ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

একাত্তর

রেলের শহর সৈয়দপুরে প্রথম স্বাধীনতার পতাকা উড়েছিল ১৮ ডিসেম্বর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২৩
রেলের শহর সৈয়দপুরে প্রথম স্বাধীনতার পতাকা উড়েছিল ১৮ ডিসেম্বর

নীলফামারী: ১৮ ডিসেম্বর। একাত্তরের এ দিনে উত্তরের রেলের শহর নীলফামারীর সৈয়দপুরে প্রথম স্বাধীনতার পতাকা ওড়ানো হয়।

 

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় হলেও এ শহরটি হানাদার মুক্ত হয় ১৮ ডিসেম্বর। গোটা দেশ হানাদার মুক্ত হওয়ার পরও অবাঙালিরা অবরুদ্ধ করে রাখায় সৈয়দপুরে কোনো মুক্তিযোদ্ধা ঢুকতে পারেননি। এ দিনে নীলফামারী জেলার সীমান্ত এলাকা হিমকুমারী ক্যাম্প থেকে মুক্তি বাহিনী ও মিত্র বাহিনী যৌথভাবে ঢোকে  সৈয়দপুর শহরে। সেই সঙ্গে পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে ঢুকে পড়েন শহরে কয়েক হাজার লোক। শহরের পৌরসভা ভবনে ও অস্থায়ী আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ওড়ানো হয় জাতীয় পতাকা।

স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও সৈয়দপুরে কতজন শহীদ হয়েছেন- এর কোনো সঠিক হিসাব নেই। তবে বিভিন্ন সূত্র মতে, এ সংখ্যা সাড়ে চার হাজারের বেশি। অনেকে বলেন, সৈয়দপুরে ৪০ হাজার বিহারির অন্তত ১০ থেকে ১৫ হাজার যুদ্ধাপরাধী বলে স্বীকৃত। অথচ এখানে যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকারেরও কোনো তালিকা তৈরি হয়নি। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কোনো কমিটিই এটি করতে পারেনি। আর এর পেছনের কারণ হচ্ছে, স্থানীয় নেতাদের ভোটের রাজনীতি।

১৯৭১ এর ১৩ জুন শহরের গোলাহাট এলাকায় নির্মমভাবে হত্যা করা ৪৪৭ নারী-পুরুষকে। শহরের একমাত্র স্টেডিয়ামের অভ্যন্তরে ওই সময়ে অবাঙালিদের বসবাসের কারণে বিভিন্ন জায়গা থেকে বাঙালিদের হত্যা করে সেখানেই মাটি চাপা দেওয়া হয়। তবে আজও ওই স্থানটি চিহ্নিত করা হয়নি, নির্মাণ করা হয়নি কোনো স্মৃতিস্তম্ভ। গোলাহাটে স্থানীয় উদ্যোগে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হলেও সৈয়দপুর স্টেডিয়াম গণহত্যার স্থানটি মুছে যাচ্ছে স্বাধীনতার ইতিহাস থেকে।  

নারীদের গোলাহাট আস্তানা-ই-হক বিল্ডিংয়ে নিয়ে গিয়ে সম্ভ্রমহানি করা হতো। স্বাধীনতার পর ওই নারীদের আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় আরও ভয়ংকর হত্যাযজ্ঞ চালায় পাকি সেনারা। কারখানার বয়লার শপে (উপ-কারখানা) জীবন্ত নিক্ষেপ করে পুড়িয়ে মারা হয় ৩০০ বাঙালিকে। শহরের প্রবেশ মুখগুলোকে বানানো হয় কিলিং স্পটের খরচা খাতা।

অবশেষে ১৮ ডিসেম্বর ভারতের হিমকুমারী ক্যাম্প থেকে মুক্তি বাহিনী ও মিত্র বাহিনী যৌথভাবে সৈয়দপুরে আক্রমণ করলে অবাঙালি ও হানাদাররা পিছু হটতে বাধ্য হয়। আর ওই দিনই সৈয়দপুর হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হয়। এ বিজয়ে মুক্তিপাগল হাজার হাজার মানুষ গ্রাম থেকে শহরে চলে আসেন।  

সেদিন সৈয়দপুরে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী আওয়ামী লীগ নেতা কাজী ওমর আলী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের নেতৃত্বে শহরে আনন্দ মিছিল হয়। নেতৃবৃন্দ প্রথম সৈয়দপুর পৌরসভা কার্যালয়ে ও আওয়ামী লীগ অফিসে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।

দিবসটি স্মরণে রাখতে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড, প্রজন্ম ৭১, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যৌথভাবে বিজয় র‌্যালি, আলোচনা সভা ও সংস্কৃতি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২৩
এসআই


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।