ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ২৩ রবিউস সানি ১৪৪৭

সারাদেশ

সৌদিতে নিখোঁজ হওয়ার ১৫ দিন পর মরুভূমিতে মিলল অর্ধগলিত লাশ

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১:১৮, অক্টোবর ১৫, ২০২৫
সৌদিতে নিখোঁজ হওয়ার ১৫ দিন পর মরুভূমিতে মিলল অর্ধগলিত লাশ সৌদি আরবে নিহত সবুজের স্বজনের আহাজারি ইনসেটে সবুজ

মাদারীপুর: সৌদি আরবে যাওয়ার আট মাস পর ১৫ দিন ধরে নিখোঁজ ছিল মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার মানিকপুর এলাকার যুবক সবুজ মাতুব্বর (২৪)। এরপর গত সোমবার (১৩ অক্টোবর) মরুভূমিতে বালু ও পাথর চাপা দেওয়া তার লাশ উদ্ধারের খবর আসে বাড়িতে।

মরুভূমিতে পাওয়া অর্ধগলিত লাশের চেহারা চেনা না গেলেও পরিচিতরা শনাক্ত করেন হতভাগ্য যুবক সবুজকে। বাড়িতে খবর এলে শোকের মাতম ওঠে অসহায় পরিবারে।

স্বজনরা জানান, ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় আট মাস আগে সৌদি আরব যান সবুজ। প্রথমে রিয়াদে ও পরে কাজের খোঁজে আল কাসিম এলাকায় থাকা শুরু করেন তিনি। পেয়ে যান কাজও। স্বল্প সময়ে দিন ভালোই যাচ্ছিল। ভ্যান চালক বাবা ধার-দেনা করে টাকা জোগাড় করে পাঠিয়েছিলেন সৌদি আরব। স্বপ্ন ছিল দেনা পরিশোধের পর বিদেশ থেকে পাঠানো টাকায় নতুন ঘর তুলবেন। স্বচ্ছল জীবন-যাপন করবেন। তবে সেই স্বপ্ন নিমিষেই দুঃস্বপ্নে পরিণত হলো। সবুজ কাদিরপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মানিকপুর এলাকার মেছেরমোল্লার গ্রামের আব্দুল জলিল মাতুব্বরের একমাত্র ছেলে।

জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বর মাসের ২৯ তারিখ বাংলাদেশ সময় রাত ৮টার দিকে ছেলের সঙ্গে কথা হয় বাবা জলিল মাতুব্বরের। বাড়িতে মিলাদ পড়ানোর জন্য টাকা পাঠানোর কথা বলে ফোন রাখেন। ১ তারিখ সকালে টাকা পাঠানোর কথা ছিল। টাকা না আসায় ওই দিন দুপুরে ফোন দিলে ছেলের নম্বর বন্ধ পান। পরে আবার চেষ্টা করেন। অথচ নম্বর বন্ধই থাকে। এভাবে একদিন পার হবার পর উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন বাড়িতে থাকা বাবা-মা। এরপর সৌদিতে থাকা অন্যদের কাছ থেকে খবর পান ১ তারিখ সকালে বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি সবুজ! এদিকে গত সোমবার (১৩ অক্টোবর) আল কাসিম এলাকায় মরুভূমিতে বালু ও পাথর চাপা দেওয়া এক যুবকের লাশ খুঁজে পায় সৌদি পুলিশ। লাশটি সবুজের বলে ধারণা করে সেখানে থাকা অন্য বাঙালিরা। এ খবর বাড়িতে পৌছালে শোকের মাতম শুরু হয়।

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে সরেজমিনে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীদের ভিড় বাড়ির আঙিনাজুড়ে। উঠানে বিছানো মাদুরে নির্বাক চোখে বসে আছেন বাবা-মা। কিছুক্ষণ পর পর ঢুকরে কেঁদে উঠছেন তারা। কান্না ছুঁয়ে গেছে পাড়া-প্রতিবেশীদেরও।  

জানতে চাইলে নিখোঁজ সবুজের চাচা খোকন মাতুব্বর বলেন, 'প্রায় ১৫ দিন ধরে নিখোঁজ। নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি সৌদি পুলিশকেও জানানো হয়। গতকাল সোমবার সবুজ যেখানে থাকতো তার কাছেই নির্জন মরুভূমিতে বালু আর পাথর চাপা লাশ পায় পুলিশ। লাশ নষ্ট হয়ে গেছে। তবে সবুজ যে প্যান্ট ও গেঞ্জি গায়ে বাসা থেকে বের হয়েছিল, ওই পোশাক দেখে আশপাশে থাকা পরিচিতরা বুঝতে পারে লাশটি সবুজের! আমার ভাই ভ্যান চালিয়ে কষ্ট করে উপার্জন করে। তার একটাই ছেলে। ঋণ করে টাকা জোগাড় করে সবুজকে সৌদি পাঠায়ছিল!'

সবুজের ছোট বোন রিয়ামনি আক্তার বলেন, আমার ভাইর কাছে ৩ লাখ টাকা ছিল। আকামা করার জন্য রাখছিল। ওই টাকার জন্যই আমার ভাইরে মাইরা ফালাইছে।

প্রতিবেশী মান্নান ফকির বলেন, পরিবারটি খুবই দরিদ্র। ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। এখন ছেলের মৃত্যুর খবরে ভেঙে পড়েছে। লাশ আনার টাকা-পয়সা নাই। যাওয়ার সময় ওর কাছে প্রথম আকামা করার টাকা ছিল। প্রায় তিন লাখ টাকা। ধারণা করা হচ্ছে টাকার জন্যই সবুজকে হত্যা করা হয়েছে। যাদের সঙ্গে থাকতো হয়তো তারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। '

নিহতের বাবা জলিল মাতুব্বর বলেন, বাড়িতে ১০ হাজার টাকা পাঠাইতে চাইছিল। আমার সঙ্গে ওইটাই শেষ কথা। এতোদিন নিখোঁজ ছিল। গতকাল ওখানে লাশ পাইছে। সৌদি থেকে জানাইছে লাশ সবুজের! আমরা এখন কি করমু?'

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এইচএম ইবনে মিজান বলেন, আমরা খোঁজ খবর নেব। যতটুকু পারি পরিবারটিকে সহযোগিতা করবো। লাশ আনার বিষয়ে পরিবার সহযোগিতা চাইলে নিয়ম অনুযায়ী সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। '

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।