রাঙামাটি: পাহাড়ের মৌসুমি ফলের কদর রয়েছে সারা দেশে। এসব ফল ফরমালিনমুক্ত এবং বেশি সুস্বাদু হওয়ায় পুরো দেশে আলাদা চাহিদা রয়েছে।
এ অঞ্চলে উৎপাদিত ফল জেলার চাহিদা মিটিয়ে জেলার বাইরেও সরবরাহ করা হয়। ফলের মৌসুম চলাকালে জেলার বাইরে থেকে আসা ব্যবসায়ীরা এ অঞ্চলের ফল সংগ্রহ করে নিজেদের এলাকায় নিয়ে চড়া দামে বিক্রি করেন।
পার্বত্য জেলা রাঙামাটির হাটবাজারগুলো এখন মৌসুমি ফলে সয়লাব। পাকা ফলের মৌ মৌ গন্ধে চারদিক মাতোয়ারা। স্থানীয় ক্রেতারা এসব মৌসুমি পাকা ফল সাধ এবং সাধ্যের মধ্যে কিনে খাচ্ছেন।
পর্যটকরাও ঘোরাঘুরির পাশাপাশি স্থানীয় হাটবাজারে গিয়ে ফরমালিনমুক্ত পাকা আম, কাঁঠাল, আনারস কিনে খান। অনেক পর্যটক আবার আপনজনদের জন্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন পাহাড়ি ফল।
রাঙামাটি শহরের কলেজ গেট, বনরূপা, তবলছড়ি বাজারে প্রতিদিন জমে উঠছে মৌসুমি ফলের হাটবাজার। কাপ্তাই হ্রদ মাড়িয়ে বিভিন্ন উপজেলা থেকে চাষিরা ফল নিয়ে আসেন জেলা শহরের হ্রদের ভাসমান হাট সমতাঘাট, পৌর ট্রাক টার্মিনাল এবং ফিসারি ঘাট এলাকায়। ব্যবসায়ী এবং ক্রেতারা এসব ঘাট থেকে মূলত স্থানীয় পাকা মৌসুমি ফলগুলো সংগ্রহ করে থাকেন। এসব ভাসমান হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা, চাষি, শ্রমিকদের মিলনমেলা ঘটে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ভাসমান হাটগুলোতে কর্মব্যস্ততা দেখা যায়।
স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকেই বাজারে পাকা মৌসুমি ফলের সরবরাহ শুরু হয়। মে মাস থেকে মৌসুমি ফলে ভরে যায় হাটবাজারগুলো।
স্থানীয় হাটবাজাগুলোতে গিয়ে জানা যায়, পাহাড়ি আম্রপালি বিক্রি করা হচ্ছে কেজি প্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় এবং রাংগুয়াই জাতের আম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে। পাকা কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে পিস প্রতি বড় ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায় এবং মাঝারি-ছোটগুলো ৫০ টাকা থেকে ৮০ টাকায়। আনারস জোড়া বিক্রি হচ্ছে বড়গুলো ১০০ টাকায় এবং মাঝারি-ছোটগুলো ২০ টাকা থেকে ৫০ টাকায়।
সমতাঘাটে আসা ফল ব্যবসায়ী মো. কাওসার বলেন, এখানকার উৎপাদিত ফল কিনতে এসেছি। প্রায় ২৪ হাজার টাকার আম, কাঁঠাল, আনারস কিনেছি। দাম এবার একটু বেশি মনে হলো। আরও কিনব। এরপর এগুলো চট্টগ্রামে নিয়ে যাব। আশা করছি, লাভ করতে পারব।
একই ভাসমান হাটে আসা নানিয়ারচর উপজেলার কৃষক হৃদয় চাকমা বলেন, আম, আনারসের দাম পেলেও কাঁঠালের দাম পাচ্ছি না। বৃষ্টি বাড়লে কাঁঠালের দাম পাবো হয়তো।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছর রাঙামাটি জেলায় তিন হাজার ৬২৮ হেক্টর জমিতে আম, তিন হাজার ৩৭৩ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল, ১৯ হাজার তিন হেক্টর জমিতে লিচু এবং দুই হাজার ৫৩৭ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয়েছে। এ চারটি মৌসুমি ফল থেকে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে দুই লাখ ১০ হাজার ৭৭০ মেট্রিক টন।
কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, এবার আগাম বৃষ্টির কারণে ফলন তুলনামূলক ভালো হয়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় আম ও লিচুর ফলন কিছুটা কম। তবুও বাজারে এসব ফলের ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি বছর এখানে যে ফল উৎপাদিত হয়, তার আর্থিক মূল্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। আশা করি, এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।
এসআই