ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ আশ্বিন ১৪৩২, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০ রবিউস সানি ১৪৪৭

ইসলাম

রাতের নয়নাভিরাম মসজিদে কুবা

বেলাল হোসেন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:০১, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৫
রাতের নয়নাভিরাম মসজিদে কুবা রাতের নয়নাভিরাম মসজিদে কুবা

সৌদি আরব (রিয়াদ) থেকে: ঘড়ির কাটা তখন রাত সাড়ে ১২টা ছুঁই ছুঁই করছে। চারদিকে তীব্র আলোর ঝলকানি।

যেন হিরকখণ্ডের নয়নাভিরাম এক রাজ্য! যা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করানোটা বড়ই কঠিন। চার চারটি সুউচ্চ মিনার। যেখানে লাগানো উচ্চমানের হাজারো বাতি। রাতের আলোয় ছড়াচ্ছে উচ্চ আলোকরশ্মি।
 
ছাদের ওপরের দিকে শোভা পাচ্ছে বড় একটি গম্বুজ। রয়েছে আরও পাঁচটি আলাদা গম্বুজ। যেগুলো আকারে খানিকটা ছোট। এছাড়া ছাদের ভিন্ন অংশে গম্বুজের অবয়ব রয়েছে ৫৬টি। ভেতরের চিত্র আরও নয়নাভিরাম। যেন সোনায় মোড়ানো ফ্রেমের সঙ্গে ঝুলছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অসংখ্য বাতি।
 
সাজানো গোছানো ভেতরটা একেবারে পরিপাটি। কোথাও যেন কোনো খাদ নেই। বিছানো রয়েছে নামিদামি চোখ জোড়ানো কার্পেট। দেয়ালে দেয়ালে শোভা পাচ্ছে আকষর্ণীয় পাথর। রয়েছে নামিদামি কাঠের আলমারি। পবিত্র কোরআনসহ বইপুস্তক রাখা সেলফ।  

ভেতরে- বাইরে লেখা পবিত্র কোরআন ও হাদিসের অমিয় সব বাণী। যা ভ্রমণকারীদের হৃদয়-মন শীতল করে দেয়। মসজিদে কুবা
 
এমনটি মসজিদে কুবার দৃশ্য। সৌদি সরকারের ভিশন-২০৩০ এর বিশাল কার্যক্রমের নমুনা এটি। ইসলামের ইতিহাস মতে আল্লাহর রাসুল (সা.) নবুওয়াত প্রাপ্তির পর নির্মিত প্রথম মসজিদ এটি। মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার সময় মহানবী (সা.) মদিনার অদূরে কুবায় মসজিদে কুবা নির্মাণ করেন।  
 
মক্কা শরিফ থেকে ৩২০ কিলোমিটার উত্তরে মসজিদে কুবার অবস্থান। আর মসজিদে নববী থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে মদিনার দক্ষিণ-পশ্চিমে কোণে অবস্থান এ মসজিদটির। শ্বেতবর্ণের অনন্য  স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত মসজিদে কুবা মানুষকে ভীষণভাবে বিমোহিত করে।  
 
এ মসজিদটি দেখতে রাতে দিনে প্রতিদিন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে হাজারো মানুষ আসেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন বিপুল সংখ্যক নারী ও শিশু। এসেই চলে যান মসজিদে। এরপর নামাজ আদায় করেন। নিজ ও দেশ জাতির মঙ্গল কামনা করে দোয়া করেন। নামাজ আদায়ে নারী-পুরুষের জন্য  আলাদা জায়গা রয়েছে।
 
পুরো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এ মসজিদ ভবনের মাঝে রয়েছে বেশ বড় খালি জায়গা। সেখানেও নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে জমজম পানির ব্যবস্থা। পাশাপাশি বিশাল এলাকাজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে আধুনিকমানের আবাসিক ব্যবস্থা। ভ্রমণকারিদের বহনের জন্য বিশেষ ধরনের ছোট গাড়ির ব্যবস্থাও রয়েছে। মসজিদে কুবা
 
সাজানো গোছানো পরিপাটি এ মসজিদের উত্তরের অংশটি নারীদের জন্য সংরক্ষিত। ইমাম ও মুয়াজ্জিনের জন্য ১১২ বর্গমিটার জুড়ে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে উন্নতমানের একটি লাইব্রেরি। সাড়ে ৪০০ বর্গমিটার এলাকাজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে বাণিজ্যিক স্থাপনা। এছাড়া নিরাপত্তা কর্মীদের জন্য রয়েছে থাকার ব্যবস্থা।   
 
মসজিদে কুবার বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে অসংখ্য খেজুরগাছ। বিভিন্ন স্পট ও রাস্তার দু’ধার দিয়ে সারিসারি  খেজুর গাছা ছাড়াও রয়েছে নানা ধরনের গাছ। গড়ে তোলা হয়েছে আকর্ষণীয় লাইটিং ব্যবস্থা। কোনো কোনো স্পট রয়েছে পাথরে ঘেরা।
 
আবার কিছু স্থানে সবুজের আবহ ফুটিয়ে তুলতে লাগানো হয়েছে বিশেষ ধরনের ঘাস। রয়েছে বিশেষ ধরনের বড় বড় ছাতা। যেগুলো দিনের আলোয় খুলে দেওয়া হয়। যেন ভ্রমণকারীরা ছায়ায় বিশ্রাম নিতে পারেন। এছাড়া পুরো এলাকা উন্নতমানের পাথরে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
 
প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ বর্গমিটার এ মসজিদের মূল প্রবেশ পথ সাতটি। রয়েছে ১২টির মতো সম্পূরক প্রবেশ পথ। আকর্ষণীয় কারুকাজ খচিত দরজাগুলো দেখতে যেন সোনায় মোড়ানো। এর সামান্য পূর্বে খানিকটা নিচের দিকে রয়েছে নারী-পুরুষের জন্য নির্মিত আলাদা আলাদা আধুনিক মানের অজুখানা।
 
রয়েছে নারী-পুরুষের আলাদা টয়লেট। যেগুলো ২৪ ঘণ্টা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে নিয়োজিত রয়েছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। এছাড়া পুরো এলাকায় রয়েছেন অসংখ্য পরিচ্ছন্নতাকর্মী। যারা দিনরাত পুরো এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখেন।

মসজিদের বাইরে এ মসজিদ সম্পর্কে বর্ণিত পবিত্র কোরআনের আয়াত ও হাদিসের বাণীগুলো সুন্দরভাবে লিখে রাখা হয়েছে। মসজিদে কুবা
 
মদিনায় হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ১০ বছর কাটিয়েছেন। এ সময়ে হযরত রাসুলুল্লাহ (সা.) পায়ে হেঁটে অথবা উট কিংবা ঘোড়ায় আরোহন করে কুবা মসজিদে যেতেন। এরপর তিনি সেখানে দু’রাকাত নামাজ আদায় করতেন।
 
অন্য হাদিসে আছে, প্রতি শনিবারে রাসূলুল্লাহ (সা.) কুবায় আগমন করতেন। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম
 
আরেক হাদিসে বর্ণিত আছে, মসজিদে কুবায় নামাজ আদায় করার সওয়াব একটি ওমরার সমপরিমাণ। -তিরমিজি
 
হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি নিজের ঘরে ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করে (সুন্নত মোতাবেক অজু করে) মসজিদে কুবায় আগমন করে নামাজ আদায় করে তাকে এক ওমরার সমপরিমাণ সওয়াব দান করা হবে। -ইবনে মাজাহ
 
হাদিসের এমন বর্ণনার পরিপ্রেক্ষিতে নবীর যুগ থেকেই প্রতি শনিবার মসজিদে কুবায় নামাজ আদায়ের জন্য গমন করা মদিনাবাসীর অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। এখনও তাদের এই আমল অব্যাহত রয়েছে। হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অনুসরণে কুবা মসজিদে আসা ও দু’রাকাত নামাজ আদায় করা মুস্তাহাব। হজপালন শেষে মদিনায় অবস্থানরত হাজিরাও মসজিদে কুবায় যেয়ে নামাজ আদায় করেন।
 
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।