ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ইসলাম

মুফতি আবদুর রহমানের জানাজায় অগণিত মানুষ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৫
মুফতি আবদুর রহমানের জানাজায় অগণিত মানুষ ছবি: জি এম মুজিবুর / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ আলেম ফকিহুল মিল্লাত মুফতি আবদুর রহমানের নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। এতে যোগ দেন অগণিত মানুষ।


 
মুফতি আবদুর রহমানের জানাজা ও দাফনে যোগ দিতে বুধবার (১১ নভেম্বর) সকাল থেকেই দলে দলে মানুষ এসে জড়ো হতে থাকেন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়। এর আগে তার মরদেহ ফ্রিজার গাড়িতে করে এনে বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টার-৫ এর সামনে রাখা হয়।
 
পরে সকাল ১০টা ১০ মিনিটে শুরু হয় তার নামাজে জানাজা। ১০টা ১৫ মিনিটে তা শেষ হয়। জানাজা নামাজ পরিচালনা করেন মুফতি আরশাদ রাহমানি। তিনি মুফতি আবদুর রহমানের বড় ছেলে।

জানাজা শেষে মুফতি আবদুর রহমানকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার (এন ব্লক) বসুন্ধরা নতুন কবরস্থানে দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
 
জানাজায় বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক, বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফিয়াত সোবহান, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাফওয়ান সোবহান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
 
জানাজায় বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমি আজ এতিম হয়ে গেলাম। তিনি আমাকে অত্যধিক ভালোবাসতেন। সব সময় আমাকে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে ও আল্লাহর পথে চলতে বলতেন তিনি।
 
বসুন্ধরা চেয়ারম্যান আরও বলেন, তার (মুফতি আবদুর রহমান) শেষ ইচ্ছে ছিল বসুন্ধরায় যেন তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করতে পারেন এবং তাকে যেন এখানেই সমাহিত করা হয়। সেজন্য বসুন্ধরায় আসতে সব সময় ছটফট করতেন তিনি। তার পরামর্শেই বসুন্ধরায় একটি কবরস্থানের ব্যবস্থা করা হয়। সেখানেই তাকে সমাহিত করা হচ্ছে।

তিনি তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় সকলের কাছে দোয়া কামনা করেন। এসময় উপস্থিত জনতার মধ্যে কান্নার রোল উঠে।
 
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন মেয়র আনিসুল হক বলেন, আমাকে খুবই ভালোবাসতেন তিনি। আমি তার কাছে গেলে আলাদা প্রশান্তি অনুভব করতাম। এই অগণিত মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে, তিনি কতো ভালো মানুষ ছিলেন।
 
এর আগে দেশের বিশিষ্ট আলেমরা বক্তব্য রাখেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, মিরপুর আরজাবাদ মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মোস্তফা আজাদ, যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহমুদুল হাসান, সাবেক এমপি মুফতি ওয়াক্কাস, ইসলামী ঐক্যজোট চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী, গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার মহাপরিচালক মুফতি রুহুল আমিন, মাওলানা আবুল হাসনাত আমিনী, মাওলানা জুনাইদ আল হাবিব, মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ, মাওলানা শাহ আজিজুর রহমান প্রমুখ।
 
মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারে ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) মুফতি আবদুর রহমান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৯১ বছর।

মুফতি আবদুর রহমান ১৯২৫ সালে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ইমামনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম চাঁন মিয়া।

তিনি নাজিরহাট ও হাটহাজারি মাদ্রাসায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক লেখাপড়া সমাপ্ত করেন। উচ্চমাধ্যামিক শিক্ষা সমাপ্তির পর তিনি দারুল উলুম দেওবন্দে গমন করেন। ১৯৫০ সালে সেখানে কওমি মাদরাসা পাঠ্যক্রমের সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিস কৃতিত্বের সঙ্গে পাশ করেন। দারুল উলুম দেওবন্দের ইফতা বিভাগের তিনি প্রথম ডিগ্রি লাভকারী মুফতি।
anaja1
মৃত্যুর আগে তিনি দেশের প্রায় ১৮টি উত্তরাঞ্চলীয় জেলার সহস্রাধিক দ্বীনি প্রতিষ্ঠান নিয়ে গঠিত তানযীমুল মাদারিস আদ্বীনিয়্যা বাংলাদেশ (উত্তরবঙ্গ) এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তিনি একাধারে জামিয়ার প্রধান মুফতি, সহকারী মহাপরিচালক ও শিক্ষা বিভাগীয় পরিচালকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দাওরায়ে হাদিসে সর্বোচ্চ কিতাব বোখারি শরিফের ১ম খণ্ডের পাঠদান করেন।

আল জামিয়া পটিয়ার সহকারী পরিচালক থাকাকালে তিনি দেশব্যাপি একশ’ সদস্য বিশিষ্ট ইফতা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। এ সময় তিনি ইসলামি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকিং-এর ক্ষেত্রেও অনন্য অবদান রাখেন। তিনি সুদভিত্তিক অর্থনীতির বিরুদ্ধে অতুলনীয় ভূমিকা রাখেন।

ফকিহুল মিল্লাত ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ নামে তাঁর একটি সেবামূলক সংস্থা রয়েছে। এ সংস্থার মাধ্যমে তিনি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অসংখ্য মসজিদ, মাদরাসা, মক্তব, হেফজখানা প্রতিষ্ঠা করেন।

তাঁর অবস্থান ছিলো জঙ্গিবাদ বিরোধী। তিনি সবসময়ই বলতেন, ইসলামে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৫/আপডেট: ১৩৪১ ঘণ্টা
আরইউ/মুফতি এনায়েত/আরএইচ

** মুফতি আবদুর রহমানের জানাযা সকাল ১০টায় বসুন্ধরা কেন্দ্রীয় মসজিদে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।