ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

আইন ও আদালত

১৪ বছর পর মৃত্যুদণ্ড থেকে রেহাই পাওয়া হুমায়ুন এখন মুক্ত

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০২০
১৪ বছর পর মৃত্যুদণ্ড থেকে রেহাই পাওয়া হুমায়ুন এখন মুক্ত

ঢাকা: আট বছর বয়সী এক স্কুলছাত্রী হত্যা মামলায় ২০০৬ সালের এপ্রিল মাস থেকে কনডেম সেলে থাকা লাকসামের হুমায়ুন আপিল বিভাগ থেকে খালাসের পর মুক্তি পেয়েছেন।

কাশিমপুর কারাগার থেকে সোমবার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় মুক্তি পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তার পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী।

আট বছর বয়সী এক স্কুলছাত্রী হত্যা মামলায় ২০০৬ সালের এপ্রিল মাস বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পান কুমিল্লার লাকসাম পৌরসভার বাসিন্দা হুমায়ুন কবির। সেই থেকে তিনি কনডেম সেলে। যদিও তিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন তারও প্রায় দুই বছর আগে ২০০৪ সালের জুলাই মাসে ওই হত্যাকাণ্ডের পর।

পরবর্তীসময়ে হাইকোর্টে জেল আপিলেও তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকে। এরপর জেল আপিল করেন আপিল বিভাগে।

২২ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ হুমায়ুন কবিরের জেল আপিল অ্যালাউ (মঞ্জুর) করেন। অর্থাৎ এই মামলা থেকে খালাস পেলেন হুমায়ুন। ওইদিন তার পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী এবিএম বায়েজিদ বলেন, খালাস হওয়ায় আর কোনো মামলা না থাকলে তার এখন মুক্তি পেতে বাধা নেই।

আইনজীবী এবিএম বায়েজিদ বাংলানিউজকে বলেন, হুমায়ুনের এক আত্মীয় মোবাইল ফোনে জানিয়েছেন তিনি কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

পরে হুমায়নের ছোট বোনের জামাই মনু মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, মাগরিবের সময় তিনি (হুমায়ুন) ফোন করে মুক্তি পাওয়ার কথা বলেছেন। আমরা এখন তাকে আনতে যাচ্ছি।  

নথি থেকে ঘটনার বিবরণী উল্লেখ করে আইনজীবী বায়েজিদ জানান, ২০০৪ সালের ৩০ জুন লাকসামের কনকশ্রী গ্রামের সাকেরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী সকাল সোয়া ১০টার দিকে স্কুলে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। কিন্তু স্কুল ছুটি হওয়ার পরও বাড়ি ফিরে না আসায় স্কুলে খোঁজ করেন তার অভিভাবকরা। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন শিশুটি স্কুলে যায়নি। এরপর আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি ও সম্ভাব্য স্থানে তাকে খুঁজে না পেয়ে ওই দিনই থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন শিশুটির চাচা মো. জসীম উদ্দিন।

ওই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির প্রত্যক্ষদর্শী দুই শিক্ষার্থী স্কুলে যাওয়ার পথে মাথা ব্যথায় শিশুটিকে সাকেরা গ্রামের মাস্টার বাড়ির পাশে কালভার্টের উপর শুয়ে পড়তে দেখেন। এসময় আরও ৫-৬ জন লোক ছিল সেখানে। ওই সময় হুমায়ুন কবির এসে সবাইকে তাড়িয়ে দিতে থাকেন। প্রত্যক্ষদর্শী দুই শিক্ষার্থী যাওয়ার সময় শিশুটিকে বাড়ি যেতে বললে হুমায়ুন কবির শিশুটির মামা পরিচয় দিয়ে বলেন, তিনি শিশুটিকে বাড়ি পৌঁছে দেবেন। কিন্তু হুমায়ুন কবির বাড়ি পৌঁছে দেননি।  

পরে এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থার আবেদন জানিয়ে লাকসাম থানায় এজাহার দায়েরের পর ওই বছরের ২ জুলাই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করে পুলিশ।

ওই বছরের ৪ জুলাই ট্রাকচালক হুমায়ুন কবিরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওইদিনই কালভার্টের পাশে জঙ্গলের ভেতর থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তর করা হয়।

এ মামলায় ২০০৬ সালের ৫ এপ্রিল বিচারিক আদালত হুমায়ুন কবিরকে মৃত্যুদণ্ড দেন। নিয়ম অনুসারে ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে এবং হুমায়ুন জেল আপিল করেন। ২০১২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ডদেশ বহাল রাখেন।

এ রায়ের বিরুদ্ধে জেল আপিল করেন হুমায়ুন। এই আপিলের শুনানি শেষে ২২ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার তার আপিল মঞ্জুর করেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ।

এবিএম বায়েজিদ আরও বলেন, এ মামলায় ক্রেডিবল সাক্ষী ছিল না। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে শিশুটির মরদেহ উদ্ধারের সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেখানে ছিলেন। অথচ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিচারের সময় জেরা করা হয়নি। এছাড়া হুমায়ুন কবির তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন শিশুটি তার খালাতো বোনের মেয়ে। শিশুর বাবা তার কাছে ১৬শ টাকা পেতেন।

 কিন্তু শিশুটির বাবা সাক্ষ্যে বলেছেন তিনি হুমায়ুন কবিরকে চেনেন না। আবার শিশুটির মাকেও এ মামলায় সাক্ষী করা হয়নি। শিশুটির মাকে সাক্ষী করা হলে জানা যেত হুমায়ুন কবির আদৌ পরিচিত কেউ কিনা। ফলে এখানে সন্দেহ রয়ে গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০২০
ইএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।