ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ মে ২০২৪, ০৫ জিলকদ ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

অভিবাসী প্রবেশে ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা অবৈধ

‌আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৭
অভিবাসী প্রবেশে ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা অবৈধ যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে শুরু হয়েছে অভিবাসীদের বিক্ষোভ। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বহুল আলোচিত নির্বাহী আদেশে সই করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এ আদেশের আওতায় মার্কিন মুলুকে যেকোনো ধরনের শরণার্থী প্রবেশ বন্ধ থাকবে আগামী ৪ মাস। আর সিরিয়ার ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত। ট্রাম্প তার আদেশে ৭টি দেশের ভিজিটর বা দর্শনার্থী প্রবেশ পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছেন ৩ মাসের জন্য।

কিন্তু এ নির্বাহী আদেশকে ‘অবৈধ’ বলছেন স্থানীয় আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, জাতীয়তার ওপর ভিত্তি করে অবাধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে এ ধরনের বৈষম্য অর্ধশতক আগেই বেআইনি করেছে জাতীয় সংসদ বা কংগ্রেস।

এ বিষয়ে নিউইয়র্ক টাইমসে একটি বিশদ কলামও প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞাটি কার্যত অবৈধ বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।

ট্রাম্পের এই নিষেধাজ্ঞার আগে ১৯ শতকের শুরুর দিকে একবার এ ধরনের আদেশ জারি হয়েছিল। সেসময় সব চাইনিজ, প্রায় সব জাপানি এবং পরে সব এশিয়ান অভিবাসী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। ওই নিষেধাজ্ঞার সময় ‘এশিয়াটিক বেয়ার্ড জোন’ ঘোষণা করা হয় আওতাভুক্ত দেশগুলোকে নিয়ে। পরে ১৯২৪ সালে কংগ্রেস জাতীয়তার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপে সমন্বিত একটি পদক্ষেপ নেয়, যার আওতায় দেশটিতে পশ্চিম ইউরোপিয়ানদের প্রবেশ সহজ করা হয় এবং পূর্ব ইউরোপিয়ান, প্রায় সব এশিয়ান ও আফ্রিকানদের প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়।

ট্রাম্প তার শুক্রবারের নির্বাহী আদেশে সেই ‘এশিয়াটিক বেয়ার্ড জোন’কেই পুনরায় অস্তিত্ব দিতে চাইলেন যেন। কিন্তু এই আদেশের ‍সামনে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘অভিবাসন ও জাতীয়তা আইন ১৯৬৫’। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন স্বাক্ষরিত ওই আইনে বলা হয়, জাতীয়তার ভিত্তিতে অভিবাসন নির্ধারণের মতো বৈষম্য যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হয়ে গেল, একইসঙ্গে যেন সব রাষ্ট্র সমান সুযোগ পায় তা বলবৎ হলো। ওই আইন স্বাক্ষরের সময় প্রেসিডেন্ট জনসন বলেন, এর মাধ্যমে জাতীয়তার ভিত্তিতে অভিবাসন সুবিধা দেওয়ার যে ‘নিদারুণ অবিচার’ চলতো তা রহিত হয়ে গেল।

তবু ট্রাম্প দাবি করছেন তিনি এই বৈষম্যমূলক আদেশ জারি করতে পারেন। তার দাবি, ১৯৫২ সালে জারি হওয়া প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সংক্রান্ত আইন অনুসারে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে তিনি ‘যেকোনো পর্যায়ের এলিয়েন’ প্রবেশে স্থগিতাদেশ দিতে পারেন।

কিন্তু ১৯৫২ সালে প্রেসিডেন্টকে সে ক্ষমতা দেওয়ার পর তা যে ১৯৬৫ সালে খর্ব করা হয়েছে তা উপেক্ষা করেছেন ট্রাম্প। পরের আইনটিতে বরং সুস্পষ্ট করে বলা হয়েছে, “যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী ভিসা ইস্যু করার ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষ ধর্ম-বর্ণ, লিঙ্গ, জাতীয়তা, জন্মস্থান বা আবাসস্থানের ওপর ভিত্তি করে কারও ওপর বৈষম্য করতে পারবেন না। ” এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম থাকবেন কেবল কংগ্রেসের সুপারিশে আসা ব্যক্তিরা (যেমন কিউবার আশ্রয়প্রার্থীদের ব্যাপারে কংগ্রেসের অনুমোদন লাগবে)।

১৯৬৫ সালে কংগ্রেস কেবল ভিন রাষ্ট্রের অভিবাসীদের জন্য এই আইন পাস করেনি। এর ফলে আমেরিকান নাগরিকদের সুবিধাও নিশ্চিত করেছে, যারা বিদেশি বংশোদ্ভূত কাউকে বিয়ে করতে চায় অথবা বিদেশে অবস্থানরত পরিবারের সদস্যদের আমেরিকায় নিয়ে আসতে চায়।

কিন্তু ট্রাম্পের এই আদেশ সেই বৈষম্যকেই প্রতিষ্ঠিত করছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এই নিষেধাজ্ঞায় কেবল শরণার্থীরাই নন, ভিজিটর যেহেতু বলা হয়েছে, সেহেতু অতিথি কর্মী, শিক্ষার্থী এবং পর্যটকরাও ঢুকতে পারবেন না যুক্তরাষ্ট্রে।  

এর আগে অবশ্য বেশ ক’জন প্রেসিডেন্ট কিছু নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন। যেমন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ১৯৭৯ সালে ইরানি বিপ্লবের সময় সেখানে মার্কিন দূতাবাসে জিম্মি সংকটের প্রেক্ষিতে দেশটির বিপ্লবীদের একটি গোষ্ঠীর যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। কিন্তু সাধারণ শরণার্থী ঠিকই নেওয়া হয় সেসময়। ট্রাম্পের মতো এভাবে কোনো প্রেসিডেন্ট জাতীয়তা বা ধর্মকে ভিত্তি ধরে ঢালাওভাবে একটি রাষ্ট্র বা গোষ্ঠীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেননি।

মার্কিন সংবাদমাধ্যমের মতে, এ ধরনের নীতি-প্রণয়নের ক্ষেত্রে আদালত কদাচিৎ মাথা ঘামিয়েছে। ১৯৯০ এর দশকে যুক্তরাষ্ট্র একটি নীতি প্রণয়ন করে। ওই নীতি অনুসারে সব দেশের অভিবাসীরা দুনিয়ার যে কোথাও থেকে মার্কিন ভিসার জন্য আবেদন করতে পারলেও পারতেন না কেবল স্বদেশ ছেড়ে হংকং পালিয়ে যাওয়া ভিয়েতনামিজরা। তাদের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে ফের ভিয়েতনামে ফিরে তবেই আবেদন করতে হতো। বিরলভাবে উদ্যোগী হয়ে বৈষম্যমূলক ওই নীতি সেসময় বাতিল করে দেয় কেন্দ্রীয় আদালত।

এরপর এ ধরনের বৈষম্যমূলক আইনের বিষয়ে আদালতের সঙ্গে কখনোই মার্কিন সরকারের বিবাদ হয়নি। এখন ট্রাম্পের এই নয়া নির্বাহী আদেশে আদালত ফের উদ্যোগী হয় কিনা তার দিকে তাকিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসীরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৭/আপডেট ১৬৪৯ ঘণ্টা
এইচএ/

আরও পড়ুন
** শরণার্থী নিষেধাজ্ঞায় ট্রাম্পের সমালোচনা জুকারবার্গের
** শরণার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ
** বাংলাদেশিদের যুক্তরাষ্ট্র না ছাড়ার পরামর্শ আইনজীবীদের

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।