ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

তথ্যপ্রযুক্তি

১ম রাউন্ডে ৪ অপারেটর তরঙ্গ কিনলেও ২য় রাউন্ডে অংশ নেয়নি কেউ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৮ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২২
১ম রাউন্ডে ৪ অপারেটর তরঙ্গ কিনলেও ২য় রাউন্ডে অংশ নেয়নি কেউ

ঢাকা: ফাইভজিসহ অন্যান্য সেবার মান উন্নয়নে দুই ব্যান্ডে ১০ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকার তরঙ্গ (স্প্রেকট্রাম) কিনেছে দেশের চার মোবাইল ফোন অপারেটর।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) আয়োজনে বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এই নিলামে টেলিটক, গ্রামীণফেন, রবি এবং বাংলালিংক অংশ নেয়।

নিলামে টেলিটক ২৩শ’ (২ দশমিক ৩ গিগাহাটর্জ) ব্যান্ডে ১ হাজার ৬৮০ কোটি টাকায় তিনটি ব্লকে ৩০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কিনেছে। রবি ২৬শ (২ দশমিক ৬ গিগাহাটর্জ) ব্যান্ডে ৬টি ব্লকে ৩ হাজার ৩৬০ কোটি টাকায় কিনেছে ৬০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। গ্রামীণফোন ২৬শ ব্যান্ডে ৬টি ব্লকে ৩ হাজার ৩৬০ কোটি টাকায় কিনেছে ৬০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। বাংলালিংক ২৩শ (২ দশমিক ৩ গিগাহাটর্জ) ব্যান্ডে ৪টি ব্লকে ৪০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কিনেছে ২ হাজার ২৪১ কোটি টাকায়।

দুই ব্যান্ডে মোট ১৯০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কিনেছে চার অপারেটর। প্রথম রাউন্ডে এই পরিমাণ তরঙ্গ কিনলেও নিলামের দ্বিতীয় রাউন্ডে আর কেউ অংশ নেয়নি।

নিলাম অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।  

পরে সংবাদ সম্মেলনে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, গ্রাহকরা সেবার মান নিয়ে যে প্রশ্ন তুলে আসছিলেন, নতুন বরাদ্দ দেওয়া তরঙ্গ ব্যবহারের মাধ্যমে তা আর থাকবে না। পাশাপাশি এই তরঙ্গ ফাইভজি তথা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত করবে।  

বিটিআরসির চেয়ারম্যান বলেন, বরাদ্দকৃত তরঙ্গ ব্যবহারে ইকোসিস্টেম তৈরির জন্য আগামী ৯ মাসের মধ্যে অপারেটরদের প্রস্তুত হতে হবে।

নিলাম অনুষ্ঠানে বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন বিভাগের কমিশনার প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ জুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নিলাম পরিচালনা করেন সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ। স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মনিরুজ্জামান জুয়েল এবং একই বিভাগের পরিচালক ড. মো. সোহেল রানা ও লে. কর্নেল মো. আউয়াল উদ্দিন সদস্য ছিলেন।

বিশ্বের বিভিন্ন টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক ও প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ৫জি তথা মোবাইল ব্রডব্যান্ড, আইওটি এবং অধিক নির্ভরযোগ্য ও নিম্নতর বিলম্বের নেটওয়ার্ক তৈরির ধারণাগুলোর প্রায়োগিক দিকসমূহ বিবেচনায় নিয়ে নানামুখী সেবার বাণিজ্যিক বাস্তবায়নে ক্রমশ অগ্রসর হচ্ছে। যাকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় পৃথিবীর উন্নত ও উন্নয়নশীল বহু দেশ ইতোমধ্যে বাণিজ্যিকভাবে ও পরীক্ষামূলকভাবে ৫জি চালু করেছে।

সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার-২০১৮ এর লক্ষ্য ও পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ২০২১-২০২৩ সালের মধ্যে ৫জি চালু করা হবে। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সময়োপযোগী, অর্থনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য ও কারিগরিভাবে বাস্তবসম্মত উপায়ে বাংলাদেশে ৫জি সেবা চালুর জন্য ২ দশমিক ৩ গিগাহার্জ, ২ দশমিক ৬ গিগাহার্জ ও ৩ দশমিক ৫ গিগাহার্জ ব্যান্ড তিনটি নির্ধারণ করা হয়েছে।

২০০১ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসনিার আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় টেলিটকের মাধ্যমে ৩ দশমিক ৫ গিগাহার্জ ব্যান্ডে ৫জি সেবা পরীক্ষামূলক চালুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিটি ক্ষেত্রে টেলিযোগাযোগ ও ডিজিটাল তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। এছাড়া, বর্তমানে করোনা ভাইরাসজনিত মহামারির কারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য, সরকারি- বেসরকারি অফিস ও আদালতের কার্যক্রমসহ সব ধরনের সেবামূলক কাজ অনলাইনে সম্পন্ন করা হচ্ছে বিধায় মোবাইল নেটওয়ার্কের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

গ্রাহক সেবার মান উন্নত করার বিষয়টি বিবেচনার পাশাপাশি মোবাইল অপারেটরদের তরঙ্গ চাহিদা, বাজার পরিস্থিতি ও বৈশ্বিক অবস্থা এবং সর্বপরি সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কমিশন থেকে ২ দশমিক ৩ গিগাহার্জ ব্যান্ডের বরাদ্দযোগ্য ১০০ মেগাহার্জ (১০ মেগাহার্জের ১০টি ব্লক) এবং ২ দধমিক ৬ গিগাহার্জ ব্যান্ডের বরাদ্দযোগ্য ১২০ মেগাহার্জ (১০ মেগাহার্জের ১২টি ব্লক) তরঙ্গ নিলামে বরাদ্দের জন্য গত ৩ মার্চ নির্দেশিকা জারি করা হয়। এতে তরঙ্গ ব্যান্ডের ভিত্তি মূল্য, মেয়াদ, পরিশোধ পদ্ধতি, নিলাম সংশ্লিষ্ট অন্যান্য চার্জসহ তরঙ্গ নিলামে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক মোবাইল অপারেটরদের জন্য সুনিদৃষ্ট দিক নির্দেশনা সন্নিবেশিত করা হয়।

এবারের নিলামে ২ দশমিক ৩ গিগাহার্জ ও ২ দশমিক ৬ গিগাহার্জ ব্যান্ডের তরঙ্গ মোবাইল অপারেটরদের অনুকূলে বরাদ্দের জন্য ১৫ বছরের জন্য প্রতি মেগাহার্জ তরঙ্গের ভিত্তি মূল্য ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সরকারের পূর্বানুমতি গ্রহণ সাপেক্ষে নির্ধারণ করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে, অপারেটরকে নতুন প্রাপ্ত তরঙ্গের মোট অধিগ্রহণ মূল্যের ১০ শতাংশ ৩০ জুনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। তবে সংশ্লিষ্ট অপারেটরকে ১ জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারির মধ্যে মূল তরঙ্গ বরাদ্দ পত্র কমিশন থেকে গ্রহণ করতে হবে। তরঙ্গ বরাদ্দপত্র জারির তারিখ থেকে প্রতি এক বছর অন্তর বাৎসরিক ১০ শতাংশ হারে বাকি ৯০ শতাংশ চার্জ ৯টি কিস্তিতে ৯ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। তরঙ্গের মেয়াদ প্রাথমিকভাবে  জি লাইসেন্স মেয়াদ তথা ২০৩৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত থাকবে। এক্ষেত্রে সমন্বিত মোবাইল লাইসেন্স জারির পর প্রযোজ্য ফি পরিশোধ সাপেক্ষে উক্ত তরঙ্গের মেয়াদ ১৫ বছরের জন্য বৃদ্ধি করার সুযোগ রাখা হয়েছে।

তরঙ্গ বরাদ্দে নিলাম পদ্ধতি অবলম্বনের জন্য নির্দেশিকাটি একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অপারেটরদের মধ্যে তরঙ্গ বরাদ্দের সামঞ্জস্যতা রক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে প্রণয়ন করা হয়েছে।  

নিলামে প্রাপ্ত সর্বশেষ ফলাফল অনুযায়ী, আজকের চূড়ান্ত নিলাম মূল্য ১৫ বছরের জন্য ৬ দশমিক ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার নির্ধারিত হয়েছে। গ্রামীণফোন ২ দশমিক ৬ গিগাহার্জ ব্যান্ড থেকে ৬০ মেগাহার্জ, রবি ২ দশমিক ৬ গিগাহার্জ ব্যান্ড থেকে ৬০ মেগাহার্জ, বাংলালিংক ২ দশমিক ৩ গিগাহার্জ ব্যান্ড থেকে ৪০ মেগাহার্জ এবং টেলিটক ২ দশমিক ৩ গিগাহার্জ ব্যান্ড থেকে ৩০ মেগাহার্জ তরঙ্গ বরাদ্দ গ্রহণ করেছে।

১৫ বছরের জন্য যার মূল্য ১ হাজার ২৩৫ (ভ্যাট ছাড়া) মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার পরিমাণ বাংলাদেশি টাকায় দাঁড়ায় ১০ হাজার ৬৪৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

অপারেটর ভিত্তিক তরঙ্গের সর্বশেষ হিসাবে গ্রামীণফোনের মোট একসেস তরঙ্গ ৪৭ দশমিক ৪০ মেগাহার্জ থেকে ১০৭ দশমিক ৪০ মেগাহার্জে উন্নীত হবে। রবির মোট একসেস তরঙ্গ ৪৪ মেগাহার্জ থেকে ১০৪ মেগাহার্জে উন্নীত হবে। বাংলালিংকের মোট একসেস তরঙ্গ ৪০ মেগাহার্জ থেকে ৮০ মেগাহার্জে উন্নীত হবে। টেলিটকের মোট একসেস তরঙ্গ ২৫ দশমিক ২০ মেগাহার্জ থেকে ৫৫ দশমিক ২০ মেগাহার্জে উন্নীত হবে।

 বাংলাদেশ সময় ১৭১৭ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২২
এমআইএইচ/এসআইএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।