ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

তথ্যপ্রযুক্তি

ডিজিটাল সেবায় সরকারের সাফল্য ডাক বিভাগের ‘নগদ’

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২১
ডিজিটাল সেবায় সরকারের সাফল্য ডাক বিভাগের ‘নগদ’

প্রতি সপ্তাহেই বাড়িতে টাকা পাঠান হানিফ। জরুরি প্রয়োজনে হঠাৎ হঠাৎ তাকে রাজশাহীর বেলপুকুরে গ্রামের বাড়িতে টাকা পাঠাতে হয়।

রাজধানীতে একটি ফুড ডেলিভারি কোম্পানিতে সামান্য বেতনে চাকরি করা হানিফ ভালো করে বোঝেন খরচ কমানো কতোটা জরুরি। সেই কারণে অন্যের খাবার বয়ে বেড়ানো হানিফের কাছে বাড়িতে টাকা পাঠাতে কতোটা খরচ হয়, সেটাই প্রধান বিবেচনা। ফলে অবধারিতভাবে হানিফের পছন্দ ‘নগদ’।  

‘এতো কম খরচে তাৎক্ষণিকভাবে টাকা পাঠানোর সুযোগতো আর কারও নেই,’ বলছিলেন গত তিন বছর ধরে ডেলিভারি ম্যান হিসেবে কাজ করা হানিফ।

হানিফের মতো লাখ কোটি গ্রাহক খরচের বিবেচনায় বেছে নিয়েছেন ‘নগদ’-কে। কেউ আবার পছন্দ করেছেন আধুনিকতম প্রযুক্তির ব্যবহার বা গ্রাহকবান্ধব সেবার কারণে।

হাজারে ভ্যাটসহ সাড়ে এগারো টাকা খরচে ক্যাশ আউট করার সুযোগ আর কোথায় আছে! যদি কেউ অ্যাপ ব্যবহার না করেন, তাহলে খরচটা সাড়ে চৌদ্দ টাকায় গিয়ে পড়বে। কাজের জন্যে যে স্মার্টফোনটি হানিফ কিনেছিলেন, সেটি এখন ‘নগদ’-এর কম খরচের সেবা নিতেও সহায়তা করছে।

অনেক সময় মেসের বন্ধুদের কাছ থেকে ধার-দেনা করতে হলেও এখন আর বাড়তি খরচ হয় না। কারণ, অন্যখানে প্রতি লেনদেনে যেখানে ৫ টাকা চার্জ, ‘নগদ’ অ্যাপে সেটা ফ্রি। সবচেয়ে কম খরচে ইন্টারনেট ডাটা বান্ডেলও কিনছেন মুহূর্তে। তার কোম্পানির অর্ডারের অনেকটাই হচ্ছে এখন ‘নগদ’। তাছাড়া ক্যাশ অন ডেলিভারির সময় ‘নগদ’-এ বিল নিচ্ছেন তিনি।

মাত্র দুই বছর আগে, যাত্রা করা ডাকবিভাগের ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস কোম্পানি ‘নগদ’ এভাবেই অনেক হানিফের জীবন গল্পের অংশ হয়ে উঠেছেন। আর সে কারণে ‘নগদ’-এর গ্রাহক সংখ্যা এখন তিন কোটি পেরিয়ে গেছে। প্রতিদিনের গড় লেনদেন উঠেছে তিনশ কোটি টাকায়।

যেকোনো মোবাইল নম্বর থেকে *১৬৭# ডায়াল করে মুহূর্তে অ্যাকাউন্ট খোলা, ডিজিটাল কেওয়াইসির প্রচল করা, অ্যাকাউন্ট না থাকলেও যেকোনো নম্বরে টাকা পাঠানো- দেশের আর্থিকখাতে এসব ডিজিটালাইজেশনের সূচনা ‘নগদ’-ই করেছে।

গত কয়েক বছরে সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশনের যে অগ্রগতি ঘটিয়েছে এমন অসংখ্য হানিফকে ডিজিটাল জীবন উপহার দেওয়ার মাধ্যমে ‘নগদ’-ই এ ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে।

‘সাধারণ মানুষের জীবনাচরণে খানিকটা হলেও পরিবর্তন আনার স্বপ্ন নিয়ে কাজ করেছি সবসময়। কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, লেনদেনের ক্ষেত্রে দেশের মানুষের যে অভ্যাসগত ধরণ সেখানে সামান্য পরিবর্তন করতে পারলেই অনেক বড় কাজ হবে,’ ‘নগদ’ শুরুর দিকে এমনই ভাবনার গল্প বলছিলেন তানভীর আহমেদ মিশুক। মিশুকের হাত ধরেই ‘নগদ’ এর স্বপ্ন দেখার শুরু হয়েছে এবং বাস্তবতাও মিলেছে।

২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার যে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত সেটিকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাস্তবতা দেওয়ার চিন্তাও মাথায় ছিল মুক্তিযোদ্ধা বাবার সন্তান মিশুকের।

‘সব কাজতো আর সরকার করে দিতে পারবে না। সরকার দেবে দিকনির্দেশনা। আর সেটিকে বাস্তবতায় রূপান্তরের দায়িত্ব থাকে নিচের দিকে সবার। সে কারণেই আমরা সরকারের একটি অংশকে খুঁছছিলাম যাদের সঙ্গে অংশীদারিত্ব করে সরকারের ভিশনকে বাস্তবতা দিতে পারি,’ বলেন মিশুক।

ডাক বিভাগ, মিশুক আর ‘নগদ’-এর চিন্তা এবং সে অনুসারে কর্মপদ্ধতি যে কতোটা সফল হয়েছে তার প্রমাণ আজকের ‘নগদ’। পাবলিক, প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেলে পরিচালিত এ ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসটি ডিজিটালাইজেশনের ক্ষেত্রে সরকারকে উদাহরণ তুল্য সাফল্য এনে দিয়েছে।

সে কারণে সরকারের সব আর্থিক সেবা কার্যক্রম একের পর যুক্ত হচ্ছে ‘নগদ’-এর সঙ্গে। সরকারের যেকোনো ভাতা বিতরণ করতে হবে- এক সময় মহা-কর্মযজ্ঞের এসব কাজের ‘মুশকিল-আসান’ এখন ‘নগদ’।

শুরুটা হয়েছিল গত বছর করোনা ভাইরাসের কারণে কাজ হারানো মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ থেকে। সেবার ৫০ লাখ মানুষকে আড়াই হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার জন্যে চারটি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস কোম্পানিকে বেছে নেওয়া হলেও ‘নগদ’ পেলো সবচেয়ে বেশি অংশ বিতরণে দায়িত্ব।  

আসলে সেটি ছিল মাত্র এক বছরের একটি কোম্পানির দক্ষতা যাচাইয়ের পরীক্ষাও। সেই পরীক্ষায় এতোটা ব্যবধানে ‘নগদ’ প্রথম হলো যে তারপর একের পর এক সব ভাতা, সহায়তা, উপবৃত্তি যা কিছু বিতরণ হচ্ছে সবকিছুতে ‘নগদ’কেই ডেকে নিচ্ছে সরকার।

দীর্ঘদিন প্রাথমিক পর্যায়ের উপবৃত্তি ও শিক্ষা উপকরণ ভাতা বিতরণে যে সমস্যা জমেছে সেটাও পরিষ্কার করতে ডাক পড়লো ‘নগদ’-এর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশনায়, গত ডিসেম্বরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর ‘নগদ’-এর সঙ্গে চুক্তি করলো দেড় কোটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপবৃত্তি ও শিক্ষা উপকরণ কেনার ভাতা বিতরণের। দুই মাসের কম সময়ের মধ্যেই প্রস্তুত হলো এমন এক ডেটাবে, যেখানে সব শিক্ষার্থীর জন্মনিবন্ধন ও অভিভাবকদের মোবাইল নম্বর এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধিত হলো। ডেটাবেজটি আগামী বহু বছর সরকারকে সুবিধা দেবে। গত সপ্তাহে উপবৃত্তি বিতরণও শুরু হয়ে গেছে। ডিজিটাল এ সেবা পেতে গ্রাহকের কিন্তু একটি টাকাও বাড়তি খরচ হচ্ছে না।

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সরকারের সবচেয়ে বেশি আর্থিক কার্যক্রম থাকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে। সেখানে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার চার ধরনের ভাতা বিতরণের তিন-চতুর্থাংশই সরকার দিয়েছে ‘নগদ’-কে।  

এর আগে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রাণালয়ের মাধ্যমে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব-এর ৯০তম জন্মদিনে দুস্থ নারীদের সহায়তা দেওয়া, কোভিড টেস্টের বিল পরিশোধ, সরকারের সব ধরনের সেবার বিল দেওয়া সবখানেই এখন কেবল ‘নগদ’ আর ‘নগদ’। সব মিলে ‘নগদ’ হয়ে উঠেছে সরকার ও সাধারণ মানুষের আস্থা।

২০১৯ সালের ২৬ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে জন্ম হয়েছিল ‘নগদ’-এর। নিত্যনতুন সেবা আর উদ্ভাবনের পর উদ্ভাবন যোগ করতে করতে ‘নগদ’ আজ দেশের দ্বিতীয় সেরা ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস অপারেটর, যেখানে মোট গ্রাহকের ৩০ শতাংশ যুক্ত আছে। গ্রাহক ভালোবাসায় চলতি বছরের মধ্যেই মার্কেট শেয়ার ৫০ শতাংশে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন তানভীর আহমেদ মিশুক।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২১
ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।