ঢাকা, শনিবার, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৪ জুন ২০২৫, ১৭ জিলহজ ১৪৪৬

সারাদেশ

কাপ্তাই হ্রদে পলি জমে কমছে মাছের প্রজনন ক্ষেত্র ও উৎপাদন

মঈন উদ্দীন বাপ্পী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯:৫২, জুন ১২, ২০২৫
কাপ্তাই হ্রদে পলি জমে কমছে মাছের প্রজনন ক্ষেত্র ও উৎপাদন কাপ্তাই হ্রদ

রাঙামাটি: দেশের অন্যতম বড় কৃত্রিম মিঠা পানির জলাশয় রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে মাছের উৎপাদন বাড়াতে রেনু উৎপাদন ও পোনা মাছ ছাড়ছে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি)।  
 
তবে হ্রদে পলি জমায় মাছের প্রজনন ক্ষেত্রগুলো দিনদিন সংকুচিত হয়ে আসছে, দিন দিন কমছে মাছের উৎপাদন।

মাছের উৎপাদন বাড়াতে কাপ্তাই হ্রদের টেকসই ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী মাস্টারপ্ল্যান, এমন দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
 
কাপ্তাই হ্রদে মাছের উৎপাদন, আহরণ ও বাজারজাতকরণের দায়িত্ব বিএফডিসির ওপর। প্রতিবছর বর্ষায় কাপ্তাই হ্রদে মা মাছ প্রাকৃতিকভাবে ডিম ছাড়লেও পলি ভরাটের কারণে কাপ্তাই হ্রদ ভরাট হয়ে যাচ্ছে, সংকুচিত হচ্ছে মাছের প্রজননক্ষেত্রগুলো। যে কারণে হ্রদে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে, কমছে মাছের উৎপাদন।
 

এ অবস্থায় হ্রদে মাছের উৎপাদন বাড়াতে ২০১৭ সাল থেকে লংগদুর মারিশ্যাচর হ্যাচারিতে রেনু উৎপাদন ও স্থানীয় পুকুরে পোনা প্রতিপালন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বিএফডিসি। চট্টগ্রামের হালদা নদী ও কাপ্তাই হ্রদের রুই জাতীয় মা মাছ এনে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে হ্যাচারিতে রেনু উৎপাদন করে মাছের পোনা প্রতিপালন করা হচ্ছে স্থানীয় পুকুরে।
 
হ্যাচারির কর্মীদের ভাষায়, রেনুগুলোকে সাইফনিং পদ্ধতিতে হ্যাচিং জার থেকে নামিয়ে ঘূর্ণায়মান পানিতে রাখা হয়। এরপর ডিমের কুসুম, সিভিট, ওরস্যালাইন খাওয়ানোর পর একদিনের মধ্যে পুকুরে ছাড়া হয়।
 
বিএফডিসি রাঙামাটির ফিশ কালচারিস্ট মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, আমরা চেষ্টা করছি, ইনব্রিডিং মুক্ত, দ্রুত বর্ধনশীল এবং রোগ প্রতিরোধী রেনু উৎপাদন করতে। তবে পুকুরের স্বল্পতার কারণে উৎপাদন সীমিত হচ্ছে।
 
বিএফডিসি রাঙামাটির ম্যানেজার কমান্ডার (নৌবাহিনী) মো. ফয়েজ আল করিম বলেন, কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের উৎপাদন বাড়াতে বিএফডিসির পোনা ছাড়ছে। বিএফডিসির হ্যাচারিতে রেনু উৎপাদন চলছে। তবে পোনা প্রতিপালনে পুকুর সংকটের কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কিছুটা সময় লাগছে।  
 

ম্যানেজার আরও বলেন, চলতি বছর কাপ্তাই হ্রদে প্রায় ৬০ মেট্রিক টন কার্প জাতীয় পোনা মাছ ছাড়া হবে। ভবিষ্যতে ১০০ মেট্রিক টন পোনা উৎপাদন ও ছাড়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।  
 
কাপ্তাই হ্রদে গত ১ মে থেকে তিন মাস মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা চলছে। হ্রদে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ও বংশবৃদ্ধির জন্য কার্প জাতীয় মাছ সংরক্ষণের জন্য এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন ও বিএফডিসি।
 
এ সময়ে হ্রদে মাছ ধরা, পরিবহন এবং বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু তা সত্ত্বেও কাপ্তাই হ্রদের নদী-খাল-বিল পলিতে ভরাট হয়ে মাছের প্রজননক্ষেত্র বিনষ্ট হচ্ছে।
 
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাছের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি হ্রদের টেকসই ব্যবস্থাপনায় সরকারের দীর্ঘমেয়াদী মাস্টারপ্ল্যান প্রয়োজন। তা না হলে কাপ্তাই হ্রদের মাছ উৎপাদন ক্ষমতা আগামীতে মারাত্বকভাবে করার আশঙ্কা রয়েছে।
 
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।