কলকাতা: প্রবল স্রোতের তোড়ে গত ২০ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অর্থায়নে তৈরি আত্রাই নদীর বাঁধের একাংশ ধসে যায়। আর সেই বাঁধ ভেঙে পড়ায় বাংলাদেশ ও চীনকে দায়ী করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, আমাদের কাজটায় একটা সমস্যা হয়েছে, তার কারণ আমাদের একটি সীমান্তবর্তী দেশ রয়েছে। তার নাম বলছি না। তারা দুটো দেশ মিলে একটা বাঁধ তৈরি করেছিল। আমরা আগেও সেটা নিয়ে বার বার ভারত সরকারকে জানিয়েছি যে, এর কারণে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুরের মানুষ আত্রাই নদীর পানি পায় না। ফলে আমরা যেটুকু কাজ করতে যাচ্ছি তা খুবই লিমিটেড। তা সত্ত্বেও যেটা ভেঙেছে, তার জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং কাজটা অবিলম্বে করার কথা বলা হয়েছে।
বুধবার (১৭ মে) জলপাইগুড়ি জেলার উত্তরকন্যা প্রেক্ষাগৃহে প্রশাসনিক সভায় উপস্থিত থেকে এসব কথা বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এ প্রসঙ্গে প্রতিবেশী রাজ্য সিকিমকেও নিশানা করে মমতা বলেছেন, সিকিমে ১৪ টা হাইড্রেল পাওয়ার করা হয়েছে। ফলে ওখান দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে পারছে না। আর তার ফলে সব পানি এসে পড়ছে বাংলার বুকে। যে যার নিজের নিয়ে আছে। তারা একবার তো ভাববে? ওদের (সিকিম) আমরা ভালোবাসি। আমাদের কত পর্যটক ওখানে যায়। আপনারা এতগুলো বিদ্যুৎ প্রকল্প করলেন, সেখানে কেন্দ্রীয় সরকার কেনো অনুমতি দিল?
মমতার হুঁশিয়ারি, কেউ যদি মনে করে যে অপরের ওপরে নিঃশ্বাস ফেলবে, বাংলার বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে, তবে মনে রাখতে হবে তারা যেন নিজের রাজ্যকে (সিকিম) সামলায়। নিঃশ্বাস আমরাও ফেলতে পারি। আমরা মনে করি, প্রত্যেকটা বিষয়ের সীমাবদ্ধতা আছে, কারওই লক্ষণরেখা অতিক্রম করা উচিত নয়।
প্রসঙ্গত, আত্রাই নদী, বাংলাদেশ হয়ে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর হয়ে আবার বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এই নদীর তীব্র ভাঙন ও বন্যার কবল থেকে রাজ্যবাসীকে রক্ষার্থে ২০২২ সালে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাটের চকভৃগুতে বাঁধ নির্মাণ শুরু করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ২০২৪ সালে শেষ হয় সেই কাজ।
কিন্তু, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রথমবার সেই বাঁধের একাংশ ভেঙে পড়ে। বালির বস্তা দিয়ে তা মেরামতের কাজ চলছিল। কিন্তু গত ২০ মে ভোরের দিকে পানির তোড়ে বাঁধের প্রায় ৪০ ফুট অংশ ধসে পড়ে। বাঁধ ভাঙার পরেই শুরু হয় রাজনৈতিক চর্চা।
এর আগে ২০২৪ সালের ৫ মে, সরাসরি বাংলাদেশের বিরোধিতা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, বাংলাদেশ থেকে চূর্ণী নদী হয়ে পশ্চিমবঙ্গে ময়লা আসছে। কেন এ নিয়ে মোদী সরকার বাংলাদেশের সরকারকে বলছে না? আমি তো বাংলাদেশকে এ বিষয়ে নিজে অনেকবার বলেছি। ওরা আত্রাই নদীর ওখানে বাঁধ বানিয়েছে। যার কারণে পশ্চিবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট বাসিন্দারা গ্রীষ্মকালে পানীয় জল পায় না। তার কেনো বিচার হচ্ছে না? যত কিছু সাফার করবে বাংলার লোকেরা?
ভিএস/এসএএইচ