ঢাকা, বুধবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ মে ২০২৪, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

ভারত

শীতের মৌসুমে বাংলাদেশের নির্বাচনের উত্তাপ ছড়াচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩, ২০২৪
শীতের মৌসুমে বাংলাদেশের নির্বাচনের উত্তাপ ছড়াচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে

কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গে এখন শীতের মৌসুম। হিমালয়ের উত্তুরে হাওয়া বয়ে যাচ্ছে জনপদে।

সেজন্য এখন চায়ের কাপের টুংটাং বেড়েছে অলিতে-গলিতে। বেড়েছে গরম পিঠাপুলির বিকিকিনিও। জমিয়ে দেওয়া এই শীতে রাজ্যে উত্তাপ ছড়াচ্ছে বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গও। কলকাতাবাসীর চায়ের আড্ডার আলোচনার বিষয় ওপারের নির্বাচন। নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে কোন সরকার আসছে, সে দিকেই নজর কলকাতাবাসীর।  

শহরের নতুন প্রজন্মের অভিমত, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখে এমন কোনো প্রগতিশীল শক্তিই আসুক বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায়। আর কলকাতার ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, যে সরকারের মাধ্যমে দেশে পদ্মা সেতু, মেট্রো রেলসহ যোগাযোগ এবং যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি হচ্ছে, সে রকম সরকার আসুক বাংলাদেশে।

কলকাতার নতুন প্রজন্ম, যারা ১৯৭১ দেখেনি, মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, কোনোদিন যাদের বাংলাদেশের মাটিতে পা পড়েনি; সেসব তরুণ গোষ্ঠী বাংলাদেশকে চেনে খবরের কাগজ, বই কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তারাও খোঁজখবর রাখছে বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়ে।  

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সৌগত মনে করেন, প্রতিবেশী বাংলাদেশে নতুন সরকার যেন ধর্মনিরপেক্ষ হয় এবং গণতন্ত্র বজায় রাখে। যে কোনো ধর্মের মানুষ হোক না কেনো, সবাই যেন সমানভাবে থাকতে পারে, খেয়ে বাঁচতে পারে এবং করে খেতে পারে।

সৌগত আরও বলেন, কিছুদিন আগেও বাংলাদেশের জিডিপি ভারতকে ছাপিয়ে গিয়েছিল। সেটা একটা ভালো বিষয়। আমরা লক্ষ্য রাখছি সেখানে কীভাবে অবকাঠামো এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিনিয়ত উন্নত হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের ভোট। ফলে সেখানকার নাগরিকরাই বলতে পারবে তারা কী চাইছে? তারা কি উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে চাইছে নাকি অন্য কোনো এক্সপেরিমেন্ট করতে চাইছে, সেটা তারাই ভালো বলতে পারবে। কিন্তু আমি মনে করি বাংলাদেশে ধর্মান্ধতা যেন প্রশ্রয় না পায়। কারণ সেটা শুধু সেই দেশের নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় সমস্যা হবে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী শ্রীতমা বলেন, শুধু ভারতীয় না, একজন বাঙালি হিসেবেও অবশ্যই আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে প্রতিবেশী বাঙালিরা কী ধরনের সরকার গঠন করছে, সেদিকে লক্ষ্য রাখা। যদিও সেটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।

দুই দেশের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কতিপয় গোষ্ঠীর তৎপরতা প্রশ্নে দর্শনে মাস্টার্স করা তন্ময় বলেন, আমার মনে হয়, বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে ভারতের কাছে ছোট করার জন্যই বিরোধীদের চাল এটা। আপনি যদি ময়দানে নেমে বিষয়টা দেখেন, তাহলে বুঝতে পারবেন বাংলাদেশের মানুষ পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে যথেষ্ট ভালোবাসে। আমরাও একইভাবে তাদের পছন্দ করি। আমার পরিবারের সঙ্গে বাংলাদেশের শেকড় যুক্ত নয়। তবে আমার বাড়ির পাশে বহু মানুষ আছে, যারা একসময় শরণার্থী হয়ে চলে এসেছিল কলকাতায়। এর মধ্যে অনেকেই ফিরে যায়নি। তাদের কাছ থেকে বাংলাদেশের গল্প শোনা। বাংলাদেশকে চেনা। কোনোদিন তারা বদনাম করেনি। আমারও সেভাবে দেশটাকে চিনেছি। এরপরই বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে বাংলাদেশকে চেনা। একদিন অবশ্যই বাংলাদেশ দেখব। ফলে আমরা পশ্চিমবঙ্গবাসী চাইছি, বাংলাদেশের সেই সরকার আসুক যারা দুই বাংলার মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে।

অপর শিক্ষার্থী সম্রাট বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের যে আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে, ধর্মনিরপেক্ষ এবং গণতন্ত্র বজায় রেখেছেন, উন্নয়ন যাকে বলে, সেটা বর্তমান বাংলাদেশে হচ্ছে। আমার মনে হয় আগামী দিনে সেই সরকার আসুক, যে সরকার এই উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে পারবে।

কলকাতার মার্ক্যুইস স্ট্রিটের ব্যবসায়ীদের সিংহভাগ নির্ভরশীল বাংলাদেশিদের উপর। ভোট বলে এখন এই শহরে বাংলাদেশিদের আনাগোনা কম। সেখানকার ব্যবসায়ীরাও লক্ষ্য রাখছেন বাংলাদেশের নির্বাচনে।  

এমআরল্যান্ডের হোটেলের ম্যানেজার প্রীতম বলেন, গত পাঁচ বছরে বর্তমান বাংলাদেশে যে উন্নতি হয়েছে, সেটাই বজায় থাকুক আমরা আশা করব। বর্তমানে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটেছে। এছাড়া বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ উন্নতি অর্থাৎ পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, টানেল, নতুনভাবে রেল যোগাযোগ, বিমানবন্দরের উন্নয়ন ঘটেছে। সেই উন্নয়নের ধারা যে সরকার বজায় রাখবে তেমন সরকার আমরা চাইছি।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০২৪
ভিএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।