ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

হংকংয়ের অদূরে চীনের বিপুল সেনা সমাবেশ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৯
হংকংয়ের অদূরে চীনের বিপুল সেনা সমাবেশ শেনজেনের একটি স্টেডিয়ামে অবস্থান নিয়েছে পিপলস আর্মড পুলিশ ফোর্সের (পিএপি) বিপুল সৈন্য, স্যাটেলাইটের ছবি

ঢাকা: বিতর্কিত অপরাধ প্রত্যর্পণ আইন নিয়ে যখন বিক্ষোভে উত্তাল হংকং, তখন নিজেদের আধা-স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটির সীমান্ত ঘেঁষে বিপুল সংখ্যক আধা-সামরিক কর্মী মোতায়েন করেছে চীন। এ নিয়ে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, চীন এশীয় আর্থিক এই কেন্দ্রের প্রতিবাদকারীদের উদ্দেশে একটি বার্তা দিচ্ছে। প্রতিহত করা হতে পারে বিক্ষোভকারীদের।

বুধবার (১৪ আগস্ট) মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের কয়েকটি টিম দেখতে পায়, চীনের মূল ভূ-খণ্ডের দক্ষিণ-পূর্ব শহর শেনজেনের একটি স্টেডিয়ামে অবস্থান নিয়েছে পিপলস আর্মড পুলিশ ফোর্সের (পিএপি) ইউনিফর্মধারী অনেক সৈন্য। তাদের সঙ্গে রয়েছে আত্মরক্ষার জন্য বিভিন্ন ধরনের ঢাল, লাঠিসোটাসহ অসংখ্য আধা-সামরিক যানবাহন।

আর তারা যেখানে অবস্থান নিয়েছেন, সে শহরটি বা ওই ক্রীড়া সেন্টারটি হংকং সীমান্তের। এছাড়া টিমটির মতে, ওই সেন্টারে ১০০ এর বেশি আধা-সামরিক বাহিনীর গাড়ির উপস্থিতি রয়েছে।

একইসঙ্গে ম্যাক্সার টেকনোলজির বুধবারের স্যাটেলাইটের ছবিগুলোতেও দেখা গেছে এমনই পরিস্থিতি। দেখা গেছে, হংকং সীমান্তে শেনজেনের একটি খেলার স্টেডিয়ামে বিপুল সংখ্যক পিএপি-এর সদস্য সমবেত হয়েছেন প্রয়োজনীয় অস্ত্র এবং যানবাহন নিয়ে। তারা বিভিন্ন মোকাবিল চর্চাও করছেন সেখানে।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে, পিএপি হলো দেড় মিলিয়ন সদস্যের চীনা আধা-সামরিক বাহিনী। যা সরকার নিয়মিতভাবে তার সীমান্তের মধ্যে প্রতিবাদ রোধ করতে মোতায়েন করে থাকে। এছাড়া এই বাহিনী দেশটির কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের অধীনে থেকে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে কাজ করে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, হংকং সীমান্ত থেকে মাত্র কয়েক মাইল দূরে আধা-সামরিক বাহিনীর ইউনিটগুলোর উপস্থিতি নানা জল্পনার সৃষ্টি করছে। চীনা এই বাহিনী হংকং সীমান্ত শহরের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে এবং প্রায় তিন মাস ধরে চলমান বিক্ষোভের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। বিক্ষোভকারীদের প্রতিহত করতে তাদের যা পদক্ষেপ দরকার, তারা তা নিতে পারে।

কিন্তু এই হংকং বিক্ষোভ প্রতিহত করার জন্যই যে তাদের সীমান্তে অবস্থান- কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এ ধরনের কোনো ঈঙ্গিত এখনও পাওয়া যায়নি। এছাড়া এ ধরনের কোনো হস্তক্ষেপের ফলে এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে ধ্বংসাত্মক প্রভাব পড়তে পারে।

পিপলস আর্মড পুলিশ ফোর্সের একজন কর্মকর্তা সিএনএনকে জানিয়েছেন, সামান্য একটি অস্থায়ী কার্যভার নিয়ে এসে তারা এই স্টেডিয়ামে অবস্থান নিয়েছেন। তবে এই অস্থায়ী কার্যভারটা আসলে কী, এ সম্পর্কে সামান্যতম কোনো ব্যাখ্যা দেননি এই কর্মকর্তা।

এদিকে, চলমান সংকট নিরসনের চিন্তা থেকে হংকংয়ের ক্ষুদ্র সংবিধানের বেসিক আইন অনুসারে চীনা পিপলস আর্মড পুলিশ ফোর্সের সৈন্য সরবরাহ করার জন্য বৈধ সহায়তা চেয়েছিল অঞ্চলটির সরকার। সে অনুরোধ অনুমোদনও পেয়েছিল। এমনকি এ অনুসারে না-কি বাহিনীটির ছয় হাজারেরও বেশি সদস্য উপস্থিত হয়েছেন হংকংয়ে।

এ নিয়ে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, হংকং সরকার জনসাধারণের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং দুর্যোগ ত্রাণে সহায়তার জন্য অনুরোধ করতে পারে। তবে এই সাহায্যের প্রয়োজনীয়তার কারণগুলো ন্যায্য হতে হবে।

আইন বিভাগের অধ্যাপক এবং হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের সাবেক ডিন জোহানেস চ্যান বলেছেন, এই সহায়তা কেবল একটা ‘অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতেই’ নেওয়া যায়। যা হংকং সরকারের ক্ষমতা এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

তিনি এও বলেন, আমি মনে করি না, আমরা এখনও এই পর্যায়ে পৌঁছেছি।

অপরদিকে, বুধবার থেকে আবারও প্লেন চলাচল করছে বিক্ষোভকারীদের আন্দোলনের মুখে ‘বন্ধ হয়ে যাওয়া’ হংকং বিমানবন্দরে। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার (১২ ও ১৩ আগস্ট) বিক্ষোভকারীরা বিমানবন্দরের মূল টার্মিনাল দখলে নেওয়ার কারণে বাতিল হয়ে যায় কয়েক শতাধিক ফ্লাইট। পরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর বুধবার ভোর থেকে সূচি আনুযায়ী ফ্লাইট চলাচল আবার শুরু হয়। যদিও প্লেন ওঠা-নামা কিছু বিলম্বে হচ্ছে। এছাড়া কিছু বিক্ষোভকারী বিমানবন্দরে এখনও থেকে যাওয়ায় সামান্য সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।

কয়েকদিন ধরে বিমানবন্দরের কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটার পর কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় বিক্ষোভকারীদের প্রবেশের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বলে জানা গেছে।

এর আগে গত শুক্রবার থেকে বিশ্বের অন্যতম এ বিমানবন্দরে প্রতিদিনই বিক্ষোভ হয়। পরে তুমুল আন্দোলনের মুখে সোমবার থেকে দুইদিন ফ্লাইট চলাচল বন্ধ ছিল বিমানবন্দরটিতে।

অপরাধ প্রত্যর্পণ বিল বাতিলের দাবিতে প্রায় তিন মাস ধরে বিক্ষোভে উত্তাল হংকং। এই বিক্ষোভ এখন স্বাধীনতা আন্দোলনের রূপ নিয়েছে। বিক্ষোভের মুখে অঞ্চলটির প্রধান নির্বাহী ক্যারি ল্যাম বিলটিকে ‘মৃত’ ঘোষণা করলেও বিক্ষোভকারীদের আন্দোলন আর এখন থামছে না।

অপরাধী প্রত্যর্পণ আইন অনুযায়ী চীন যদি চায় সন্দেহভাজন অপরাধীদের নিজ ভূ-খণ্ডে নিয়ে বিচারের মুখোমুখি করতে পারবে। আইনে বলা হয়েছে, বেইজিং, ম্যাকাও ও তাইওয়ান থেকে পালিয়ে আসা কোনো অপরাধীকে ফেরত চাইলে তাকে ফেরত দিতে হবে।

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে হংকংয়ের এক তরুণ তাইওয়ানে এক নারীকে হত্যা করে হংকংয়ে চলে আসেন পালিয়ে। তখন তরুণকে বিচারের মুখোমুখি করতে তাইওয়ান ফেরত চাইলে হংকং আইনি জটিলতার কথা বলে। এ প্রেক্ষাপটে প্রত্যর্পণ আইনটি হংকংয়ের নিজস্ব আইনে প্রণীত করার প্রস্তাব আসে।

সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশ ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত হংকং ১৯৭৭ সালে চীনের অধীনে ফেরার পর থেকে ‘এক রাষ্ট্র দুই নীতি’র অধীনে পরিচালিত। যদিও গত দুই দশক ধরে নানা ইস্যুতে চীন সরকারের সঙ্গে কড়াকড়ি চলছে অঞ্চলটির।

আরও পড়ুন>> বিক্ষোভের মুখে হংকং বিমানবন্দরের সব ফ্লাইট বাতিল
                      হংকং বিক্ষোভ: চীনের পক্ষে অবস্থান নিলেন জ্যাকি চ্যান

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৯
টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।