ঢাকা, বুধবার, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ মে ২০২৪, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

পবিত্র শবে বরাত: মুক্তির রাত মুক্তির নিশ্চয়তা

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, সিনিয়র বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৩ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৭
পবিত্র শবে বরাত: মুক্তির রাত মুক্তির নিশ্চয়তা পবিত্র শবে বরাত

আজ ১৪৩৮ হিজরি ১৪ শাবান। আজকের রাতকে হাদিসের পরিভাষায় নিসফে শাবান বলা হয়। যা আমাদের দেশে শবে বরাত নামে পরিচিত। 

মুসলিম উম্মাহ দীর্ঘ এক বছর এ রাতের আকাঙ্খায় থাকেন। এ রাত মুসলমানরা ইবাদত-বন্দেগি, জিকির-আজকার ও কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে কাটাবেন।

শবে বরাত উপলক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা পৃথক বাণী প্রদান করেছেন।  

শব শব্দ ফার্সি। অর্থ রাত এবং বরাত শব্দটির ফার্সি ও আরবী উভয় ভাষাতেই ব্যবহার রয়েছে। ফার্সি ভাষায় বরাত শব্দটির অর্থ হচ্ছে- ভাগ্য। এদিক থেকে ফার্সি ভাষায় শবে বরাত অর্থ ভাগ্য রজনী বা ভাগ্যের রাত।  

অপরদিকে বরাত শব্দটিকে যদি আরবী শব্দ বারাআতুন থেকে উদ্ভূত ধরা হয়- তবে এর অর্থ দাঁড়ায় নিষ্কৃতি, দায়মুক্তি, অব্যাহতি ইত্যাদি। এর পূর্বে শব শব্দটি যুক্ত করলে ‘শবে বরাত’-এর অর্থ দাঁড়ায় নিষ্কৃতি, দায়মুক্তি ও অব্যাহতি ইত্যাদির রাত।

হাদিসের পরিভাষায় নিসফে শাবান তথা অর্ধেক শাবান মাসের রাতের গুরুত্ব রয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হচ্ছে, হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন অর্ধ শাবানের রাত আসে তখন তোমরা রাত জেগে ইবাদত করো এবং পরের দিনটিতে রোজা রাখো। কেননা প্রত্যেক রাতে সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহতায়ালা পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন, কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করবো। কোনো রিজিক প্রার্থী আছে কি? আমি তাকে রিজিক দান করবো। কোনো বিপদগ্রস্ত আছে কি? আমি তাকে বিপদমুক্ত করবো। আর সুবহে সাদেক পর্যন্ত এ ডাক অব্যাহত থাকে। -ইবনে মাজারাসূলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসে এ দোয়াটি বেশি বেশি করতেন

আরেক হাদিসে ইরশাদ হচ্ছে, হজরত আয়েশার (রা.) ভাষায়; কোনো এক শাবান মাসের অর্ধ রাতে হজরত রাসূলুল্লাহকে (সা.) বিছানায় পাওয়া যাচ্ছিল না। খুঁজে দেখা গেলো তিনি জান্নাতুল বাকিতে কবর জিয়ারত করছেন। -সহিহ মুসলিম

এই হাদিসের ভিত্তিতে এ রাতে নফল আমল হিসেবে অনেকেই আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর কবর জিয়ারত করে থাকেন। ইসলামি স্কলারদের মতে, কবর জিয়ারতে জিয়ারতকারীর উপকার হয়। কবর দেখে সে আখেরাতমুখি হওয়ার সুযোগ পায়।  

পবিত্র রমজান মাসের প্রস্তুতি গ্রহণের মাস হিসেবে শাবান মাস একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাস। কেননা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসে এ দোয়াটি বেশি বেশি করতেন, ‘হে আল্লাহ রজব ও শাবান মাসকে আমাদের জন্য বরকতময় করুন এবং রমজান পর্যন্ত আমাদেরকে পৌঁছার তওফিক দিন। ’ 

রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এ মাসে বেশি বেশি রোজা রাখতেন এবং সাহাবিদের রোজা পালন করতে বলতেন। হজরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত হাদিসে আছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসের চেয়ে বেশি আর কোনো মাসে রোজা রাখতেন না। বলতে গেলে প্রায় পুরো শাবান মাসই রোজা রাখতেন।

রমজান মাসের প্রস্তুতি হিসেবে শাবান মাসের অন্যতম নফল ইবাদত রোজা পালন হিসেবে নিসফে শাবান তথা বরাতের আগে মিলিয়ে কমপক্ষে দু’টো রোজা পালন করা উচিৎ।  

তাছাড়া প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে ‘আইয়্যামে বিযের’ তিনটি নফল রোজা পালন করার ওপর হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) গুরুত্বারোপ করেছেন।  

হজরত আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন তুমি মাসে তিনটি রোজা রাখতে চাও, তখন ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখো। -তিরমিজি
 
নিসফে শাবানের রাতে নফল নামাজ আদায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। কিন্তু এ সমস্ত আমলের ক্ষেত্রে আবেগতাড়িত হয়ে কোনোরকম বাড়াবাড়ি করা যাবে না এবং নফল ইবাদতকে ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতে মুয়াক্কাদার ওপর গুরুত্ব দেওয়া যাবে না। অথবা নফল আদায় করতে গিয়ে কোনো ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতে মুয়াক্কাদা আদায়ে যেন বিঘ্নিত না হয় সেদিকে গভীরভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। এ রাতে নফল নামাজ মসজিদে ও নিজ ঘরেও আদায় করা যেতে পারে।

শবে বরাত পালনে আরেকটি প্রথা প্রচলিত আছে, তা হচ্ছে- এ রাতে আতশবাজি ও হালুয়া রুটি বিতরণ। ইসলামি শরিয়ত কখনও আতশবাজির বৈধতা দেয় না। প্রশাসনও এটা নিষেধ করেছেন।  

আর হালুয়া-রুটি বিতরণের মাধ্যমে মেহমানদারি বা অন্নহীনদের অন্নদান হলেও নির্দিষ্ট করে এ রাতে হালুয়া-রুটির ছড়াছড়ি করার অনুমতি দেয় না বরং সারা বছরই হালুয়া-রুটিসহ অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী বণ্টন করা যায়।

বরাতের রাতে লক্ষ্য করা যায়, কিছু লোক টুপি-পাঞ্জাবি পরে সারা রাত এ মসজিদ হতে সে মসজিদ, এ মাজার হতে সে মাজার অথবা রাস্তায় রাস্তায় দৌড়াদৌড়ি করেন- এ সব আচরণ-কর্মকাণ্ড সঙ্গত নয়। এসব থেকে প্রত্যেক মুসলমানেরই বিরত থাকা উচিৎ। আল্লাহ আমাদের তওফিক দান করুন। আমিন।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ০০২৩ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।