ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৫ আশ্বিন ১৪৩২, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭ রবিউস সানি ১৪৪৭

রাজনীতি

পাঁচ দফা দাবি আদায়ে জামায়াতের দ্বিতীয় ধাপে কর্মসূচি ঘোষণা 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:৩৯, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৫
পাঁচ দফা দাবি আদায়ে জামায়াতের দ্বিতীয় ধাপে কর্মসূচি ঘোষণা  সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করেন গোলাম পারওয়ার

ঢাকা: জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনসহ পাঁচ দফা দাবিতে দ্বিতীয় ধাপে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।  

কর্মসূচিগুলো হলো: ১-৯ অক্টোবর গণসংযোগ, ১০ অক্টোবর বিভাগীয় শহরে গণমিছিল এবং ১২ অক্টোবর জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি।

 

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মগবাজারে আল-ফালাহ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ার এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

লিখিত বক্তব্যে মিয়া গোলাম পারওয়ার বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের সফল গণঅভ্যুত্থানের পর জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রাষ্ট্রের প্রয়োজনকে সামনে রেখে জনগণের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার ও স্বৈরাচার ফিরে আসার সব পথ রুদ্ধ করার প্রত্যয় নিয়ে কাজ শুরু করেন। গঠিত হয় বিভিন্ন সংস্কার কমিশন। কমিশনগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৬৬টি প্রস্তাবের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় মিলিত হয়। দীর্ঘ আলোচনার পর ৮৪টি প্রস্তাব সিদ্ধান্ত আকারে গৃহীত হয়। অনেকগুলো প্রস্তাবের সঙ্গে দু/একটি রাজনৈতিক দল ভিন্নমত পোষণ করায় অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি।

তিনি বলেন, সরকার এরই মধ্যে জুলাই জাতীয় ঘোষণাপত্র ও জুলাই জাতীয় সনদ প্রস্তুত করেছে। দেশের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী জুলাই জাতীয় ঘোষণাপত্র ও জুলাই জাতীয় সনদের প্রয়োজনীয় সংশোধনীসহ তাদের পরামর্শ সরকারের কাছে উপস্থাপন করে। জামায়াতে ইসলামী বরাবরই জুলাই জাতীয় সনদকে আইনগত ভিত্তি দেওয়ার বিষয়ে জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে। জাতির ক্রান্তিলগ্নে ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’ হিসেবে অতীতের বিভিন্ন নজির ও উদাহরণ তুলে ধরে জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তির বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান বারবার ব্যক্ত করে আসছে। এ লক্ষ্যে জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তি দেওয়ার জন্য আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে জামায়াতে ইসলামী এরই মধ্যে সরকারের কাছে দুটি প্রস্তাব করেছে। প্রথমত: জুলাই জাতীয় সনদের জন্য ‘সংবিধান আদেশ’ জারি করা দ্বিতীয়ত: এ সনদের অধিকতর আইনি ভিত্তি দেওয়ার জন্য নির্বাচনের আগে গণভোট করে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা। সেটা না হলে জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তি দেওয়া ছাড়া ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত অভ্যুত্থান ও তার অর্জন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে বলে আমরা মনে করি।

তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও ভয়ভীতিমুক্ত গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছি। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী কালো টাকার ব্যবহার বন্ধ, ভোটকেন্দ্র দখল, পেশিশক্তি প্রদর্শন ও ভোটের বিভিন্ন অনিয়ম ও অপতৎপরতা বন্ধ, কোয়ালিটি-সম্পন্ন পার্লামেন্ট এবং দক্ষ আইনপ্রণেতা তৈরিসহ প্রতিটি ভোট মূল্যায়নের লক্ষ্যে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য জোর দাবি জানিয়ে আসছি। বাংলাদেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, কলামিস্ট, লেখক, গবেষক, শিক্ষাবিদ ও নানা শ্রেণিপেশার মানুষ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি, জনগণের দাবিগুলো কার্যকর করার কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এ অবস্থায় জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি ন্যায়ভিত্তিক ও জবাবদিহিতামূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্ররূপে গড়ে তোলার লক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে গত ১৫ সেপ্টেম্বর আন্দোলনে পাঁচ দফা গণদাবি জাতির সামনে তুলে ধরা হয়। একইসঙ্গে গণআন্দোলন গড়ে তোলার জন্য তিনদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ঘোষিত এ কর্মসূচিতে সারাদেশে বিপুল সংখ্যক জনগণ অংশ নেন। এজন্য আমরা দেশবাসীকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে আন্দোলনের কর্মসূচি জাতির সামনে তুলে ধরার জন্য সব গণমাধ্যমের প্রতি আমরা আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

গোলাম পারওয়ার বলেন, আমরা দ্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, আমাদের পাঁচ দফা গণদাবি জনগণের কাছে যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে। তাই দেশের জনগণ এ দাবির প্রতি ব্যাপক সমর্থন দিয়ে রাজপথের আন্দোলনে শামিল হয়েছেন। বর্তমান সরকারের উচিত অবিলম্বে জনগণের দাবিগুলো মেনে নিয়ে জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা। সরকার যদি জনগণের যৌক্তিক দাবি উপেক্ষা করে এবং বিদ্যমান সমস্যার দ্রুত সমাধান না করে, তাহলে দেশের জনগণ তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য কঠোর হতে বাধ্য হবে। এ লক্ষ্যে আজ চলমান আন্দোলনকে আরও জোরদার করার জন্য নিচের কর্মসূচিগুলো ঘোষণা করছি:

কর্মসূচি:
পাঁচ দফা গণদাবির পক্ষে জনমত গঠনের লক্ষ্যে ০১ অক্টোবর থেকে ০৯ অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশে গণসংযোগ।  

এ উপলক্ষ্যে মতবিনিময় সভা, গোলটেবিল বৈঠক, সেমিনার ইত্যাদি আয়োজন করা হবে।  

১০ অক্টোবর রাজধানীসহ সব বিভাগীয় শহরে গণমিছিল।  
১২ অক্টোবর সারাদেশে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি পেশ।

টিএ/এসআই 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।