ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৩ জুন ২০২৫, ০৬ জিলহজ ১৪৪৬

সারাদেশ

জাতীয় পার্টিতে কোনো চাঁদাবাজ খুঁজে পাবেন না: হাবুল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:০৮, জুন ১, ২০২৫
জাতীয় পার্টিতে কোনো চাঁদাবাজ খুঁজে পাবেন না: হাবুল

বরিশাল: জাতীয় পার্টি শান্তিপ্রিয় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, এ জাতীয় পার্টিতে কোনো সন্ত্রাসী খুঁজে পাবেন না, এ জাতীয় পার্টিতে কোনো লুটেরা, চাঁদাবাজদের খুঁজে পাবেন না।

রোববার (১ জুন) দুপুর ২টায় বরিশাল প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টি বরিশাল মহানগরের আহ্বায়ক ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম হাবুল এ কথা বলেন।

এ সময় তিনি আরও বলেন, আমাদের চেয়ারম্যান জিএম কাদের পরিচ্ছন্নভাবে কথা বলেন। ফ্যাসিবাদী সরকার যখন প্রতিষ্ঠিত ছিল, তখন জিএম কাদেরের মতো লোক পার্লামেন্টে এবং বাইরে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন। এমনকি বিএনপি জামায়াতও এমন সমালোচনা করেনি।

বরিশালে জাতীয় পার্টির নেতাদের ওপর হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার রংপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যান। সেখানে তার বাসভবনে হামলার ঘটনা ঘটলে, সারা জাতি হতভম্ব হয়। আর ওই হামলার প্রতিবাদে সারাদেশ ব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার বিকেলে বরিশাল নগরের ফকিরবাড়ি রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর আমরা সহজ-সরল মন নিয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে সদর রোডের দিকে যাই। তখন পেছন থেকে কাপুরুষের মতো কিছু দুর্বৃত্ত এবং টোকাই প্রকৃতির লোক লাঠিসোঁটা এবং দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মিছিলের শেষভাগে হামলা করে। পেছন থেকে হামলার ফলে আমাদের জাতীয় পার্টির অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছে, এরপর আমরা ঘুরে দাঁড়িয়ে হামলাকারীদের প্রতিহত করার জন্য এগিয়ে গেলে তারা বিভিন্ন দিকে দৌড়ে ছুটে যায়। ফলে ওইসময় হামলাকারীদের আমরা চিহ্নিত করতে পারিনি।

তিনি বলেন, বরিশালের জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আমরাই কথা বলেছি, আমরা রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি কিন্তু আমাদের ওপর তখনও বর্বরোচিত হামলা হয়নি। অথচ ফ্যাসিবাদ উত্তরণের পর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের চেয়ে দুর্দান্ত ভয়ানক একটি ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা কায়েমের লক্ষে একটি চক্র বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবির্ভূত হয়েছে। মব জাস্টিসের নামে যা হচ্ছে তা সবাই জানেন। একটি ভয়ানক অবস্থার মধ্য দিয়ে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে।

হাবুল বলেন, আমরা আশা করেছিলাম এ সরকার আসার পর দল নিরপেক্ষ একটি জাতীয় নির্বাচন হবে। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ যাকে ভোট দেবে সে সরকার গঠন করবে। সে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বর্তমান সরকার আরও তাদের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছে। অথচ দেশ আজ রসাতলের দিকে যাচ্ছে, আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি ভালো না, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি আছে। সে সঙ্গে বিদেশি আগ্রাসন, ১৯৭১ সালের পর আমরা দিল্লির ছায়ার মধ্যে ছিলাম, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের মধ্য দিয়ে দিল্লির ছায়াকে আমরা উৎখাত করতে সক্ষম হয়েছিলাম, রক্ত দিয়েছিলাম। বহু ছাত্র-জনতা এখনও আহত হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছে সেদিকে কারও কোনো খেয়াল নেই।  আমি মনে করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদসহ ইউরোপিয়ান কান্ট্রির একটি লোভনীয় দৃষ্টি আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিতে আছে। আছে বলেই এ সরকার পোর্ট দিয়ে দেওয়ার কথা বলছে, করিডোর দিয়ে দেওয়ার কথা বলছে এবং সেন্টমার্টিনকে আগেই অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, ২৪ এর গণ অভ্যুত্থানের সঙ্গে আমরা সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলাম। বরিশালেও আমরা সরাসরি জড়িত থেকেছি কিন্তু কি কারণে আজ জাতীয় পার্টিকে ফ্যাসিবাদের দোসর বলে আমি রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে বুঝতে পারছি না। অথচ এনসিপি নামে যে রাজনৈতিক সংগঠনের জন্ম হয়েছে, তাদের যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা একসময় ছাত্রলীগ করেছে, গণ অধিকার পরিষদের যিনি ভিপি নুরুল হক নুর তিনিও ছাত্রলীগ করেছে। তারা আজ জাতীয় পার্টিকে বলছে আমরা নাকি আওয়ামী লীগ বা ফ্যাসিবাদের দোসর।

হাবুল বলেন, স্পষ্ট করে বলতে চাই আমরা ফ্যাসিবাদ এবং আওয়ামী লীগের দোসর নই, আমরা গণতান্ত্রিক একটি রাজনৈতিক দল, আমরা জাতীয় পার্টি করি আমাদের নেতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের আদর্শ নিয়ে। আমরা হতবাক হয়ে গেলাম আমাদের নির্দয় ভাবে মারলো, তারপর আবার নাকি আমাদের নামে তারাই মামলা দিলো। মারলোও তারা মামলাও দিলো তারা। এরপর আমরা যখন চলে তারপর রাতের আধারে ফকিরবাড়ি রোডের জাতীয় পার্টির কার্যালয়টি ভাঙচুর করছে এবং প্রায় দশ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। আমাদের মূল্যবান অনেক কাগজপত্র পাইনি।

তিনি বলেন, আমি বরিশাল শহরে ছাত্র অবস্থা থেকে ছাত্ররাজনীতি করেছি।  মুক্তিযুদ্ধ করেছি, ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের সাথে ছিলাম, বরিশালের উন্নয়নের স্বার্থে প্রতিটি আন্দোলনে ছিলাম। আমি ৩৫ বছর শিক্ষকতা করেছি, আমার মতো বয়স্ক মানুষের গায়ে হাত দিবে তা কল্পনাও করিনি কিন্তু নির্দয়ভাবে আমাকে পেটানো হয়েছে, আমাদের নেতাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে।

তিনি বলেন, হামলার পরে আমরা একটু অবজারভেশনে ছিলাম, কিন্তু আমাদের অফিস ভাঙার পরে এখানে গণঅধিকার পরিষদের যারা রয়েছে তারাই হামলা করেছে। আর তারা যে অভিযোগ আমাদের বিরুদ্ধে দিতে চায়, তার উত্তর হচ্ছে আমাদের ব্যানারে কোন ধরনের আওয়ামী লীগ, যুবলীগের কেউ ছিল না,থাকার প্রশ্নও ওঠে না।

এ সময় তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অবশ্যই অংশগ্রহণ করবে আর জাতীয় পার্টিকে বাদ দিয়ে এ দেশে কোন গণতান্ত্রিক রাজনীতি হবে না এবং জাতীয় নির্বাচনও হবে না।

মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়টি দুইভাবে আমরা দেখছি একটি রাজনৈতিকভাবে আরেকটি আইনগত ভাবে। আমরা হামলার ঘটনায় ফৌজদারি আইনে মামলা দায়ের করতে যাচ্ছি।

এমএস/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।