ঢাকা, শুক্রবার, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৩ জুন ২০২৫, ১৬ জিলহজ ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ইরানে হামলায় প্রস্তুত ইসরায়েল, দূতাবাস কর্মী সরিয়ে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

আন্তজার্তিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:৪২, জুন ১২, ২০২৫
ইরানে হামলায় প্রস্তুত ইসরায়েল, দূতাবাস কর্মী সরিয়ে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র বাংলানিউজ

ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা অচল হয়ে পড়ায় মধ্যপ্রাচ্যে ফের বাড়ছে যুদ্ধের আশঙ্কা। মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ইসরায়েল যে কোনো সময় ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালাতে পারে—এবং এ হামলা সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সহযোগিতা ছাড়াই ঘটবে।

এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক কর্মীদের সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে ইরাক, কুয়েত ও বাহরাইনে অবস্থিত দূতাবাস থেকে ‘অপরিহার্য নন’ এমন কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। তবে কাতারে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটি ও দূতাবাসে এখনও পর্যন্ত কোনো সরানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি কিছুদিন আগেও ইরানের সঙ্গে একটি চুক্তি হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী ছিলেন, এখন ইঙ্গিত দিয়েছেন—এ রকম কোনো সমঝোতা আর সম্ভব নয়। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘ইরান পারমাণবিক অস্ত্র পেতে পারে না। একেবারেই না। ’ যদিও উত্তেজনার মধ্যেই ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ওমানে ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা রয়েছে।

এদিকে ইরানও সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তারা তাদের মাটিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম বন্ধ করবে না এবং যদি হামলা হয় তাহলে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানাবে। ইরান দাবি করেছে, একটি ‘বন্ধুরাষ্ট্র’ থেকে তারা আগেই ইসরায়েলের সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে সতর্কবার্তা পেয়েছে।

পশ্চিমা গোয়েন্দা সূত্র ও স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ইরান ইতোমধ্যে তাদের গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু স্থাপনাগুলোর চারপাশে শক্তিশালী বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বসিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রাশিয়ান এস-৩০০ ও ইরানি নির্মিত বাভর-৩৭৩ এবং খোরদাদ-১৫ সিস্টেম।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া ইসরায়েলের এককভাবে এ ধরনের একটি অভিযান পরিচালনা করা হবে অত্যন্ত কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর অধিকাংশই পাহাড় বা ভূগর্ভস্থ শক্তিশালী বাঙ্কারে অবস্থিত। এ কারণে একবার বোমা বর্ষণে তা ধ্বংস করা সম্ভব নয়—প্রয়োজন হতে পারে একাধিক অভিযান, যেগুলোর জন্য মধ্যপথে জ্বালানি ভরারও প্রয়োজন হতে পারে। এতে ইসরায়েলি বিমানের ঝুঁকি বাড়বে, কারণ ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বহুস্তর বিশিষ্ট এবং ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন প্রযুক্তিতেও তারা এখন অনেকটাই পারদর্শী।

যুক্তরাষ্ট্রও এ সম্ভাব্য সংঘাতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে এপ্রিল মাসে তারা ছয়টি বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমান ভারত মহাসাগরে ডিয়েগো গার্সিয়ার ঘাঁটিতে মোতায়েন করেছে— যেখান থেকে ইরানে সরাসরি হামলা চালানো সম্ভব।

যদিও অতীতে ইসরায়েল বেশ কয়েকবার ইরানি প্রতিরক্ষা স্থাপনায় হামলা চালিয়ে সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে, তবুও এ ধরনের পূর্ণমাত্রার আক্রমণ সম্পূর্ণ ভিন্ন আয়োজনের দাবি রাখে। এতে ব্যাপক সমন্বয়, ইলেকট্রনিক জ্যামিং, রাডার ধ্বংসে নির্ধারিত অস্ত্র ও ঘন ঘন বিমান অভিযান প্রয়োজন হবে— যা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে পারে।

ইসরায়েল ও ইরান উভয় পক্ষই নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করছে, আর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এখন একেবারে সুতোয় ঝুলছে। পরবর্তী পদক্ষেপে যে কোনো ভুল বোঝাবুঝি বা আগ্রাসী পদক্ষেপ সহজেই পুরো অঞ্চলকে এক নতুন সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

সূত্র: ওয়ালা নিউজ

এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।