ঢাকা: মোবাইল ফোনের কল্যাণে আরও স্মার্ট জীবন যাপন করার সুযোগ পাচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ। তারা নতুন দক্ষতা অর্জন করতে পারছেন, সামাজিক যোগাযোগ বাড়ছে এবং নিজেকে নিরাপদ মনে করছেন।
বুধবার (০৭ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘ডিজিটাল লাইভস ডিকোডেড (বাংলাদেশ)’ শীর্ষক টেলিনর এশিয়া প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশ মোবাইল প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো নতুন প্রযুক্তি গ্রহণে আগ্রহী বলে উঠে এসেছে। মোবাইল সংযোগ কীভাবে আরও স্মার্ট ও নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করছে, সে বিষয়টি উঠে এসেছে। এতে বোঝা যায়, মোবাইল ফোন শুধু যোগাযোগের হাতিয়ার নয়, আরও স্মার্ট জীবন যাপনের কার্যকর মাধ্যম।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ডিজিটাল ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে দক্ষ করে তোলা এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতির পূর্বশর্ত হচ্ছে মোবাইল সংযোগ। মানুষের হাতে সংযোগ পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি তারা যেন নিরাপদে ও দায়িত্বশীল হয়ে মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করেন, সে দিকটি নিশ্চিত করাটা আমাদের সম্মিলিত অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। আমরা যৌথ প্রচেষ্টায় ডিজিটাল সংযোগের সম্প্রসারণ এবং আরও স্মার্ট ও নিরাপদ ডিজিটাল ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে পারি।
টেলিনর এশিয়ার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং হেড অব এক্সটার্নাল রিলেশনস অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি মনীষা ডোগরা বলেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে রূপান্তর ঘটাতে এবং বিপ্লব আনতে সহায়ক মোবাইল প্রযুক্তি, যে প্রযুক্তি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহযোগে হয়েছে আরও সমৃদ্ধ। টেলিনর এশিয়া গ্রামীণফোনের সঙ্গে একসাথে বাংলাদেশে মোবাইল সংযোগের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপনে সহায়তা করতে পেরে গর্বিত। আমরা আনন্দিত যে, মোবাইল প্রযুক্তি দেশজুড়ে আরও মানসম্মত ডিজিটাল জীবনধারার বিকাশ ঘটিয়েছে, যেমনটি জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মতামতের ভিত্তিতে দেখা যায়।
১. বাংলাদেশে আরও স্মার্ট ও নিরাপদ ডিজিটাল জীবন নিশ্চিত করছে মোবাইল ফোন:
ক্রমবর্ধমান হারে অনলাইন শিক্ষা, মোবাইল ওয়ালেট এবং গতিবিধি পর্যবেক্ষণের মতো সেবাগুলো গ্রহণ করে আরো স্মার্ট জীবনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
প্রতি ১০ জনে ৬ জন অনলাইন শিক্ষার উপকারিতার কথা বলেছেন। এ হার মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডের চেয়ে বেশি। প্রতি ২ জনের মধ্যে ১ জনের কাছে (৫৩%) অনলাইন কোর্স ও লার্নিং অ্যাপের মতো শিক্ষা সামগ্রীগুলো বেশ জনপ্রিয়।
মোবাইল ফোনের কল্যাণে বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক মানুষের মধ্যে (৫২%) নিরাপত্তাবোধ বেড়েছে। জরিপ পরিচালনা করা অন্যান্য দেশের তুলনায় এই হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। থাইল্যান্ডে এ হার ৩৭%, মালয়েশিয়ায় ৩১% ও সিঙ্গাপুরে ২৮%। মূলত সাহায্যের প্রয়োজন হলে কল করা বা জরুরি সেবার সহায়তা নিতে পারা (৬৪%), পরিবার বা বন্ধু-বান্ধবদের নিজের অবস্থান জানাতে পারা (৫৮%) এবং নগদ অর্থ সাথে নেয়ার বদলে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করার সুবিধা থাকায় (৫৭%) নিরাপত্তাবোধ বেড়েছে।
২. পরিচয় জালিয়াতি ও ডিপফেকের ক্রমবর্ধমান আশঙ্কার মধ্যে আবশ্যক হয়ে উঠেছে অনলাইন সেফটি:
বাংলাদেশে ডিজিটাল পরিমণ্ডল পরিবর্তিত হওয়ার সাথে সাথে নতুন ঝুঁকি- পরিচয় জালিয়াতি ও ডিপফেকের আশঙ্কাও বাড়ছে। প্রতি ১০ জনে ৭ জন তাদের অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নেটওয়ার্ক অ্যাটাকের উচ্চ ঝুঁকির মধ্যেও রয়েছে বাংলাদেশ। প্রতি ১০ জনে ৩ জন জানিয়েছেন, এটি অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। যেখানে সিঙ্গুপুর ও থাইল্যান্ডে প্রতি ৫ জনে ১ জন এবং মালয়েশিয়ায় আরো কম মানুষ এ উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।
তবে বাংলাদেশের উত্তরদাতারা জরিপকৃত অন্যান্য দেশের তুলনায় অনলাইন নিরাপত্তার দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে। তাদের মধ্যে কম সংখ্যক ব্যক্তিই লিস্ট আনসাবস্ক্রাইব বা অপট আউট, ব্রাউজিং হিস্টোরি/ক্যাচে/ক্যাশ ক্লিয়ার, ওয়েবসাইট কুকি ডিক্লাইন অথবা অ্যাড-ব্লকার ব্যবহার করেন। এর পাশাপাশি যেকোন ওয়েবসাইটের প্রতি তুলনামূলকভাবে বেশি আস্থা রয়েছে তাদের। এর মানে তাদের ডিজিটাল লিটারেসি বাড়ানোর জন্য ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা প্রয়োজন। পাশাপাশি নিরাপদ অনলাইন আচরণের দিকেও নজর দিতে হবে।
৩. শিক্ষা এবং কর্মক্ষেত্রে এআই ব্যবহারের প্রবণতা প্রতিনিয়ত বাড়ছে:
বাংলাদেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের হার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৬ জন তাদের দৈনন্দিন জীবনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সম্ভাবনা ও কার্যকারিতা নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে শিক্ষা কার্যক্রমে এআই’র প্রভাব সম্পর্কে ১০ জনের মধ্যে ৮ জন ইতিবাচক মত দিয়েছেন। শিক্ষাকে আরও সহজলভ্য করতে এবং শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় এআই বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন তারা।
বাংলাদেশে বিনামূল্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিভিন্ন টুলের সহজলভ্যতা এবং সহজে ব্যবহারের সুবিধা কর্মক্ষেত্রে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তবে এই সব টুল ব্যবহারে ফুটে উঠেছে জেন্ডার বৈষম্যের দিকটি। যেখানে নারীদের মাত্র এক তৃতীয়াংশ (৩৭%) কর্মক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করেন, সেখানে পুরুষ মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে এ হার প্রায় অর্ধেক (৪৭%)।
যদিও এআই অসংখ্য সুযোগ তৈরি করছে, কিন্তু কিছু মানুষ তাদের চাকরির নিরাপত্তার ওপর এআই’র প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই সংখ্যা প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৩ জন। তবে এআই নিয়ে উচ্ছ্বসিত এমন ব্যবহারকারীরাও এআই’র ক্ষেত্রে ডেটার ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কারণ ডেটা কীভাবে ব্যবহার ও শেয়ার করা হচ্ছে তা স্পষ্ট নয় এবং ব্যবহারকারীর প্রত্যক্ষ সম্মতি ছাড়াই বিপুল পরিমাণ ডেটা সংগ্রহ করে এআই। স্বচ্ছ ও শক্তিশালী ডেটা সুরক্ষা নীতির মাধ্যমে গোপনীয়তার সমস্যাগুলো সমাধান করাটা এর গ্রহণযোগ্যতা এবং নিরাপদ ব্যবহারের জন্য আবশ্যক। এআই থেকে পাওয়া তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা ও সীমাবদ্ধতা নিয়েও আরো কাজের সুযোগ রয়েছে।
গ্রামীণফোনের চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার তানভীর মোহাম্মদ বলেন, বাংলাদেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মোবাইল ফোনের ব্যবহার বাড়ার সাথে সাথে সংযোগের রূপান্তরকারী শক্তি এবং অগ্রগতির জন্য এর অপরিসীম সম্ভাবনাও স্পষ্ট হচ্ছে। গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে আমরা জিপি একাডেমি, জিপি অ্যাক্সিলারেটর ও ফিউচার নেশনের মতো উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ডিজিটাল দক্ষতা প্রদান এবং অনলাইন নিরাপত্তা বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি করছি। মানুষ যেন ডিজিটাল পরিমণ্ডলে নিশ্চিন্তে ও নিরাপদে বিচরণ করতে পারেন এজন্য আমাদের সম্মিলিতভাবে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার প্রদান এবং প্রযুক্তির দায়িত্বশীল ব্যবহারের ক্ষেত্রে উচ্চ মান নিশ্চিত করতে হবে।
এমআইএইচ/এমজেএফ