ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ভারত

রাজনীতিতে নামছেন পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় বিচারপতি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০২৪
রাজনীতিতে নামছেন পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় বিচারপতি

কলকাতা: ভারতের ভোটের বাজারে বাংলায় চমক আর রাজনৈতিক পরিস্থিতির পটভূমি পরতে পরতে পরিবর্তন হচ্ছে। একদা ভারতের প্রধান হাইকোর্ট তথা কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নাম লেখাতে চলেছেন রাজনীতিতে।

আগামী মঙ্গলবার তিনি বিচারপতির পদ থেকে ইস্তফা দেবেন।

রোববার (৩ মার্চ) এই বিচারপতি জানিয়েছেন, বৃহত্তর ক্ষেত্রে মানুষের স্বার্থে পেশাজীবন থেকে ইস্তফা দেবেন তিনি।

বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, আগামী ৭ মার্চ তাদের দলে যোগ দেবেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। এমনকি তিনি এবারের সংসদ ভোটে মেদিনিপুর জেলার তমলুক আসন থেকে বিজেপির টিকিটে প্রার্থীও হতে চলেছেন। যদিও এ বিষয়ে বিচারপতি প্রকাশ্যে কিছু বলেননি। ফলে সবটাই এখনও জল্পনা।

রোববার তিনি জানিয়েছেন, রাজনৈতিক ময়দানেই আমি যাব। কিন্তু কোন রাজনৈতিক দলের হয়ে আমি শুরু করব, সেটা আমি আজকে বলছি না। পশ্চিমবঙ্গে অনেকগুলো রাজনৈতিক দল আছে। সিপিআইএম আছে, কংগ্রেস আছে, বিজেপি আছে। এছাড়া ছোট ছোট অন্যান্য অনেক রাজনৈতিক দল আছে। তবে এদিন একবারও তৃণমূল কংগ্রেসের নাম নেননি বিচারপতি।

সংসদ ভোটে প্রার্থী হওয়ার বিষয় তিনি বলেছেন, সেটা আমার হাতে নেই। আমি যদি আদৌ কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দিই, তাহলে আমি নিশ্চিত বৃহত্তর ময়দানে নামব। আদালত ক্ষেত্রের বাইরে যে বহু মানুষ আছেন, তাদের কাছে পৌঁছানো যাচ্ছে না। রাজনীতি মানে তো একটা ক্ষমতা দখলের লড়াই। সে লড়াইয়ের গণতান্ত্রিক পদ্ধতি হচ্ছে নির্বাচন। সেই নির্বাচনে আমি যেতেও পারি। যেতেও পারি অর্থাৎ আমি নাও যেতে পারি।

ফলে তিন দলই এখন অধীর আগ্রহে যে, বিচারপতি কাকে বেছে নেন। বিচারপতিকে ‘ব্যতিক্রমী চরিত্র’ বলে অভিহিত করে তাকে কংগ্রেসে স্বাগত জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বাম এবং বিজেপিও। ৫ মার্চ পেশাজীবন থেকে ইস্তফা দেবেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তারপর তিনি কার ডাকে সাড়া দেন, তা ৭ মার্চ জানা যাবে।

তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে বিচারপতি বাংলার মানুষের মসিয়া হয়ে উঠেছেন। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে যে চরম দুর্নীতি হয়েছে, তা তিনিই প্রকাশ্যে এনেছিলেন। তার নির্দেশে কেন্দ্রের তদন্তকারী সংস্থা, সিবিআই পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত শুরু করে। এরপর তদন্তে একের পর এক নাম জড়াতে থাকে রাজ্যের নেতা মন্ত্রীদের।

২০২২ সালের ২২ জুলাই পশ্চিমবঙ্গে প্রথম গ্রেপ্তার হন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। উদ্ধার হয় তার ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর ফ্ল্যাট থেকে টাকার পাহাড়। তৃণমূলের আরেক বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে করা পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে। ২০২২ সালের ২০ জুন মানিক ভট্টাচার্যকে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেন তিনি। ২৭ সেপ্টেম্বর রাত আটটার মধ্যে মানিককে সিবিআই এর কাছে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুখোমুখি হওয়ার নির্দেশ দেন। সহযোগিতা না করলে সিবিআই তাকে হেফাজতে নিতে পারবেন বলে জানিয়ে দেন তিনি।

অবশেষে ১১ অক্টোবর শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট-ইডির হাতে গ্রেপ্তার হন মানিক ভট্টাচার্য।

এর পাশাপাশি বহু অযোগ্য শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ২০২২ সালের ২০ মে তৎকালীন রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতাকে শিক্ষিকার চাকরি থেকে বরখাস্ত করেন তিনি। পরে তার নির্দেশে সেই চাকরি পান ববিতা নামে এক যোগ্য প্রার্থী। ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর ভুয়া নিয়োগপত্র নিয়ে ১৮৩ জন শিক্ষকের নাম প্রকাশের জন্য শিক্ষা পর্ষদকে নির্দেশ দিয়েছিলেন এই বিচারক। সেইমতো তালিকা প্রকাশ করতে বাধ্য হয় শিক্ষা পর্ষদ।

২০২৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯১১ জন গ্রুপ ‘ডি’ কর্মীর চাকরি এবং ২০২৩ সালের ১০ মার্চ ৭৮৫ জন গ্রুপ ‘সি’ পদের চাকরির সুপারিশপত্র বাতিলের নির্দেশ দেন তিনি। সে বছর ১৬ মে একসঙ্গে ৩৬ হাজার ভুয়া শিক্ষক এবং শিক্ষিকার চাকরি বাতিল করেন বিচারপতি অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডি, সিবিআই এর মতন তদন্তকারী কর্তাদেরও রেয়াদ করেননি বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তদন্তকারী কর্তাদের একাংশের সম্পত্তির হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।

২০২৩ সালে কলকাতা হাইকোর্ট একটি বার্ষিক রিপোর্ট বই আকারে প্রকাশ করেছিলেন। যেখানে হাইকোর্টের বিচারপতিদের দেওয়া রায়ে সেরা বিচারপতির জায়গা করে নিয়েছিলেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এই বইতে সেরার সেরা তকমা পেয়েছিল তার একটি রায়। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তিনি যে কেন্দ্রীয় এজেন্সির তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন, সেই রায় যুগান্তকারী হিসেবে বিবেচিত হয়। কলকাতা হাইকোর্টের অন্যতম সেরা রায় হিসেবে অভিহিত করা হয়।

বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে খুশি ১১০০ দিন ধরে কলকাতায় অনশনরত যোগ্য শিক্ষার্থীরা। তাদের বলেন, আমাদের স্বার্থে, গরিব মানুষের স্বার্থে এবং বৃহত্তর স্বার্থে বিচারপতির মতো মানুষকে আদালতে বসে থাকলে চলবে না। রাস্তায় নামতে হবে। তবেই বাংলার মানুষ সুরাহা পাবে। তবে কোন রাজনৈতিক দলকে তিনি বেছে নেন, তা তার ব্যক্তিগত ব্যপার। বৃহত্তর স্বার্থে ভারতের শক্তিশালী দলকেই বেছে নেওয়া উচিত। তবে সেই দল যদি মনে করে, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো মানুষকে হাতের পুতুল বানিয়ে রাখবে, তাহলে তারা বড় ভুল করবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০২৪
ভিএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।