ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে ঐতিহাসিক ধর্মীয় স্থানগুলো

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৬
সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে ঐতিহাসিক ধর্মীয় স্থানগুলো

ইসলাম বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্ম। তবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজির স্থাপন করে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা বসবাস করে আসছে।

বাংলাদেশে রয়েছে প্রচুর ঐতিহাসিক ধর্মীয় স্থাপনা। যেগুলোর আকর্ষণ বাংলাদেশে সীমানা ছাড়িয়ে বর্হিবিশ্বেও ছড়িয়ে পড়েছে। তাই ঐতিহাসিক ওইসব স্থাপনা দেখতে প্রচুর বিদেশি পর্যটক বাংলাদেশে ভ্রমণ করে থাকেন। সে হিসেবে বলা যায়, ওইসব স্থান সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে।
 
হালনাগাদ সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও এটা অনেকটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, বাংলাদেশে ধর্মীয় স্থানে ভ্রমণে আগ্রহী পর্যটকের সংখ্যা কম নয়। মানবতার ধর্ম ইসলামেও পর্যটনের প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। রয়েছে ইসলামে ভ্রমণের নির্দেশনা। ইসলাম মনে করে, ভ্রমণ হতে পারে ইবাদত, বিনোদন বা ব্যবসার উদ্দেশ্যে।
 
ভ্রমণকে বলা হয় জ্ঞানসমুদ্রের সন্ধান। হাজারো কর্মব্যস্ততার মাঝে শরীর ও মনের সুস্থতার জন্য এবং জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্যে, ছোট-বড়, ধনী-গরিব, ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে দেশ ভ্রমণ প্রতিটি মানুষের জন্যই প্রয়োজন।
 
আল্লাহতায়ালার সৃষ্টি বিস্ময়কর। তিনি কত রূপে, কত আঙ্গিকে এই সুন্দর পৃথিবীকে সৃষ্টি ও সুসজ্জিত করেছেন এর বর্ণনা দেওয়া দুরূহ। তার অপরূপ সৃষ্টিকে স্বচক্ষে দেখার জন্য তিনি মানুষকে ভ্রমণের আদেশ দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আপনি বলুন, (হে প্রিয় হাবীব) তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করো এবং দেখ, কীভাবে সৃষ্টিকর্ম শুরু করেছেন। তারপর আল্লাহ পুনরায় সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম। ’ সূরা আনকাবুত : ২০
 
পবিত্র হজ ও ওমরা পালনের জন্য সম্পাদিত ভ্রমণকে সর্বোত্তম ভ্রমণ বলে অভিহিত করা হয় ইসলামে। এরপর দ্বীনের দাওয়াত, ইলমে দীন শিক্ষা, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা ও দ্বীনি ভাইদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ ইত্যাদির উদ্দেশ্যে সফর করাকেও সওয়াবের কাজ বলা হয়েছে। তবে কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে সফর করার অনুমতি ইসলামি শরিয়ত প্রদান করেনি। যেমন হারাম কিংবা নিষিদ্ধ ব্যবসার উদ্দেশ্যে সফরসহ কোনো অসৎ কাজ, অশ্লীল বিনোদন ও ফাসাদ সৃষ্টি ইত্যাদির উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করা নিষিদ্ধ।
 
আল্লাহর লীলা রহস্য বড় অপূর্ব। আল্লাহর এই সুন্দর সৃষ্টি মানুষকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে, যা দেখে নয়ন জুড়াবে, হৃদয় শান্ত হবে, জ্ঞান বাড়বে এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতায় মাথানত হয়ে আসবে। আল্লাহর এসব কুদরত, নিয়ামত, নিদর্শন লিখে বা বলে শেষ করা যাবে না। এসব দেখে মানুষ চিন্তা ও গবেষণা করবে। দৃঢ় করবে ঈমান ও আমলকে। ভূমণ্ডল ও নভোমণ্ডলের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালাকে জানতে হলে, বুঝতে হলে ভ্রমণ করতে হবে। ভ্রমণ জ্ঞানের দরজা খুলে দেয়, মনের সঙ্কীর্ণতা দূর করে, মনে প্রশান্তি আনে।
 
এ ছাড়া ভ্রমণের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের অধিবাসী ও সম্প্রদায়ের সঙ্গে পরস্পর সেতুবন্ধন রচিত হয়। পারস্পরিক সহনশীলতা, সামাজিক রীতি-নীতি, সাংস্কৃতিক ভাব, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং অর্থনৈতিক চিন্তাধারা নিয়ে নানা জ্ঞান আদান-প্রদানের সুযোগ ঘটে।
 
বাংলাদেশ সরকার ২০১৬ সালকে পর্যটন বছর হিসেবে ঘোষণা করেছে। এ ঘোষণার উদ্দেশ্য হলো, বিশ্বের অন্যতম পর্যটন গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলা। চলমান এ কর্মসূচিতে প্রচুর পর্যটক বাংলাদেশে আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
 
তাদের কাছে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ধর্মীয় স্থানগুলোকে সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে উপস্থাপন করা যেতে পারে। শুধু ঢাকাতেই এমন প্রচুর ঐতিহাসিক মসজিদ রয়েছে, যেগুলো পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়।
 
রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমজিদ বায়তুল মোকাররমের অবস্থান। ঐতিহাসিক স্থাপনা ও ঐতিহ্যে এ মসজিদের অবস্থান শীর্ষে। এ ছাড়াও ঢাকার নামকরা আরও বেশ কিছু মসজিদ রয়েছে। সেগুলো হলো-
 
লালবাগ শাহী মসজিদ, বেগম বাজার শাহি মসজিদ, গুলশান আজাদ মসজিদ, কসাইটুলি মসজিদ, খান মোহাম্মদ মির্ধা মসজিদ, হাইকোর্ট মাজার মসজিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ, মোহাম্মদপুর সাতমসজিদ, তারা মসজিদ, মুসা খাঁ মসজিদ, লালবাগ দুর্গ মসজিদ, বিনত বিবির মসজিদ, কারওয়ান বাজারের আম্বরশাহ মসজিদ ও গোলাপ শাহ মসজিদসহ অসংখ্য মসজিদ।
 
ঢাকার বাইরে অনুপম ও আকর্ষণীয় স্থাপত্যরীতির মসজিদগুলোর মধ্যে রয়েছে বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ, টাঙ্গাইলের আতিয়া মসজিদ, বরিশালের বায়তুল আমান মসজিদ, চট্টগ্রামের চন্দনপুরা মসজিদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সোনা মসজিদ, নোয়াখালীর বজরা শাহি মসজিদসহ অসংখ্য মসজিদ।
 
মসজিদ ছাড়া বিখ্যাত মাজার ও দরগার মাঝে রয়েছে সিলেটে হজরত শাহজালালের মাজার ও হজরত শাহ পরানের মাজার। চট্টগ্রামে হজরত বায়েজিদ বোস্তামির মাজার ও হজরত শাহ আমানতের দরগা শরিফ। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর সুফি-দরবেশদের মাজার ছড়িয়ে আছে। এসব দরবারে সারা বছর বিভিন্ন ধর্মীয় মাহফিল হয়, যেখানে লাখ লাখ মানুষ একত্রিত হয়। সেখানেও প্রচুর পরিমাণের বিদেশি আগমন করে থাকেন।
 
বাংলাদেশের অপূর্ব সুন্দর শিল্প অনুপম স্থাপত্যের নিদর্শন, যা দেশ-বিদেশের বহু পর্যটককে আকৃষ্ট করতে সক্ষম। ধর্মীয় উৎসব এ দেশের অস্তিত্বের সঙ্গে মিশে আছে, যা বিদ্যমান পর্যটন আকর্ষণের সঙ্গে নতুন মাত্রা যোগ করে অধিক পর্যটক আকৃষ্ট করতে পারে।
 
এই বাংলাদেশ প্রতি বছর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ বিশ্ব ইজতেমা টঙ্গির তুরাগ তীরে অনুষ্ঠিত হয়। এ বিশ্ব ইজতেমায় সারা দেশের লাখো মুসল্লির সঙ্গে পৃথিবীর প্রায় শতাধিক দেশের বিদেশি মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন।
 
বাংলাদেশের অন্যান্য ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে রয়েছে ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, রমজান মাস, শবে বরাত, শবে কদর ও আশুরাসহ বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিল। এ সব ধর্মীয় উৎসবই যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে আনন্দ উদ্দীপনার সঙ্গে পালন করা হয়, যা পর্যটকদের এদেশের সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী করে তোলে।
 
ধর্মীয় কারণ ও ধর্মীয় স্থাপনাগুলোতে বিদেশি পর্যটকদের আগমনের এ ধারা যেন বজায় থাকে সে লক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।
 
পর্যটনের যাবতীয় প্রচারাভিযানে ঐতিহ্যমণ্ডিত ও ধর্মীয় স্থাপনাগুলোকেও গুরুত্ব সহকারে উপস্থাপন করতে হবে। তবেই বিশ্ববাসীর কাছে পর্যটন শিল্পের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নাম জ্বলজ্বল করবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৬
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ