ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

শেষ সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট গর্বাচেভ আর নেই

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২২
শেষ সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট গর্বাচেভ আর নেই

সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভ আর নেই। রাশিয়ার সংবাদ সংস্থাগুলো জানিয়েছে, সাবেক এই  সোভিয়েত নেতা স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) ৯১ বছর বয়সে মারা গেছেন।

রুশ বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স সাবেক মিখাইল গর্বাচেভের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন মিখাইল গর্বাচেভকে বিশ্বস্ত ও সম্মানিত নেতা হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করেন। বলেন, সাবেক এই নেতা মুক্ত ইউরোপের দরজা খুলে দিয়েছিলেন।

তাস, আরআইএ নভোস্টি এবং ইন্টারফ্যাক্স রাশিয়ার সেন্ট্রাল ক্লিনিকাল হাসপাতালের উদ্ধৃতি দিয়ে এ খবর জানিয়েছে। এর আগে গর্বাচেভের অফিস থেকে জানানো হয়েছিল তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

রাশিয়ার সেন্ট্রাল ক্লিনিকাল হাসপাতাল এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘গুরুতর ও দীর্ঘকালীন অসুখে ভুগে মিখাইল গর্বাচেভ আজ মারা গেলেন। ’

১৯৮৫ সালে রুশ কমিউনিস্ট পার্টির সর্বোচ্চ নেতা ও রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন মিখাইল গর্বাচেভ। এরপর তিনি পেরেস্ত্রোইকা ও গ্লাসনস্ত নামে উদারীকরণের দুই কর্মসূচি গ্রহণ করেন। সমালোচকরা তার সেই কর্মসূচিকে রাশিয়ায় সমাজতন্ত্রের পতন ত্বরান্বিত করেছিল বলে দায়ী করে থাকেন।

এক সময়ের কমিউনিস্ট নেতা গর্বাচেভের হাত দিয়েই সোভিয়েত রাশিয়ায় সমাজতন্ত্রের পতন হয়েছিল। ওই পতনের মধ্য দিয়ে বিশ্বে তখন স্নায়ুযুদ্ধের অবসান ঘটে। তাই অনেকের কাছে তিনি নন্দিত, আবার অনেকের কাছে তিনি নিন্দিতও।

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়, পরাশক্তি থেকে রাশিয়াকে দুর্দশাগ্রস্ত দেশের কাতারে নিয়ে আসার জন্য অনেক রুশ এখনও গর্বাচেভকে ক্ষমা করতে পারেন না। কমিউনিস্ট নেতা ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের প্রতিষ্ঠিত সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৯১ সালে ভেঙে ১৫টি স্বাধীন রাষ্ট্র জন্ম নেয়। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় দেশ হলো বর্তমান রাশিয়া।

সোভিয়েত পতনের পর নিজেও ক্ষমতা হারান গর্বাচেভ। এরপর পশ্চিমা দেশগুলোতে বক্তৃতা দিয়েই সময় পার করতেন তিনি। ১৯৯৯ সালে স্ত্রী রাইসা গর্বাচেভের মৃত্যুতে অনেকটাই ভেঙে পড়েন।

১৯৯৬ সালে পরিবর্তিত রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও অংশ নিয়েছিলেন গর্বাচেভ, তবে ভোট পেয়েছিলেন মাত্র ৫ শতাংশ।

১৯৮৪ সালে মিখাইল আন্দ্রোপভের মৃত্যু হলে গর্বাচেভকেই সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক বা সর্বপ্রধানের পদে ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু সেবার সেই পদে নির্বাচিত হন কনস্তানতিন চের্নেনকো। ১৯৮৫ সালে তিনি মারা গেলে ওইসোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক হন গর্বাচেভ।

সে সময় ৫৪ বছরের গর্বাচেভ ছিলেন পার্টির প্রতাপশালী পলিটব্যুরোর সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। আর তিনিই রুশ কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম সাধারণ সম্পাদক, যার জন্ম হয়েছিল রুশ বিপ্লবের পর।

গর্বাচেভ ছিলেন বেশ ফ্যাশনদুরস্ত। এ কারণে তাকে পূর্বসূরিদের সঙ্গে মেলানো যেত না। আর তার স্ত্রী রাইসার চালচলন ছিল অনেকটাই যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্টলেডিদের মতো।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৮৯ সালে চেকস্লোভাকিয়া ও হাঙ্গেরিতে কমিউনিস্টবিরোধী বিক্ষোভ দমনে সোভিয়েত সেনা না পাঠানো এবং যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগ্যানের সঙ্গে নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি করে স্নায়ুযুদ্ধ অবসানের পথ তৈরির জন্য তার প্রশংসা করেন পশ্চিমারা।

এক সময় রাশিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কঠোর সমালোচক ছিলেন গর্বাচেভ। তবে ২০১৪ সালে পুতিনের নির্দেশে যখন ক্রিমিয়া দখল করে রাশিয়া, তখন তার পক্ষেই ছিলেন তিনি। এরপর গত বছর গর্বাচভের ৯০তম জন্মদিনে তার প্রশংসা করেন পুতিন।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২২
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।