ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

নিপুণের নামে জায়েদের আদালত অবমাননার আবেদন তালিকায়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০২২
নিপুণের নামে জায়েদের আদালত অবমাননার আবেদন তালিকায়

ঢাকা: বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে নিপুণ আক্তারের নামে জায়েদ খানের আদালত অবমাননার অভিযোগের আবেদন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় এসেছে।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রোববারের (২১ আগস্ট) জন্য প্রকাশিত কার্যতালিকায় আবেদনটি ১৭ নম্বর ক্রমিকে রাখা হয়েছে।

গত ২৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২২-২৪ মেয়াদের নির্বাচনের প্রাথমিক ফলে সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।  

তবে তার নামে টাকা দিয়ে ভোট কেনাসহ নির্বাচনকে প্রভাবিত করার অভিযোগ করেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নিপুণ আক্তার।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহান জায়েদের প্রার্থিতা বাতিল করে নিপুণকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী ঘোষণা করেন। এরপর থেকেই বিষয়টি ‘বেআইনি’ বলে দাবি করে আসছেন জায়েদ খান।

পরে ৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) প্রাঙ্গণে ইলিয়াস কাঞ্চন ও নিপুণ আক্তারের নেতৃত্বে নতুন কমিটির একাংশ শপথগ্রহণ করে। পরে শিল্পী সমিতির কার্যালয়ে গিয়ে নিজ নিজ পদের চেয়ারে বসেন তারা। তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন শিল্পী সমিতির সদস্যরা। পরদিন ৭ ফেব্রুয়ারি জায়েদ খান রিট করেন। ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিল করে নিপুণ আক্তারকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জয়ী ঘোষণা করার আপিল বোর্ডের দেওয়া সিদ্ধান্ত স্থগিত করে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

আদেশে নিপুণ আক্তারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বোর্ডকে ২ ফেব্রুয়ারি সমাজসেবা অধিদপ্তরের দেওয়া চিঠির কার্যকারিতা এবং জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিল করে নিপুণকে বিজয়ী ঘোষণা করে আপিল বোর্ডের দেওয়া সিদ্ধান্তের কার্যকারিতা স্থগিত করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে সমাজসেবা অধিদপ্তরের চিঠি এবং আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, এ মর্মে এক সপ্তাহের রুল জারি করেছেন আদালত। এছাড়া জায়েদ খানের দায়িত্ব পালনে কোনো প্রকার বাধা না দিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়।

হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে ৮ ফেব্রুয়ারি চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তার আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেন। সেই আবেদনের শুনানি নিয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে ওই পদে দায়িত্ব পালনের ওপর ‘স্থিতাবস্থা’ দেন চেম্বার আদালত।

একইসঙ্গে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আবেদনটি পাঠিয়ে আদেশ দেন চেম্বার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।

১৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের আদেশের ওপর চেম্বার আদালতের স্থগিতাদেশ এবং স্থিতাবস্থা বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে এ বিষয়ে হাইকোর্টে রুল শুনানি করতে বলেছেন সর্বোচ্চ আদালত। সে অনুসারে রুল শুনানি শুরু হয়। রুল শুনানি শেষে ২ মার্চ রায় দেন হাইকোর্ট।

রায়ে জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিল করে নিপুণ আক্তারকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জয়ী ঘোষণা করা শিল্পী সমিতির নির্বাচনের আপিল বোর্ডের দেওয়া সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে জায়েদ খানই এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে থাকবেন বলে জানানো হয়।  

জায়েদের রিটে জারি করা রুল যথাযথ করে বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। পরে শপথ নেন জায়েদ খান।

হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে নিপুণ আক্তারের আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ৬ মার্চ আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান চার সপ্তাহের জন্য স্থগিতাদেশ দেন। এছাড়া নিপুণকে লিভ টু আপিল করতে বলে ৪ এপ্রিল শুনানির জন্য পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়েছেন। পাশাপাশি পদের ওপর স্থিতাবস্থা দেন।

ওইদিন সন্ধ্যায় নিপুণ আক্তার চেয়ারে বসেন বলে গণমাধ্যমে খবর আসে। এরপর সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে বসায় নিপুণ আক্তারের নামে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে জায়েদ খান আবেদন করেন।

১৪ মার্চ এ বিষয়ে শুনানির জন্য উঠলে হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ ও স্থিতাবস্থা নিয়ে চেম্বার আদালতের আদেশ কঠোরভাবে (স্ট্রিকলি) অনুসরণের নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। পাশাপাশি শুনানি ৪ সপ্তাহের জন্য মুলতবি (স্ট্যান্ডওভার) করা হয়।  

জায়েদ খানের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট আহসানুল করীম ও নাহিদ সুলতানা যুথী। নিপুণ আক্তারের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট রোকনউদ্দিন মাহমুদ।  

আদেশের পর জায়েদ খানের আইনজীবী আহসানুল করীম বলেছিলেন, চেম্বার জজ যে আদেশ দিয়েছেন সেটা স্ট্রিকলি ফলো করতে বলেছেন। এর ফলে স্থিতাবস্থার আগে জায়েদ খান অফিসে বসেছিল এবং সে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল, সুতরাং স্থিতাবস্থা অনুযায়ী স্ট্রিকলি ফলো করতে বলা হয়েছে, জায়েদ খান এ চেয়ারে কন্টিনিউ করবেন।

তবে রোকন উদ্দিন মাহমুদ বলেন, নিপুণ চেয়ারে আছেন, থাকবেন।

পরে আবেদনটি তালিকায় এলেও একাধিকবার শুনানি মুলতবি করা হয়।

এ অবস্থায় আগামী রোববারের কার্যতালিকায় আবেদনটি শুনানির জন্য রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০২২
ইএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।