো আমাকে দেখতে হবে। যেটুকু দেখেছি তা খ-িাংশ। পুরো না দেখে তো আর মন্তব্য করা যায় না। তবে আমার মনে হয়েছে, অনেকে নির্মাতাই টিভিনাটক নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। এটাকে আমি স্বাগত জানাই।

টিভি খুললেই দেখি বিজ্ঞাপন আর বিজ্ঞাপন : হুমায়ূন ফরীদি

টিভির অনুষ্ঠান আগ্রহ নিয়ে দেখতে বসেছিলাম। কিন্তু টিভি খুললেই দেখি খালি বিজ্ঞাপন আর বিজ্ঞাপন। তাই আর দেখা হয়নি কিছু আমার। এমন কী নিজের অভিনীত এবং পরিচালিত নাটকও দেখিনি। সত্যি বলতে কী, টিভিতে আগে অনুষ্ঠান বা নাটকের ফাঁকে ফাঁকে বিজ্ঞাপন দেখাত, এখন বিজ্ঞাপনের ফাঁকে ফাঁকে নাটক বা অনুষ্ঠান প্রচার হয়।

ঈদের নাটকের প্রতি দর্শকরা আগ্রহ হারাচ্ছে : সালাহউদ্দিন লাভলু

ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারণে এবারের ঈদের সব অনুষ্ঠান দেখতে পারিনি। তবে নিজের পরিচালিত পয়েন্ট থ্রি, সার্ভিস হোল্ডার, তিন গেদা, মোহর শেখ, অংকুরের স্বপ্ন নাটকগুলো দেখেছি। নিজের কাজগুলো মূল্যায়ন করতে এ নাটকগুলো মিস করিনি। এবারই প্রথমবারের মতো এ অনুষ্ঠানমালার লম্বা তালিকায় ঢুকে পড়েছে ছয় ও সাত পর্বের ধারাবাহিক।   বিজ্ঞাপন আধ্যিকের কারণে দর্শকরা অনুষ্ঠানগুলো ভালোভাবে দেখতে পারেনি। প্রতিবার দুই ঈদে এ যন্ত্রণা থেকে রেহাই পাচ্ছে না দর্শকরা। বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে একটা নীতিমালা থাকা দরকার। দর্শকই একটি চ্যানেলের মূল। অতি-বিজ্ঞাপন প্রচারের কারণে দর্শক যদি অনুষ্ঠানই দেখা বাদ দিয়ে দেয়, তাহলে আর থাকল কী? এ বিষয়টি চ্যানেল কর্তৃপক্ষের মাথায় রাখা দরকার। এবার ঈদে মানসম্পন্ন বেশ কিছু নাটকে প্রচার হয়েছে। আবার মানহীন নাটকও প্রচারিত হয়েছে। দেখা যায়, একজন শিল্পী যদি ৩০ দিনই নাটকের শুটিং করেন তাহলে ভালো আউটপুট তার কাছ থেকে পাওয়া যায় না। প্রতি ঈদের চেয়ে এবারের ঈদ আয়োজন ছিল বাণিজ্যমুখী। ঈদ এলেই জমজমাট বাণিজ্যে মেতে উঠে অনেকেই। ৪০ মিনিটের একটি নাটক প্রচার করতে ২ ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে। এ কারণে ঈদের নাটকের প্রতি দর্শকরা আগ্রহ হারাচ্ছে।

সব যুগেই ভালো মানের অনুষ্ঠানের সংখ্যা কম ছিল : মোস্তফা সারয়ার ফারুকী

আমি ঈদের অধিকাংশ অনুষ্ঠানই দেখেছি। ফিকশনের মধ্যে ভালো লেগেছে আলভি আহমেদের ‘কক্ষপথে মন’, নুরুল আলম আতিকের ‘ডালিম কুমার’, মোস্তফা কামাল রাজের ‘লস্ট অ্যান্ড  ফাউন্ড’, ইফতেখার আহমেদ ফাহমির ‘ব্রেকিং নিউজ’ । এছাড়া  আরও কয়েকটা নাটক ভালো লেগেছে এ মূহূর্তে নাম মনে পড়ছে না । নন-ফিকশনের মধ্যে ভালো লেগেছে এনটিভির বাপ্পা ,পার্থ এবং হায়দার ভাইকে নিয়ে লাইভ গানের অনুষ্ঠান। একুশে টিভির ‘এলআরবি’কে নিয়ে লাইভ অনুষ্ঠান। এটিএনের ভালো লেগেছে সাক্ষাৎকারবিষয়ক একটি অনুষ্ঠান ও  ‘নিউজ আওয়ার এক্সট্রা’ এবং ‘সাতরঙ’।
আমি বার্ধক্যজনিত সমস্যায় জর্জরিত নই। তাই গলা গম্ভীর করে বলতে পারব না ‘অনুষ্ঠানের মান দিন দিন নেমে যাচ্ছে’। এখন অনুষ্ঠান নির্মাণে অনেক আধুনিকতা এসেছে । তবে সব যুগেই ভালো মানের অনুষ্ঠানের সংখ্যা কম ছিল, এখনো তাই আছে। সব সময়ই শতকরা ২০ ভাগ অনুষ্ঠান ভালো হয়, বাকিগুলো হয় না। এখনো তাই হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন প্রচারের মান উন্নয়ন হয়েছে : গিয়াসউদ্দিন সেলিম

এবার ঈদের টিভি অনুষ্ঠানমালা দেখেছি, অনেক দেখেছি। তবে তা অনুষ্ঠান নয়, বিজ্ঞাপন। অনুষ্ঠানের ভালোমন্দ বলতে হলে তো অনুষ্ঠান দেখতে হবে। তা তো দেখতে দেয়নি টিভি চ্যানেলওয়ালারা। ওরা আমাদের  বিজ্ঞাপন আর সংবাদ দেখিয়েছে। যখনই চ্যানেল ছাড়ি, তখনই বিজ্ঞাপন। পাঁচ মিনিট পর পর দশ মিনিট ব্রেক। আপনি অনুষ্ঠানের মান নিয়ে না লিখে লিখতে পারেন ‘বিজ্ঞাপন প্রচারের  মান উন্নয়ন হয়েছে’।

নতুনরা বেশ ভালোই করছে : আফসানা মিমি

ঈদের অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ হলো এক পর্বের নাটক। আজকাল ঈদ বা বিশেষ উপলক্ষ ছাড়া এক পর্বের নাটক প্রচার হয় না বললেই চলে। তবে মজার ব্যাপার হলো, এবার ঈদে একাধিক বিশেষ ধারাবাহিক নাটক প্রচার হয়েছে, এটা আমাদের টিভিমিডিয়ার আরেকটা নতুন সংযোজন। কিছু নাটক দেখেছি। নতুনরা বেশ ভালোই করছে। তবে কমেডির ক্ষেত্রে একটু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। ব্যাপারটা কমেডির পর্যায়ে না থেকে ভাঁড়ামি হয়ে যাচ্ছে। আর সিরিয়াস নাটকের সংখ্যা মনে হয় দিন দিন বাড়ছে। সবচেয়ে বেড়েছে নাটক প্রচারের মাঝখানের বিজ্ঞাপন-বিরতি। এতো লম্বা বিজ্ঞাপন বিরতির কারণে অনেক দর্শকই নাটক দেখার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন।

টিভি চ্যানেলগুলো অনুষ্ঠানের কথা বলে প্রতারণা করছে : শাকুর মজিদ

দেখেছি বেশ কিছু অনুষ্ঠান। ভালো লেগেছে বিটিভির ‘ইত্যাদি’। অনুষ্ঠান সম্পর্কে  ভালোমন্দ কিছু বলতে পারব না। কারণ বিজ্ঞাপনের ফাঁকে ফাঁকে অনুষ্ঠান দেখেছি। টিভি চ্যানেলগুলো আসলে অনুষ্ঠানের কথা বলে সবার সাথে প্রতারণা করছে। তাদের কাজ হলো মানুষ জমায়েত করে বিজ্ঞাপন দেখানো। আপনি বরং অনুষ্ঠানের ভালো-খারাপ না লিখে, লিখতে পারেন বিজ্ঞাপনের ভালো-মন্দ নিয়ে ।

নাটক মনোযোগ দিয়ে দেখা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে : অনিমেষ আইচ

আমি নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, তাই সব অনুষ্ঠান দেখতে পারিনি। কিছু দেখেছি। বেশ কয়েকটা নাটক ভালো লেগেছে, তবে উল্লেখ করার মতো তেমন কোনও অনুষ্ঠান দেখিনি। মানের কথা বলতে গেলে আমি বলব, কাজগুলোতে চেষ্টা ছিল কিন্তু মেধার প্রকাশ ছিল না। তাছাড়া একটা নাটক বানানোর ক্ষেত্রে বাজেটসহ নানা সীমাবদ্ধতা আছে, এই সীমাবদ্ধতার মধ্যে মেধা প্রয়োগ অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব না। আর মেধার মূল্যায়নও হচ্ছে না। যারা নাটকের দর্শক, তাদের পক্ষে এখন লম্বা বিজ্ঞাপন বিরতির কারণে একটা নাটক মনোযোগ দিয়ে দেখা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেধার মূল্যায়ন হবে কী করে !

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ২২১০, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।