কলকাতা: বড়বাজারের হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখনও অবদি ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত ২৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার তদন্তে স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট) গঠন করেছে কলকাতা পুলিশ। তারমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বড়বাজারের ঋতুরাজ হোটেলে দাহ্য পদার্থ মজুদ ছিল। যার জেরে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল। গোটা ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী।
তবে পুলিশের মাথা ব্যথার কারণ ভিন্ন। তারা খুঁজছেন, মৃত বা আহদের মধ্যে কোনো বিদেশি বা বাংলাদেশি রয়েছে কিনা।
কারণ বিভিন্ন মাধ্যম দাবি করছে, ৫ আগস্টের পর বহু আওমীলীগ নেতা বা সমর্থক কলকাতায় অবস্থান করছে। পাশাপাশি সূত্র বলছে, তাদের অনেকের আর্থিক অবস্থা খারাপ হচ্ছে। যে কারণে তারা অনেকেই সস্তা হোটেলে থাকছে। এছাড়া, কলকাতায় এলে বহু বাংলাদেশি নাখোদা মসজিদ সংলগ্ন ঋতুরাজ হোটেলে অবস্থান করেন। যদিও ভারতীয় ভিসা নীতির কারণে এখন শহরে সে অর্থে বাংলাদেশি নেই। তবে পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে, ভারতীয় নাগরিকের পাশাপাশি কোনো বাংলাদেশি হতাহত হয়েছে কিনা?
এ বিষয়ে পুলিশ অফিসার সৌরভ দত্ত জানিয়েছেন, যে কয়েক জনের দেহ শনাক্ত করা গেছে তাদের মধ্যে কোনো বাংলাদেশি নেই। তবে বাদবাকি শনাক্তের কাজ চলছে। তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানান, এর বাইরে বিস্তারিত এখনি কিছু বলা যাবে না। অপরদিকে, হোটেলের রেজিস্ট্রার খাতায় এখনও পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশির নাম পাওয়া যায়নি। তবে বিভিন্ন মাধ্যমগুলো বলছে, অনেকেই নাম পরিবর্তন করে কলকাতায় বসবাস করতে পারে। সেক্ষেত্রে সত্য বের করেতে পারে একমাত্র প্রশাসন। এ বিষয়ে নজর রেখে চলেছে কলকাতাস্থিত বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনও।
এদিকে বুধবার(৩০ এপ্রিল) রাজ্যজুড়ে পালিত হচ্ছে অক্ষয় তৃতীয়া। পহেলা বৈশাখের মত এই পার্বণটিও বাংলাজুড়ে বড় করে পালিত হয়। তার উপর রাজ্যবাসীর বাড়তি পাওনা, সরকারি অনুদানে দীঘার সৈকতে জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধন। সেই উপলক্ষে গত দু’দিন ধরে দীঘায় রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রেখে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ১৪ জনের মৃত্যুর ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর বুধবার সকালেই শোকপ্রকাশ করেছে মুখ্যমন্ত্রী। দুঃখপ্রকাশ করে এক্স-এ মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। মৃতদের পরিবারের প্রতি আমাদের সমবেদনা, যারা আহত, তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি। ’
আজই দীঘার জগন্নাথ মন্দির দ্বারোদঘাটন হবে। কিন্তু রাতভর তিনি সেখান থেকেই এই বিষয়টির ওপর নজর রেখেছিলেন বলে জানান। রাতভর তিনি প্রশাসন ও দমকল বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ রেখেছেন বলে এক্স-এ জানান মমতা। এই ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
জানা যায়, ঋতুরাজ হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের সময় হোটেলের ৪২টি রুমে ৮৮ জন ছিলেন। যারমধ্যে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডে হোটেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বেশ কিছু গাফিলতির অভিযোগ সামনে আসছে। কলকাতা পুলিশ কমিশার মনোজ ভার্মা জানিয়েছেন, পলাতক হোটেল মালিকের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
অগ্নিকাণ্ডের সময় বন্ধ ছিল হোটেলের ইমার্জেন্সি দরজা। ইমার্জেন্সির দরজার পিছনে স্তুপ করে রাখা ছিল নির্মাণ সামগ্রী। আগুন লাগার পর পালিয়ে বাঁচার কোনও সুযোগেই পাননি কেউ-ই। হোটেলে ইটের গাঁথুনি দেওয়া অংশে ছিল রেস্তোরাঁ। সেই রেস্তোরাঁকে তিন মাস আগে পানশালায় রূপান্তরিত করা হয়। পানশালা করতে যে অনুমতি প্রয়োজন তাও নেওয়া হয়নি। আর সেই পানশালা তৈরি করতেই নির্মাণ সামগ্রী রেখে দেওয়া হয়েছিল ইমার্জেন্সি গেটের সামনেই। তাতেই বেরোতে পারেননি হোটেলের অবস্থান করা বাসিন্দারা। প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে পানশালা থেকেই দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল।
জানা গেছে, এই ঘটনায় শনাক্তকারী মৃতরা বিহারের বাসিন্দা। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার তরফে মৃতদের ২ লাখ রুপি করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছে।
ভিএস/এমএম