ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার চলমান সামরিক সংঘাত যেন হঠাৎ করেই শুরু হয়নি। এর পেছনে রয়েছে বছরখানেক আগে থেকে জমে ওঠা উত্তেজনার ইতিহাস, যার সূচনা হয় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরমাণু আলোচনা ঘিরে নেওয়া এক সিদ্ধান্ত থেকে।
যুক্তরাষ্ট্রের থিংক ট্যাংক কুইন্সি ইনস্টিটিউটের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ত্রিতা পারসি মনে করেন, ইরানের সঙ্গে পরমাণু আলোচনায় ট্রাম্প যে ইউরেনিয়াম একদমই সমৃদ্ধ করা যাবে না—এমন শর্ত দিয়েছিলেন, তা ছিল ইসরায়েলের সাজানো ফাঁদ।
তিনি এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে লেখেন, ট্রাম্প দাবি করেন, ইরান একটুও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে না। এই অবাস্তব শর্ত দিয়েই মূলত পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে।
পারসির মতে, ইসরায়েল খুব ভালোভাবেই জানত, ইরান কখনোই এমন আত্মসমর্পণমূলক শর্ত মেনে নেবে না, যদি না সরাসরি যুদ্ধ শুরু হয়। ফলে আলোচনা অচল হয়ে পড়ে। ট্রাম্প এই অচলাবস্থায় বিরক্ত হন এবং ইসরায়েলের প্ররোচনায় ইরানের ওপর হামলার জন্য সবুজ সংকেত দেন।
তিনি আরও লেখেন, ইসরায়েল তখন ট্রাম্পকে বোঝায়, ইরানের ওপর বোমাবর্ষণ করলে তারা হয়তো নরম হবে। কিন্তু বাস্তবে হলো উল্টো। ইরান আরও কঠোর হয়ে গেল এবং পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া শুরু করল ইসরায়েলের দিকে।
হামলা শুরুর পর ইসরায়েল ওয়াশিংটনে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে বলে যে, এ যুদ্ধ শেষ করতে তাদেরই নামতে হবে। পারসির দাবি, সবকিছু মিলিয়ে বোঝা যাচ্ছে, এটি শুরু থেকেই ছিল ইসরায়েলের কৌশলগত পরিকল্পনা।
তিনি লেখেন, ট্রাম্প যদি ইউরেনিয়াম পুরোপুরি সমৃদ্ধ না করার মতো অবাস্তব শর্ত না দিতেন, তাহলে হয়তো এতদিনে একটা পরমাণু চুক্তি হয়ে যেত।
ইরান বারবার দাবি করছে, এই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র পরোক্ষভাবে জড়িত। তাই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডাকার অনুরোধ জানায় তারা, যার পক্ষে রাশিয়া, চীন, পাকিস্তান ও আলজেরিয়া সমর্থন দিয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি বলেন, আমরা (এই সংঘাতে) জড়াতেও পারি, না-ও পারি। কেউ জানে না আমি কী করতে যাচ্ছি। তার এমন মন্তব্যের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানি মিশন। ট্রাম্প অবশ্য বারবারই চুক্তির সম্ভাবনার কথা সামনে আনছেন। তবে সেখান থেকে সরে গিয়ে ভিন্ন মন্তব্য করছেন।
আরএইচ