মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল শারার সঙ্গে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে এক ঐতিহাসিক বৈঠকে মিলিত হয়েছেন।
গত ২৫ বছরে প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প কোনো সিরিয়ান নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন।
এর আগে মঙ্গলবার (১৩ মে) ট্রাম্প ঘোষণা দেন, সিরিয়ার ওপর আরোপিত ‘নির্মম ও বিধ্বংসী’ আসাদ-যুগের নিষেধাজ্ঞা তিনি তুলে নিচ্ছেন। এটা এখন সিরিয়ানদের জন্য আলো ছড়ানোর সময়। এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার তাদের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও উন্নয়নের সুযোগ দেবে।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০০০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন সিরিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হাফেজ আল-আসাদের সঙ্গে জেনেভায় সাক্ষাৎ করেছিলেন, যার উদ্দেশ্য ছিল ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা, যা ব্যর্থ হয়।
সিরিয়ার উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের খবরে দামাস্কাসের ঐতিহাসিক উমাইয়াদ স্কয়ারে শত শত নারী, পুরুষ ও শিশু উল্লাসে রাস্তায় নেমে আসে।
সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ মোড়’ বলে উল্লেখ করেছে, যা দেশের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে।
গত এক দশকের গৃহযুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার ওপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল এবং স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল, বাশার আল-আসাদ ক্ষমতায় থাকা পর্যন্ত দেশটিতে বিনিয়োগে জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
তবে সিরিয়াকে "সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক রাষ্ট্র" হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কালো তালিকা থেকে সরানো হবে কিনা তা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি ট্রাম্প। ১৯৭৯ সালে ফিলিস্তিনি মিলিশিয়াদের সমর্থনের অভিযোগে এই তকমা দেওয়া হয়েছিল পরবর্তীতে দেশটির বৈদেশিক বিনিয়োগে যা বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি পশ্চিমা শক্তি আগেই সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলেছে, যুক্তরাষ্ট্র এতদিন কঠোর অবস্থানে ছিল।
জো বাইডেন প্রশাসনের এক শীর্ষ কূটনীতিক গত ডিসেম্বরে দামাস্কাসে আল-শারার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা ও অন্যান্য বিষয়ে প্রতিশ্রুতি চান।
তবে সম্প্রতি সিরিয়ার সংখ্যালঘু আলাউই ও দ্রুজ সম্প্রদায়ের ওপর একাধিক রক্তক্ষয়ী হামলার ঘটনা উদ্বেগ তৈরি করেছে।
অন্যদিকে আসাদ পতনের পর ইসরায়েল সিরিয়ায় একের পর এক বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা শারার নেতৃত্বে বড় কোনো পরিবর্তন হবে বলে আশাবাদী নয় বরং শত্রুপক্ষের সামরিক সক্ষমতা কমিয়ে দিতে এমন হামলা অব্যাহত রেখেছে।
কায়রোর আল-আহরাম সেন্টার ফর পলিটিক্যাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের গবেষক রাবহা সাইফ আল্লাম বলেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার সিরিয়াকে বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে পুনঃসংযুক্ত হওয়ার সুযোগ দেবে। বিদেশি বিনিয়োগ ও প্রবাসী সিরিয়ানদের অর্থ স্থানান্তরের পথ সুগম হবে।
তিনি আরও বলেন, এটি দেশটির অর্থনীতি পুনর্গঠন, কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং উপসাগরীয় দেশগুলোর সহায়তায় পুনর্গঠন প্রকল্প চালুর একটি বাস্তব সুযোগ সৃষ্টি করবে।
সূত্র: আরব নিউজ
এমএম