অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট।
রোববার (১৩ জুলাই) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা, খুন-ধর্ষণ বন্ধের দাবিতে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল থেকে এ কথা জানানো হয়।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমাবেশে নেতারা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। খুন, সন্ত্রাস, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, মব একের পর এক চলতে থাকলেও সরকার কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। এভাবে চলতে থাকলে মানুষ আবার নিজেদের বাঁচার দাবিতে রাস্তায় নেমে আসবে।
তারা আরও বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে একজন ব্যবসায়ীকে হত্যা করা হয়। ঘটনাস্থলের পাশেই আনসার ক্যাম্প থাকলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। খুলনায় গুলি করে হত্যার পর পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়েছে, চাঁদপুরে মসজিদের ভেতর মুয়াজ্জিনকে হত্যার উদ্দেশে হামলা চালানো হয়েছে। এ রকম হত্যা-নির্যাতনের ঘটনা নিত্ত-নৈমত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সরকারের একজন উপদেষ্টা বলছেন এসব ঘটনার সঙ্গে সরকার বা সরকারি দলের সম্পর্ক নেই। এখানে প্রশ্ন আসে, সরকারি দল কোথা থেকে এলো? তার মানে ‘ঠাকুর ঘরে কে আমি কলা খাই না’ অবস্থা।
সমাবেশ থেকে বলা হয়, কিছুদিন আগে থানায় পুলিশকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নামধারীরা একজনকে গ্রেপ্তার করতে বললে পুলিশ মামলা না থাকায় তাকে গ্রেপ্তার করেনি। পরে ওই থানার ওসির বিরুদ্ধে এনসিপি বিবৃতি দেয় এবং ওসিকে বদলি করে দেওয়া হয়।
পুলিশকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে উল্লেখ করে নেতারা বলেন, নিজেদের স্বার্থে পুলিশকে ব্যবহার বন্ধ করতে না পারলে অবস্থার পরিবর্তন হবে না। সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে মব তৈরি করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে সরকারের বিভিন্ন কর্তাব্যক্তিরা যেভাবে সম্মতি উৎপাদন করছে, তা খুবই উদ্বেগজনক। এসব বক্তব্য মবকে উৎসাহিত করছে।
নেতারা অবিলম্বে মব সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িতদের দলীয় বিবেচনার বাইরে গিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে নারী ধর্ষণ, নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুততম সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার দাবি পুনর্ব্যক্ত করে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিয়ে বিদায় নেওয়া।
সমাবেশে নেতারা লুট হওয়া ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, জেল পালানো সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি ও বাম জোটের অন্যতম নেতা মোহাম্মদ শাহ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন- বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, বাসদের (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় নেতা সীমা দত্ত, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী।
সমাবেশ পরিচালনা করেন সিপিবির সহ-সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন- বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাসদের (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাসুদ রানা, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার প্রমুখ।
আরকেআর/আরবি