ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

৫০ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ঋণের বোঝা বইতে হবে ব্রিটেনকে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৯, ২০১৯
৫০ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ঋণের বোঝা বইতে হবে ব্রিটেনকে ব্রেক্সিট

ঢাকা: কোনো চুক্তি ছাড়াই ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বিচ্ছেদে যাওয়া বা চুক্তিহীন ব্রেক্সিটে গেলে ব্রিটেন যে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়বে, এটা নতুন নয়; কিন্তু কতটুকু পড়বে? এমন চিন্তা এতদিন মাথায় ঘোরপাক খেলেও এবার অনেকটা স্পষ্ট হয়ে গেছে। কেননা, ইইউ থেকে বেরিয়ে গেলে ব্রিটেনের কাঁধে প্রায় অর্ধ শতাব্দীর ইতিহাসে সর্বোচ্চ ঋণ ভর করবে বলে নতুন গবেষণা বলছে।

সম্প্রতি ব্রিটেনের গবেষণাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান দ্য ইনস্টিটিউট ফর ফিসক্যাল স্টাডিজ (আইএফএস) একটি প্রতিবেদনে বলেছে, পূর্ব নির্ধারিত আসছে ৩১ অক্টোবর চুক্তিহীন ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন হলে যুক্তরাষ্ট্রের দেনা বা ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে তাদের ৫০ বছরের ইতিহাসের সর্বোচ্চ। অর্থাৎ ১৯৬০ সালের পর নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটে পড়বে ব্রিটেন।

প্রতিষ্ঠানটির বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে, চুক্তিহীন ব্রেক্সিট হলে ব্রিটেনের দেনার পরিমাণ বেড়ে যাবে ১০০ বিলিয়ন পাউন্ডের মতো। সবমিলে মোট ঋণের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াবে দেশের জাতীয় আয়ের ৯০ শতাংশের কাছে। অর্থাৎ জাতীয় আয়ের প্রায় সমান হয়ে যাবে ঋণের পরিমাণ।

আইএফএসের পূর্বাভাস- সামনের অর্থবছরে দেশটির দেনার পরিমাণ বাড়বে ৫০ বিলিয়ন পাউন্ড। যা জাতীয় আয়ের দুই দশমিক তিন শতাংশ। যদিও এখনকার নিয়মানুযায়ী, জাতীয় আয়ের দুই শতাংশ পরিমাণ অর্থ ধার করতে পারে ব্রিটিশ সরকার।

আইএফএসের পরিচালক পল জনসন বলেন, যথাযথ কোনো আর্থিক পরিকল্পনা ছাড়াই অকূল সাগরে নামতে যাচ্ছে দেশটির সরকার। ব্রেক্সিট ইস্যুতে বিশাল অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকির মুখে দাঁড়িয়ে আছে দেশটির আর্থিক ও সরকারি ব্যয়। এছাড়া চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের কথা বিবেচনায় না এনেই সরকারি ব্যয়ের নিজস্ব নিয়মনীতি ভাঙতে যাচ্ছে কনজারভেটিভ সরকার।

পরবর্তী বাজেটে করের পরিমাণ স্থায়ীভাবে কমানো ঠিক হবে না। তবে চুক্তিহীন ব্রেক্সিট হলে, নির্দিষ্ট কিছুখাতে করের পরিমাণ অস্থায়ীভাবে কমানো যেতে পারে এবং প্রবৃদ্ধি সহায়কখাতে সরকারি ব্যয় বাড়ানো যেতে পারে।

পল জনসনের মতে, ‘শ্রম-২০১৭ ইশতেহার’ এর দৈনিক ব্যয়ের পরিমাণ অনুযায়ী ব্যয় করার পরিকল্পনা করা হলে, করদাতাদের ব্যয়ের পরিমাণ এমনভাবে বাড়তে পারে, যা কনজারভেটিভ পার্টির প্রস্তাবিত পরিমাণের চেয়ে বেশি।

ব্রিটিশ রাজস্ব বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত ব্যয় বৈঠক অনুযায়ী, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পুলিশিখাতে ব্যয়ের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়ায় সমর্থন আছে জনগণের। বর্তমান অর্থবছরের পরিকল্পনাতেও এ বিষয়গুলোতেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, মিতব্যয়ের বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে রাজস্বনীতির কাঠামো নতুন করে পর্যালোচনা করা হবে। প্রবৃদ্ধি সহায়ক টেকসই সরকারি ব্যয়ের নিয়মনীতি তৈরি করা হবে।

বছরের বাজেট ঘাটতি অর্থনীতির আকারের দ্বিগুণ হলে, দেশটির সরকারি দেনার পরিমাণ হবে গত যে কোনো বছরের তুলনায় বেশি।

আইএফএসের নিজস্ব গবেষণায় দেখা গেছে, চুক্তিহীন ব্রেক্সিট হলে দেশটির সরকারি ব্যয় তলানিতে চলে যাবে। কেবল ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার সঙ্গেই এর তুলনা করা চলবে।

স্বাভাবিক অর্থবছরের সঙ্গে তুলনা করলে, বার্ষিক ঘাটতির পরিমাণ বাড়বে ১০০ বিলিয়ন পাউন্ড। এতে করে, জাতীয় দেনার পরিমাণ দাঁড়াবে বিগত ৫০ বছরের ইতিহাস ভেঙে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ৯০ শতাংশ।

আরও পড়ুন>> চুক্তিহীন ব্রেক্সিটে খাদ্যাভাবে ভুগবে ব্রিটেনের মানুষ!

প্রতিষ্ঠানটি বলে, সরকার নিজেই নিজেদের রাজস্ব ব্যয়ের নিয়ম মানছে না। রাজকোষ তার সীমায় পৌঁছে গেলেও সরকারি খাতে ব্যয় বাড়াতে ঋণ করে চলেছে তারা।

আইএফএস পরামর্শ দিয়ে এও বলছে, চুক্তিহীন ব্রেক্সিট হলে প্রবৃদ্ধির হার ঠিক রাখতে হলে সাময়িকভাবে সরকারি ব্যয় কমাতে হবে ব্রিটেনের। তবে সরকারিখাতে যথেষ্ট কম ব্যয়ের পরও চুক্তিহীন ব্রেক্সিট হওয়ার পরের দুই বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি সূচক ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

সরকারি ব্যয় বাড়ালে সংকুচিত অর্থনীতি ও অত্যধিক দেনার ভার- দুটোই বহন করতে হবে বরিস জনসন সরকারকে। এতে করে ২০২০ সালে চরম অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়তে পারে দেশটি।

পল জনসন বলেন, এ মুহূর্তে সরকারি ব্যয়ের পরিকল্পনাগুলো অস্থায়ী হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া অর্থনীতি সংকুচিত হলে সরকারি খরচ কমানোই যুক্তিসঙ্গত।

যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম অর্থনীতিবিদ ক্রিস্টিয়ান স্কুলজ এই প্রতিবেদনে বলেন, ২০১৬ সালে ব্রেক্সিটের গণভোটের পর দেশটির অর্থনীতি ইতোমধ্যে প্রায় ৬০ বিলিয়ন পাউন্ড পরিমাণ সংকুচিত হয়ে গেছে। দেশের ব্যবসায় বিনিয়োগ কমেছে স্বাভাবিকের চেয়ে ২০ শতাংশ। ফলে উৎপাদনশীলতা ও মজুরি বৃদ্ধির হার কমেছে।

তবে তিনি এও বলেন, ব্রেক্সিট পিছিয়ে গেলে আরও বেশি অনিশ্চয়তায় পড়ে যাবে দেশটি। ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিনিয়োগ। প্রবৃদ্ধির হার কমে দাঁড়াবে বছরে এক শতাংশ।

এ বিষয়টি বিবেচনা করলে, চুক্তিসহ ব্রেক্সিট করাটা ভালো; তাহলে প্রবৃদ্ধির হার থাকবে এক দশমিক পাঁচ শতাংশ। কিন্তু ব্রেক্সিট বাতিল হলে অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। যদিও এর চেয়েও খারাপ হতে পারে চুক্তিহীন ব্রেক্সিটে গেলে।

তিনি আরও বলেন, যথাযথ ব্যবস্থা নিলেও চুক্তিহীন ব্রেক্সিটে গেলে আগামী দুই বছর প্রবৃদ্ধির হার থেমে থাকবে। এর চেয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে থেকে যাওয়াটাই দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ভালো হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০১৯
এফএম/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।