ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

জলে ভাসল চীনের প্রথম বিমানবাহী রণতরী

রানা রায়হান, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০০ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১১
জলে ভাসল চীনের প্রথম বিমানবাহী রণতরী

ঢাকা: চীনের প্রথম বিমানবাহী রণতরী (এয়ারক্র্যাফট ক্যারিয়ার) জলে ভাসল। বুধবার এ ঘটনার মধ্য দিয়ে বিশ্বের সামরিক মানচিত্র পাল্টে গেল বলে বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন।



গত এক দশক ধরে ইউক্রেনের কাছ থেকে কেনা অসমাপ্ত একটি বিমানবাহী রণতরী মেরামত করে তা ভাসানোর চেষ্টা করে আসছিল চীন। এর আগে তা কখনোই সম্ভব হয়নি।

এ নিয়ে বিশ্বের মাত্র ১০টি রাষ্ট্র বিমানবাহী রণতরীর মালিক হলো। দেশগুলো হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, ব্রাজিল, থাইল্যান্ড, ভারত ও সর্বশেষ চীন। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের  রণতরী আছে ১১টি। বাকি দেশগুলোর বেশিরভাগেরই একটি করে রয়েছে। এর মধ্যে ইতালির রয়েছে দুটি।

১৯৯৮ সালে চীনা একটি ব্যবসায়ী কোম্পানি ভাসমান ক্যাসিনো হিসেবে ব্যবহার করার নাম করে ভারিয়াগ (রণতরীটির আদি নাম `রিগা`) নামে পরিচিত বিমানবাহী রণতরীটি ২কোটি ডলারে ইউক্রেনের কাছ থেকে কিনে নেয়। ১৯৮০-এর দশকে সোভিয়েত সরকারের আমলে এর নির্মাণ শুরু হয়। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে অসমাপ্ত রণতরীটি ইউক্রেনের ভাগে পড়ে। এটি ইউক্রেনের কাছ থেকে কেনার পর চীনে নিয়ে আসতে কয়েক বছর লেগে যায়। ২০০২ সালে চীনের সমুদ্রবন্দর দালিয়ানে পৌঁছায় ভারিয়াগ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের দ্রত সম্প্রসারণশীল সামরিক খাতে এটি নতুন করে বিশ্বব্যাপী উত্তেজনা ছড়াবে।

বুধবার সকালে লিয়াওনিং প্রদেশের দালিয়ান বন্দর থেকে রণতরীটি ছেড়ে যায়। চীনের সামরিক সূত্র মতে, রণতরীটির সংস্কার প্রকল্পের আওতায় এটাকে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে সমুদ্রে ভাসানে হয়েছে।

চীন জানিয়েছে, রণতরীটি কেবল গবেষণা ও প্রশিক্ষণকাজে ব্যবহার করা হবে। দেশটি ইঙ্গিত দিয়েছে, সম্পূর্ণ নিজের প্রচেষ্টায় আরও কয়েকটি বিমানবাহী রণতরী নির্মাণের কাজ চলছে।

আন্তর্জাতিক সামরিক বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, এতে করে এশিয়ায় মার্কিন সামরিক প্রতিপত্তির ওপর প্রভাব পড়বে এবং তারা এশিয়ার জলসীমায় বিশেষ করে চীন সাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের  নৌবাহিনীর কাছ থেকে বড় ধরণের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। এশিয়ার জলসীমায় মার্কিন উপস্থিতি দীর্ঘদিন ধরেই চীনের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গত জুন মাসে হংকংয়ের একটি দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে চীনের সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল  চেন বিংদে প্রথমবারের মতো বিমানবাহী রণতরীর মহড়ার কথা স্বীকার করেন।

রণতরীটির দৈর্ঘ্য ৩০২ মিটার, ওজন প্রায় ৬৭ হাজার টন, ৫০টি বিমান ধারণাক্ষমতা সম্পন্ন, ঘণ্টায় গতি ৩০ নটিক্যাল মাইল।

সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ক্ষমতার চেয়ে চীন ২০ বছর পিছিয়ে আছে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। তবে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিহত করতে চীন দ্রুত তার সামরিক ক্ষমতা বাড়াচ্ছে।

চীনের সামরিক বাহিনী (পিপলস লিবারেশন আর্মি বা পিএলএ) ডুবোজাহাজেও বিনিয়োগ করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, বিশ্বে প্রথমবারের মতো চীন বিমানবাহী রণতরী বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করতে যাচ্ছে। সমুদ্রের ১৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতে তারা বিমানবাহী রণতরীর নকশা করেছে। এছাড়া দেশটি তার নিজের প্রযুক্তিতে স্টিলথ (রাডারকে ফাঁকি দিতে সক্ষম) যুদ্ধবিমান নির্মাণ করেছে।

এগুলোর সবই এশিয়ায় মোতায়েন করা মার্কিন ঘাঁটি, জাহাজ, মার্কিন বিমানবাহী রণতরীতে আঘাত হানতে সক্ষম। এটা চীনের পার্শ্ববর্তী উপকূলে মার্কিন বাহিনীর অবস্থান কঠিন করে তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্রকে চীনের কাছ থেকে হয়ত আরও দূরে সরে যেতে বাধ্য করবে।

বিমানবাহী রণতরীর ঘটনার পর তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান এবার যুক্তরাষ্ট্রকে জিজ্ঞাসা করবে ওয়াশিংটন আদতে দেশগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে কি না। চীনের পার্শ্ববর্তী এসব দেশের নিরাপত্তা মূলত যুক্তরাষ্ট্র দিয়ে থাকে।

গত বছরই জাপান, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামের সঙ্গে চীনের সঙ্গে জলসীমা নিয়ে বিবাদের ঘটনা ঘটে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।