ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ মে ২০২৪, ০৫ জিলকদ ১৪৪৫

আইন ও আদালত

‘হাজার টাকা ঋণে কৃষকের মাজায় দড়ি, শত কোটি আটকে রাখতে বড় আইনজীবী নিয়োগ’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৯ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২৩
‘হাজার টাকা ঋণে কৃষকের মাজায় দড়ি, শত কোটি আটকে রাখতে বড় আইনজীবী নিয়োগ’

ঢাকা: পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকার ঋণ আদায়ের জন্য কৃষকের মাজায় (কোমর) দড়ি বেঁধে আনা হয়। আর শত শত কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ আটকে রাখতে নিয়োগ করা হয় বড় বড় আইনজীবী।

২৬ বছর আগে নেওয়া নারায়ণগঞ্জের এক প্রয়াত ব্যবসায়ীর ঋণ সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে সোমবার (৩১ জুলাই) এভাবে উষ্মা প্রকাশ করেছেন আপিল বিভাগ।

শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ আবেদন খারিজ করে দেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোকছেদুল ইসলাম। সোনালী ব্যাংকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শামীম খালেদ আহমেদ। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ দেলাওয়ার হোসাইন।

নারায়ণগঞ্জে সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় শাখা থেকে ১৯৯৬-৯৭ সালে ৩২ কোটি টাকা ঋণ নেন ব্যবসায়ী মো. ফজলুর রহমান। বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির বিপরীতে নিজের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান মো. ফজলুর রহমান অ্যান্ড কোম্পানি ও স্ত্রী মাজেদা রহমানের নামে এ ঋণ নেন তিনি।

২০১৭ সালে এই ব্যবসায়ী ও তার স্ত্রী মারা গেলে ঋণ আদায়ে সোনালী ব্যাংক অর্থ ঋণ আদালতে মামলা করে। সম্পত্তির ওয়ারিশান হিসেবে ফজলুর রহমানের তিন ছেলে, এক মেয়ে ও ফজলুর রহমান অ্যান্ড কোম্পানির বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়। ওই বছরই রায় ও ডিক্রি দেন আদালত। রায়ে দায়িকদের (ফজলুর রহমানের চার সন্তান ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান) দুই মাসের মধ্যে ১০২ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ রায়ের পরও ঋণ পরিশোধ না করায় ২০১৯ সালে অর্থঋণ আদালতে জারি মোকদ্দমা করে সোনালী ব্যাংক। এই জারি মোকদ্দমায় সুদে-আসলে ১১৫ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধের নির্দেশনা চাওয়া হয়। কিন্তু দায়িকদের সহায়-সম্পত্তি না থাকায় ২০২০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর দায়িকদের দেওয়ানি কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। অর্থঋণ আদালতের এই আদেশ চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে হাইকোর্টে রিট করেন চার দায়িক অর্থাৎ প্রয়াত ব্যবসায়ী ফজলুর রহমানের চার সন্তান।

আবেদনকারীরা হলেন—ছেলে মো. হাবিবুর রহমান, মো. মাসুদুর রহমান, মো. আতিকুর রহমান ও মেয়ে বেগম ফারজানা রহমান।

এ রিটের প্রাথমিক শুনানির পর ২০২১ সালে হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। আদেশে হাইকোর্ট অর্থঋণ আদালতের আদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। পাশাপাশি রুলে দায়িকদের দেওয়ানি কারাগারে পাঠাতে অর্থঋণ আদালতের রায় কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয়।

এরপর দফায় দফায় স্থগিতাদেশ বাড়ানো হয়। এর মধ্যে গত ২২ মে রুল শুনানির সময় হাইকোর্ট দায়িকদের সহায়-সম্পত্তি তালিকা দাখিলের নির্দেশ দেন।

এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে রিট আবেদনকারীরা। আবেদনে বলা হয়, রিট মামলায় হাইকোর্ট দায়িকদের সহায়-সম্পত্তির তালিকা দাকিলের নির্দেশ দিতে পারেন না।

ওই আবেদন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে। শুনানি শেষে আদালত আবেদন খারিজ করে দেন।

পরে আইনজীবী শামীম খালেদ আহমেদ জানান, আপিল বিভাগ আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছেন। এ আদেশের ফলে হাইকোর্টের আদেশটি বহাল আছে। ফলে আগামী দুই মাসের মধ্যে দায়িকদের সহায়-সম্পত্তির তালিকা বা হিসাব হাইকোর্টে দাখিল করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২৩
ইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।