ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৬ আশ্বিন ১৪৩২, ০২ অক্টোবর ২০২৫, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

গাজা প্রস্তাবে সাড়া দিতে হামাসের সময় তিন-চার দিন: ট্রাম্প

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯:৪৭, অক্টোবর ১, ২০২৫
গাজা প্রস্তাবে সাড়া দিতে হামাসের সময় তিন-চার দিন: ট্রাম্প ডোনাল্ড ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তার দেওয়া গাজা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সাড়া দেওয়ার জন্য হামাসের হাতে তিন থেকে চার দিন সময় আছে। তিনি বলেছেন, ইসরায়েলি ও আরব নেতারা ইতিমধ্যেই পরিকল্পনাটি মেনে নিয়েছেন।

মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘হামাস এটা করবে কি করবে না—যদি না করে তাহলে খুব দুঃখজনক সমাপ্তি হবে। ’

প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার সুযোগ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খুব বেশি নয়’।

ট্রাম্প ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকেও ধন্যবাদ জানান। সোমবার ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করে এই পরিকল্পনায় সম্মতি দিয়েছেন তিনি।

হোয়াইট হাউস প্রকাশিত ২০ দফা পরিকল্পনায় গাজায় তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি, হামাসের হাতে আটক ইসরায়েলি বন্দিদের বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনিদের মুক্তি এবং ধাপে ধাপে ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে।

প্রস্তাব অনুযায়ী, হামাসকে নিরস্ত্র হতে হবে এবং যুক্তরাষ্ট্র আরব ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে মিলে একটি ‘অস্থায়ী আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী’ মোতায়েন করবে।

এতে আরও বলা হয়েছে, গাজার শাসনকাজে হামাস কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না। তবে যারা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে রাজি হবে তাদের সাধারণ ক্ষমা দেওয়া হবে এবং যারা গাজা ছাড়তে চাইবে তাদের নিরাপদে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে।

ট্রাম্প বলেন, পরিকল্পনায় গাজায় একটি অন্তর্বর্তীকালীন টেকনোক্র্যাট সরকার গঠনের বিষয়ও রয়েছে, যারা সেবাদান করবে। গাজাবাসীদের স্বশাসন, বাস্তুচ্যুতদের ফিরে আসার নিশ্চয়তা এবং ‘গাজার মানুষকে উচ্ছেদ না করার’ প্রতিশ্রুতিও এর মধ্যে রয়েছে।

ইসরায়েলের দুই বছরের যুদ্ধের ফলে ফিলিস্তিনে মৃতের সংখ্যা ৬৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। একইসঙ্গে ভয়াবহ মানবিক সংকট চলছে। মঙ্গলবার ইসরায়েলি হামলায় আরও কয়েক ডজন ফিলিস্তিনি নিহত হন, যাদের মধ্যে দক্ষিণ ও মধ্য গাজায় ত্রাণের সন্ধানে থাকা ২০ জনও ছিলেন।

আল জাজিরা জানায়, গাজা সিটিতে প্রতি মিনিটে বিস্ফোরণ হচ্ছে, কারণ ইসরায়েলের স্থল অভিযান আরও বিস্তৃত হচ্ছে।

ডেইর আল-বালাহ শহরে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় অন্তত ছয়জন নিহত হন, যাদের মধ্যে এক শিশু ও এক সাংবাদিকও ছিলেন। নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরের কাছে বিমান হামলায় আরও চারজন নিহত হন।

প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে হামাস

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে যে, হামাসের নেতারা প্রস্তাবটি নিয়ে কাজ করছেন। কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আল থানি বলেছেন, পরিকল্পনার কয়েকটি বিষয়ে পরিষ্কার ব্যাখ্যা ও আলোচনা দরকার।

তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, সব পক্ষ গঠনমূলকভাবে প্রস্তাবটি বিবেচনা করবে এবং যুদ্ধ থামাতে এই সুযোগ কাজে লাগাবে।

ফাতাহ জানিয়েছে, তারা যুদ্ধ শেষ ও বেসামরিক মানুষের সুরক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানায়। তবে ফাতাহ নেতা আব্বাস জাকি পরিকল্পনাটিকে ‘আত্মসমর্পণের দলিল’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তার মতে, এটি মেনে নেওয়া মানে হবে অপমানকে স্বীকৃতি দেওয়া, দখল বৈধ করা এবং ফিলিস্তিনিদের ঐক্য ভেঙে দেওয়া।

‘এটা কোনো প্রস্তাব নয়, একপ্রকার আল্টিমেটাম’

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস পরিকল্পনাটিকে স্বাগত জানালেও তার মুখপাত্র বলেছেন, অগ্রাধিকার হওয়া উচিত মানুষের দুর্ভোগ কমানো।

আল জাজিরার প্রতিবেদক জানিয়েছেন, ট্রাম্পের বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে এটি আসলে প্রস্তাব নয়, বরং হামাসের প্রতি চাপ বা আল্টিমেটাম। ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে সরাসরি বলেছেন, হামাস রাজি না হলে ইসরায়েলকে ‘যা করার করতে হবে’—অর্থাৎ আরও কঠোর অভিযান চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

কাতারের হামাদ বিন খলিফা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুলতান বারাকাতও পরিকল্পনাটিকে সমস্যাযুক্ত বলেছেন। তার মতে, ‘হামাসকে শুরুতেই তাদের সব ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে এমন এক পক্ষের কাছে যাদের তারা বিশ্বাস করে না, আর বিশ্বও যাদের বিশ্বাস করে না। ’

তিনি আরও বলেন, ট্রাম্প যখন পরিকল্পনা ঘোষণা করছিলেন, তখন নেতানিয়াহু নিজের স্বার্থের সঙ্গে মিলিয়ে কিছু কথা বলেন, যা পরিকল্পনার বিরোধী। তবু ট্রাম্প তাকে থামাননি।

(আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে)

এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।