ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

আইন ও আদালত

দুর্নীতির মামলায় হাইকোর্টে আগাম জামিন চেয়েছেন বিমানের কর্মকর্তারা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৩
দুর্নীতির মামলায় হাইকোর্টে আগাম জামিন চেয়েছেন বিমানের কর্মকর্তারা

ঢাকা: মিশরের ইজিপ্ট এয়ার থেকে দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর মডেলের প্লেন লিজ নেওয়ার প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় বিমানের কর্মকর্তারা হাইকোর্টে আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেছেন।

তাদের পৃথক আবেদন দুটি আবেদন বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চে আগামীকাল বুধবারের (৮ ফেব্রুয়ারি)  কার্যতালিকায় রয়েছে।

মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। তিনি জানান, পৃথক আবেদনে অন্তত ১৬ জন আগাম জামিন চেয়েছেন।

এর আগে সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুদকের উপ-পরিচালক জেসমিন আক্তার বাদী হয়ে সংস্থাটির সমন্বিত কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার আসামিরা হলেন- বিমানের ফ্লাইট অপারেশন্সের পরিচালক ক্যাপ্টেন ইশরাত আহমেদ, ডেপুটি ইঞ্জিনিয়ার মো. শফিকুল আলম সিদ্দিক, মহা-ব্যবস্থাপক মো. আব্দুর রহমান ফুকই, সাবেক মুখ্য প্রকৌশলী শহীদ উদ্দিন মোহাম্মদ হানিফি, সাবেক মুখ্য প্রকৌশলী দেবেশ চৌধুরী, এয়ারওরথিনেস কনসালটেন্ট (সিএএবি) গোলাম সারওয়ার, প্রকৌশলী মো. সাদেকুল ইসলাম ভূঞা, ডিজিএম কামাল উদ্দিন আহমেদ, প্রধান প্রকৌশলী এ আর এম কায়সার জামান, সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার শরীফ রুহুল কুদ্দুস, ক্যাপ্টেন মো. নজরুল ইসলাম শামিম, জিয়া আহমেদ, চিফ পার্সার কাজী মোসাদ্দেক আলী, ফ্লাইট পার্সার মো. শহিদুল্লাহ কায়সার ডিউক, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. আজাদ রহমান, ব্যবস্থাপক মো. আব্দুল কাদির, উপ-প্রধান প্রকৌশলী মো. শাহজাহান, ইঞ্জিনিয়ার অফিসার মো. জাহিদ হোসেন, সহকারী ব্যবস্থাপক মো. ফজলুল হক বসুনিয়া, ব্যবস্থাপক মো. আতাউর রহমান, চিফ পার্সার মোহাম্মদ সাজ্জাদ উল হক, ফ্লাইট পার্সার শাহনাজ বেগম ঝর্ণা, চিফ ইঞ্জিনিয়ার গাজী মাহমুদ ইকবাল।

অভিযোগে বলা হয়- মামলার আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজশ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে আগে নিজেরা লাভবান হয়ে ও পরে অপরকে লাভবান করার অসৎ উদ্দেশ্যে ইজিপ্ট এয়ার থেকে দুটি প্লেন লিজ নিয়ে ও পরে রি-ডেলিভারি পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের ১ হাজার ১৬১ কোটি টাকার ক্ষতি ও অর্থ আত্মসাৎ করে দণ্ডবিধির ১০৯/৪০৯/৪২০ ধারায় এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে পাঁচ বছরের চুক্তিতে মিশরের ইজিপ্ট এয়ার থেকে বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর মডেলের উড়োজাহাজ দুটি লিজ নেয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। প্রথম বছর শেষেই দুটি এয়ারক্রাফটেরই ইঞ্জিন বিকল হয়। ইঞ্জিনগুলো প্রায় ১২-১৫ বছরের পুরানো এবং এর উড্ডয়ন যোগ্যতার মেয়াদকাল কম থাকায় পুরোপুরি বিকল হয়ে যায়। প্লেন সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকেই ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। দেড় বছরের মাথায় নষ্ট হয় সেটিও। এতে পাঁচ বছরে দেশের ক্ষতি হয়েছে ১১০০ কোটি টাকা। যা একাদশ জাতীয় সংসদের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির তদন্তে উঠে এসেছে।

এর আগে ২০২২ সালের ২৮ মে তারিখ অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও বরাবর চিঠি দিয়ে লিজ সংক্রান্ত নথি তলব করে দুদক। ইতোমধ্যে এয়ারক্রাফট লিজ নেওয়ার প্রক্রিয়ায় সংঘটিত অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগটি গভীরভাবে অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দুদক উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন ও সহকারী পরিচালক জেসমিন আক্তারের সমন্বয়ে একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ১ নম্বর সাব-কমিটির দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদনে কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে মিশরিয় প্লেন লিজ নেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুতর অনিয়মের দুদক এই অনুসন্ধান শুরু করে। সংসদীয় কমিটি মনে করে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের এয়ারক্রাফট বহন সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ২০১৪ সালে মিশরিয় দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর এয়ারক্রাফট লিজ নেওয়ার প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে অর্থিকভাবে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে।

দুদক সূত্রে বলা হয়, একাদশ জাতীয় সংসদের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি প্রাথমিক তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়। প্রতিবেদনে উল্লিখিত অনিয়ম ও দুর্নীতি সংক্রান্তে আরও গভীরভাবে তদন্ত করার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠায়।

এর আগে বিমানের কাছে প্লেন লিজ সংক্রান্ত ১৩ ধরণের নথি চায় দুদক। এর মধ্যে মিশরের বিমান লিজ সংক্রান্ত পরিদর্শন প্রতিবেদন, লিজ নেওয়া সংক্রান্ত টিম মেম্বারদের তথ্য, লিজ নিতে বিমানের প্রক্রিয়া ও অর্থনৈতিক কর্তৃপক্ষের তথ্যাদি রয়েছে। এছাড়া বিমানের কাছে দুদক আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত নথি, টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি ও নোটসহ পূর্ণাঙ্গ নথির সত্যায়িত ছায়ালিপি বর্ণিত নিজ গ্রহণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক দরপত্র ও বিজ্ঞপ্তি কোন কোন পত্রিকায় এবং ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে এ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ছায়ালিপি বর্ণিত দরপত্র উন্মুক্তকরণ কমিটির প্রতিবেদন ও দরপত্রে অংশ গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানিসমূহের তালিকা, বর্ণিত দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদন দরপত্র বিজ্ঞপ্তি থেকে শুরু করে বিমান দুটি লিজ নেওয়া ও ফেরত দেওয়া পর্যন্ত যাবতীয় ব্যয়ের বিল-ভাউচার, রেজিস্ট্রার, ব্যাংক হিসাব চাওয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২২৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৩
ইএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।