ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ মে ২০২৪, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

প্রমোশনের জন্য শিক্ষক হয়ে শিক্ষক হত্যা জঘন্য: অ্যাটর্নি জেনারেল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০২২
প্রমোশনের জন্য শিক্ষক হয়ে শিক্ষক হত্যা জঘন্য: অ্যাটর্নি জেনারেল

ঢাকা: পদোন্নতির জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদকে তার এক সময়কার ছাত্র ও পরবর্তীতে সহযোগী অধ্যাপক ড.মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন খুন করার ঘটনাকে দেশের ইতিহাসে জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।

তিনি বলেন, আজকের রায়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) আপিল বিভাগ অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় ২ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং ২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখার পর এমন মন্তব্য করেছেন তিনি।

নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে এক প্রতিক্রিয়ায় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এ মামলাটি দেশের ইতিহাসে একটি জঘন্যতম হত্যা মামলা। প্রফেসর তাহের বলেছিলেন নিয়ম অনুসারে মহিউদ্দিনের পদোন্নতি হবে না। একজন শিক্ষককে তার ছাত্র, পরবর্তীতে শিক্ষক হয়েছেন। তিনি শুধুমাত্র তার নিজের একটা লাভের জন্য, অর্থাৎ প্রমোশনের জন্য একজন মানুষকে এভাবে হত্যা করা কোনোভাবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। এটা ঘৃণ্য কাজ।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আজকের বিচারের মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হলো। অন্যদের কাছে বার্তা যাবে যে এ ধরণের কাজ করলে আদালতের কাছ থেকে সর্বোচ্চ শাস্তি পেতে হবে।

রায় কার্যকারের পরবর্তী ধাপ সম্পর্কে এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, এ রায় প্রকাশের পর রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করতে পারবেন আসামিরা। আপিল বিভাগ আবেদনটি খারিজ করলে রাষ্ট্রপতির মার্জনা চেয়ে আবেদন করতে পারবেন তারা। রাষ্ট্রপতি সে আবেদন নাকচ করলে তাদের দণ্ড কার্যকর হবে।   

এর আগে সকালে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ৬ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন ।

রায়ে খালাস চেয়ে আসামিদের আপিল এবং যাবজ্জীবন দণ্ডিত দুই আসামির দণ্ড বৃদ্ধি চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ করা হয়।   

ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল রাখা দুই আসামি হলেন- একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহত অধ্যাপক ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম।  

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ পাওয়া দুইজন হচ্ছেন- নাজমুল আলম ও আব্দুস সালাম।

রায় ঘোষণার সময় আদালতে অধ্যাপক ড. এস তাহেরের স্ত্রী সুলতানা আহমেদ, ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ এবং মেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে ১৬ মার্চ শুনানি শেষে রায়ের জন্য ৫ এপ্রিল দিন রেখেছিলেন আপিল বিভাগ।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। এছাড়া সঙ্গে ছিলেন, সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল অবন্তী নুরুল ও মোহাম্মদ সাইফুল আলম।

আসামি পক্ষে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান।

২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাবির কোয়ার্টারের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় পদোন্নতি সংক্রান্ত বিষয়ের জের ধরে নৃশংসভাবে হত্যার শিকার অধ্যাপক তাহেরের মরদেহ। ৩ ফেব্রুয়ারি নিহত অধ্যাপক তাহেরের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।  

২০০৭ সালের ১৭ মার্চ এ ৬ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছিল পুলিশ।  

এ হত্যা মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত ৪ জনকে ফাঁসির আদেশ ও ২ জনকে বেকসুর খালাস দেন। খালাসপ্রাপ্ত চার্জশিটভুক্ত ২ আসামি হলেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সী।

২০০৮ সালে বিচারিক আদালতের রায়ের পর নিয়ম অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ) হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা আপিল করেন।

শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল রাবির ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় দুই আসামির ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল এবং অন্য দুই আসামির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন হাইকোর্ট।  

এরপর আসামিরা আপিল বিভাগে আপিল করেন। পাশাপাশি যাবজ্জীবন দণ্ডিত দুই আসামির দণ্ড বৃদ্ধি চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।

আরও পড়ুন: রাবির অধ্যাপক তাহের হত্যা: আপিলে ২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল

বাংলাদেশ সময়: ১১২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০২২
ইএস/এনএইচআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।