ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

ইসলামের দৃষ্টিতে নির্বাচন ও ভোটারের দায়িত্ব

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৫
ইসলামের দৃষ্টিতে নির্বাচন ও ভোটারের দায়িত্ব

নির্বাচন একটি প্রাচীন পদ্ধতি। নির্বাচন একটি ইসলামিক বিধানও বটে।

তাই তো দেখা যায়, আল্লাহর নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ইন্তেকালের পর নবী (সা.)-এর দাফন-কাফনের আগে ইসলামি বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধান এবং খলিফা নির্বাচনকে প্রাধান্য দিয়ে হজরত আবু বকর (রা.) কে সাহাবাদের মতামতের ভিত্তিতে খলিফা নির্বাচিত করা হয়।

নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য ইসলাম সর্বদা ব্যক্তির সততা, যোগ্যতা, খোদাভীতি, ঈমান, জ্ঞান, আমল, চারিত্রিক গুণাবলী ও বংশকে প্রাধান্য দিয়েছে। তাই ইসলামের দৃষ্টিতে নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হওয়া যেমন প্রয়োজন, প্রার্থী বা নির্বাচিত ব্যক্তিও তেমন সৎ, যোগ্য, জ্ঞানী, চরিত্রবান, খোদাভীরু, আমানতদার, ন্যায়পরায়ণ, দেশপ্রেমিক, মানবদরদী ও দায়িত্বানুভূতি সম্পন্ন হওয়া তার চেয়ে আরও বেশি প্রয়োজন।

ইসলাম একটি সামাজিক ও মানবিক ধর্ম। তাই ইসলাম মনে করে, পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াটাই একটি ইবাদত। এর মাধ্যমে দেশ, ধর্ম ও মানবতার সেবা করার বিরাট সুযোগ লাভ করা যায়। যারা প্রার্থী হবে তারা যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রত্যাশায় মানবতার সেবার নিয়তে প্রার্থী হন এবং সেভাবে আমানতদারীর সঙ্গে নিরপেক্ষভাবে আল্লাহকে ভয় করে দায়িত্ব পালন করেন, তাহলে তারা শুধু দুনিয়ায় সম্মানিত হবেন না আল্লাহর নিকটও বড় মর্যাদার অধিকারী হবেন।

এক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যারা মানবতার সেবার জন্য দৌড়ঝাঁপ করবে তাদের মর্যাদা হবে সে লোকের মতো যে সারারাত ইবাদত করে এবং সারাদিন রোজা রাখে। ’

দেখুন, ইসলাম সমাজকর্মীদের কত বড় মর্যাদা দিয়েছে। আরেক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক কাজের সফলতা, ব্যর্থতা, সুফল ও কুফল ব্যক্তির নিয়তের ওপর নির্ভর করে।

সুতরাং প্রার্থী যদি নির্বাচিত হয়ে দেশ, ধর্ম ও মানুষের জন্য কল্যাণকর এবং সওয়াবের কাজ করেন শুধু তখনই তিনি সে সম্মান ও মর্যাদা পাবেন। যারা ভোট দিয়ে তাকে নির্বাচিত করবেন তারাও অনুরূপ সওয়াব ও মর্যাদার অধিকারী হবেন।

কারণ, ভোটারদের কারণেই তিনি এমন পুণ্যময় কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যারা ভালো বা মন্দ কাজ করে বা করার ক্ষমতা ও সুযোগ সৃষ্টি করে দেয় তারা ওই কর্ম সম্পাদনকারীর সমান সওয়াব বা গুনাহ অর্জন করবে। ’

নির্বাচিত ব্যক্তি যদি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়ে, মানবতাবিরোধী ইসলামবিরোধী পক্ষপাত ও নির্যাতনমূলক কাজ করেন তাহলে তাকে শুধু নয় যারা তাকে নির্বাচিত করবেন এবং ভোট দেবেন সবাইকে এসব অপকর্মের কুফল ভোগ করতে হবে এবং কঠিন আজাবের সম্মুখিন হতে হবে। যেহেতু তাদের ভোট পেয়ে নির্বাচিত হওয়ার ফলেই এতসব অপকর্ম করার সুযোগ ওই মন্দ লোকটি পেয়েছে।

অনেক ইসলামি স্কলার বলেন, সামাজিক দায়িত্ব পালন করা মসজিদের ইমামতির চেয়েও মূল্যবান ও মর্যাদাপূর্ণ— যদি তা সঠিকভাবে ইসলামের বিধান মেনে পালন করা হয়। কেউ যদি ক্ষমতা পেয়ে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে, দুর্নীতি করে, পক্ষপাতিত্ব করে জনগণের সম্পদ আত্মসাৎ করে, ইসলামবিরোধী কাজ করে, সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানকে পাপের বাজারে পরিণত করে, সে ব্যক্তি বা তার দলই শুধু আল্লাহর গজবে নিপতিত হবে না তারা সমাজ ও রাষ্ট্রকে অশান্ত করে তুলবে। এ কারণেই ইসলাম মসজিদের ইমামতিকে ছোট ইমামতি এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের ইমামতিকে বড় ইমামতি বলে ঘোষণা করেছে।

মনে রাখবেন, সমাজ ও রাষ্ট্রের নেতৃত্ব ইসলামের দৃষ্টিতে এত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণেই রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবারা রাসূল (সা.)-এর দাফন-কাফনের চেয়ে রাষ্ট্রের নেতা নির্বাচনকে প্রাধান্য দিয়ে হজরত আবু বকর (রা.) কে খলিফা নির্বাচিত করেছিলেন।

ইসলাম মনে করে, যারা ভোট দিবেন; তারা সমাজে ভালো কাজ করার, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পক্ষে রায় দিবেন। আসন্ন নির্বাচনে সম্মানিত ভোটাররা বিষয়গুলো মাথায় রেখে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৫
এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।