ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২, ১৫ জুলাই ২০২৫, ১৯ মহররম ১৪৪৭

রাজনীতি

তারেক রহমানের উপদেষ্টার স্ট্যাটাস

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড নিয়ে ১০টি পরিকল্পিত অপপ্রচার ও তথ্যভিত্তিক বাস্তবতা

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:৫৯, জুলাই ১৪, ২০২৫
মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড নিয়ে ১০টি পরিকল্পিত অপপ্রচার ও তথ্যভিত্তিক বাস্তবতা ড. মাহদী আমিন। 

সম্প্রতি রাজধানীর মিটফোর্ড এলাকায় সংঘটিত নৃশংস হত্যাকাণ্ড নিয়ে নানা ধরনের অপপ্রচার, গুজব এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিন।  

তিনি মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড নিয়ে ১০টি পরিকল্পিত অপপ্রচার ও তথ্যভিত্তিক বাস্তবতা তুলে ধরেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রকৃত তথ্য ও বাস্তবতা তুলে ধরতে গিয়ে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন তিনি। এ ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত ও শাস্তির দাবি এখন সময়ের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

সোমবার (১৪ জুলাই) ড. মাহদী আমিন তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক পোস্টে এসব কথা জানান।

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড নিয়ে ১০টি পরিকল্পিত অপপ্রচার ও তথ্যভিত্তিক বাস্তবতা নিয়ে তারেক রহমানের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিনের পোস্টটি পাঠকের সুবিধার্থে হুবহু তুলে ধরা হলো:

১. হত্যাকাণ্ডের ভিডিওতে যারা ইট ও পাথর দিয়ে নৃশংসভাবে মারছে দেখা গিয়েছে, তারাই কি বিএনপির বহিষ্কৃত নেতাকর্মী?

উত্তর: না, ভিডিও ফুটেজে যেসব হত্যাকারীকে দেখা গিয়েছে এবং বিএনপি যাদের বহিষ্কার করেছে—তারা ভিন্ন ব্যক্তি। হত্যার রহস্য উদঘাটনে প্রকৃত খুনিদের নাম ও পরিচয় প্রকাশ করে সবাইকে দ্রুত গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

২. এই ঘটনায় বিএনপি যাদের বহিষ্কার করেছে, তারা কি ঘটনাস্থলে ছিল?

উত্তর: বিএনপি থেকে বহিষ্কৃতরা ঘটনাস্থলে ছিল না।

একটি বিতর্কিত প্রক্রিয়ায় মামলার এজাহারে তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে জনগণের অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা এবং ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনের প্রতি আস্থার জায়গা থেকে অভিযুক্তদের তদন্তের আগেই বহিষ্কার করা হয়। একটি নিরপেক্ষ তদন্তই প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করবে।

৩. মর্মান্তিক ঘটনার সময় সিসিটিভি ফুটেজে যাদের দেখা গিয়েছিল, তাদের সবাইকে কি পুলিশ গ্রেফতার করেছে?

উত্তর: ভিডিওতে ইট-পাথর দিয়ে মারতে থাকা সন্ত্রাসীদের পুলিশ এখনো পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি।

রহস্যজনকভাবে, ভিডিওতে দেখা খুনিদের সবার নাম মামলার এজাহারেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। নিহতের পরিবারও বারবার হতাশা প্রকাশ করে বলেছে যে, মূল অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গিয়েছে এবং কীভাবে গ্রেফতার এড়িয়ে চলছে। ঠিক কি কারণে এমন পৈশাচিক হত্যা, এর পেছনে কারা রয়েছে, কীভাবে হত্যাকাণ্ড ভিডিও করা হলো, কারা অনলাইনে ছড়ানো শুরু করল— বিষয়গুলো উদঘাটন করা জরুরি।  

৪. চাঁদাবাজির কারণেই কি এই বর্বরতা?

উত্তর: পুলিশ ও স্থানীয়রা নিশ্চিত করেছে, এটি কোনো চাঁদাবাজির ঘটনা নয়। ব্যবসায়িক ও স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই নৃশংস ঘটনা ঘটেছে।

৫. হত্যাকাণ্ড নিয়ে নিহতের পরিবারের বক্তব্য কী?

উত্তর: নিহতের পরিবার গণমাধ্যমে বলে, ‘দ্বিতীয়বার যে এজাহার রেডি করা হয়েছে, সেটায় তিনজন মূল আসামির নাম কেটে দিয়ে যারা এর সঙ্গে কোনোভাবে জড়িতই না, তাদের নাম জোর করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেখানে আমার মা না বুঝে সিগনেচার করে ফেলেছেন। যারা এই ঘটনার মূল হোতা, তাদের বাদ দিয়ে নিরপরাধদের আসামি করা হয়েছে। ’

৬. হত্যাকাণ্ড নিয়ে পুলিশের বক্তব্য কী?

উত্তর: লালবাগ বিভাগের পুলিশের ডিসি মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন গণমাধ্যমে বলেন, ‘আসামিদের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। আমাদের কাছে মুখ্য বিষয় হচ্ছে, একটি অপরাধ সংগঠিত হয়েছে—এটি কারা করেছে? যারা অপরাধী, তাদের পরিচয় অপরাধের প্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এখন পর্যন্ত কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিশ্চিত করতে পারিনি। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করেছি, কিন্তু তারা কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলেনি। আমরা ভবিষ্যতে বাকি আসামিদের গ্রেফতার ও নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করব এবং যদি রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়, তা অবশ্যই আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব। ’

৭. এই ঘটনা কি সঙ্গে সঙ্গেই অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে?

উত্তর: না —পূর্বপরিকল্পিতভাবে ৯ জুলাই হত্যাকাণ্ডের দুই দিন পর, ১১ তারিখ শুক্রবার জুমার নামাজের পর, বাংলাদেশের প্রাইম টাইমে ইন্টারনেটে ভিডিও ও তথ্য বিকৃতি ছড়ানো শুরু হয়। খুলনা, কুমিল্লা, চাঁদপুরসহ দেশজুড়ে যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ও অরাজকতা ঘটে চলেছে, সেখানে এই গোষ্ঠীর নির্লিপ্ততা এবং একটি সুনির্দিষ্ট ঘটনা নিয়ে কেন অপতৎপরতা, সেই যৌক্তিক প্রশ্ন উঠেছে।

৮. হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে যেসব ফটোকার্ড, ভিডিও ও ন্যারেটিভ আসতে থাকে, সেগুলো কি প্রকৃত সত্য ঘটনা তুলে ধরে?

উত্তর: পরিকল্পিতভাবে নির্দিষ্ট কিছু সোশ্যাল মিডিয়া আইডি ও পেজ থেকে আগে থেকেই তৈরি করে রাখা মিসলিডিং ফটোকার্ডগুলো অনলাইনে ছড়ানো শুরু হয়। এটি প্রতীয়মান যে, অনলাইনে ডিসইনফরমেশন ক্যাম্পেইন শুরুর আগেই প্রোপাগান্ডা ম্যাটেরিয়াল তৈরি করে রাখা হয়েছিল।

৯. এই বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বকে কেন অশালীন ভাষায় আক্রমণ করা হলো?

উত্তর: শুধুমাত্র অভিযোগের ভিত্তিতে দলীয় পদ থেকে অপসারণের দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপকে স্বাগত না জানিয়ে, ফ্যাসিবাদী কায়দায় বিএনপির জনপ্রিয়তাকে নষ্ট করতে, গুজব ও প্রোপাগান্ডা চালিয়ে বিষোদগার করা হয়েছে। শিষ্টাচার বহির্ভূত এই অপপ্রয়াস গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার সম্পূর্ণ বিপরীত। তবে যেকোনো অপপ্রচার, উসকানি বা ষড়যন্ত্রকে উপেক্ষা করে, সংঘাতের পথ পরিহার করে, বিএনপি দেশের স্থিতিশীলতা ও জনগণের নিরাপত্তা বজায় রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

১০. সরকার কি যথাযথ তদন্ত, বিচার এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে সক্ষমতা দেখাতে পারছে?

উত্তর: রাজধানীর জনবহুল এলাকায় নৃশংসভাবে একজন মানুষকে হত্যা করার ঘটনা শুধুমাত্র আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির শোচনীয় অবস্থাই নয়, বরং সার্বিক বিচারহীন সংস্কৃতির ভয়াবহ প্রতিফলন। একইভাবে উদ্বেগজনক হলো— এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্বার্থান্বেষী মহল পরিকল্পিতভাবে সোশ্যাল মিডিয়া ও কিছু জায়গায় অশালীন আচরণ, হেট্রেড কনটেন্ট এবং ফেক ন্যারেটিভ ছড়ানোর চেষ্টা করেছে। জনগণ আশা করে, অন্তর্বর্তী সরকার সব অপরাধ ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জবাবদিহিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, আইনের অনুশাসন প্রতিষ্ঠা করবে এবং স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

রাজনীতি এর সর্বশেষ