ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ৩০ মে ২০২৫, ০২ জিলহজ ১৪৪৬

রাজনীতি

তারুণ্যের সমাবেশ থেকে এক দাবি— দ্রুত নির্বাচন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:৩৯, মে ২৮, ২০২৫
তারুণ্যের সমাবেশ থেকে এক দাবি— দ্রুত নির্বাচন মঞ্চে বিএনপি নেতারা, ভার্চ্যুয়ালি সমাবেশে যুক্ত হন তারেক রহমান

বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে। ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ’ থেকে দলটি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চেয়েছে।

এ নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রস্তুতিও নিতে বলেছে। এই সমাবেশে নেতাদের বক্তব্যে একটি দাবিই উঠে এসেছে— আর সেটি হলো দ্রুত নির্বাচন আয়োজন। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট করে জোর দিয়ে বলেছেন, নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যেই হতে হবে।

তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি নির্বাচন, গণতন্ত্র, বিচার ব্যবস্থাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদসহ দলটির শীর্ষ নেতারা এই সমাবেশে বক্তব্য দেন। সবার কণ্ঠেই ছিল নির্বাচনের দাবি।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল নয়াপল্টনের এই সমাবেশের আয়োজন করে। সকাল থেকেই নয়াপল্টনে নেতাকর্মীদের ঢল নামে। সকাল ১০টার পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। সিলেট, ফরিদপুর ও ময়মনসিংহ থেকেও নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনে জড়ো হন। তারা নানা স্লোগান দেন। বিকেলে তুমুল বৃষ্টির মধ্যেও নয়াপল্টন ছিল স্লোগানমুখর।  

সমাবেশে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ভোট ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার মতো এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার। আমরা বারবার তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি, কেন অতি দ্রুত নির্বাচন দরকার। কারণ পতিত সরকার দেশে-বিদেশে নির্বাচনকে বিলম্বিত করার জন্য নানা ষড়যন্ত্র করছে। তা না হলে সংস্কার ও মামলার বিষয়টিকে নির্বাচনের সঙ্গে কেন যুক্ত করা হবে।

আবদুল মঈন খান বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে। আমরা দ্বিতীয় পর্যায়ের সংগ্রামে রয়েছি।  তারুণ্যের সেন্টিমেন্টের প্রতিফলন ঘটাতে হবে। আর এজন্য দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে। তার জন্য আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব। এটা জনগণের দাবি। তাই সরকারের কাছে উদাত্ত আহ্বান জানাব, দ্রুত নির্বাচন দিয়ে গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, আজকে আমরা যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি, সেখান থেকে একটি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছি। আর সেই বার্তা হলো গণতন্ত্র, আর এই গণতন্ত্র হলো নির্বাচন। এখানে সংস্কার ও বিচারের কথা বলে নির্বাচন পেছানোর কোন কারণ নেই।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, তারুণ্যের ভাবনায় সারা দেশে নির্বাচনী আহ্বান জানাতে আজ এখানে এসেছি। একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ফিরে আসবে আর এই কাজে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে তরুণরাই।    

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দেশের বিরুদ্ধে এখনো ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আজকের সমাবেশ থেকে আহ্বান জানাব, আপনারা ঘরে ফিরে দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে পাড়ায় মহল্লায় আওয়াজ তুলুন।  

অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে মির্জা আব্বাস বলেন, গত ৯ মাসে এই সরকার কিছুই করতে পারেনি। আমরা যখনই নির্বাচনের কথা বলি তারা সংস্কার ও বিচারের কথা বলে। যে সংস্কার আপনারা ৯ মাসে করতে পারেননি, তা আগামী ৯ বছর কেন, ৯০ বছরেও করতে পারবেন না। এই ৯ মাসে সরকারের মাথা থেকে পা পর্যন্ত পচন ধরে গেছে।   

‘ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হতে হবে’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হতে হবে, ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি দলীয় নেতাকর্মী ও দেশবাসীকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন যেন অনুষ্ঠিত হয় তার প্রস্তুতি নিতে শুরু করুন। কারা আপনাদের প্রতিনিধি হবে, আপনারাই ভোট দিয়ে তাদের নির্বাচিত করবেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মনে হয় এরই ভেতরে টালবাহানা শুরু হয়েছে বা চলছে। কথিত অল্প সংস্কার আর বেশি সংস্কারের অভিনব শর্তের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে আগামী জাতীয় নির্বাচনের ভবিষ্যৎ। জনগণ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে সংস্কার নিয়ে সময়ক্ষেপণের আড়ালে অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে ও বাইরে কারও কারও মনে হয় ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, গণতন্ত্রকামী ও গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিপক্ষ বানাবেন না। আপনাদের কেউ রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকতে চাইলে পদত্যাগ করে এসে নির্বাচন করুন। নির্বাচনে জনগণের রায় পেলে সরকারের দায়িত্ব পালন করুন। নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতাই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পুঁজি।

অতীতে বিভিন্ন সময় তত্ত্ববাবধায়ক সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচন করেছে। সব ক্ষেত্রেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাসে জাতীয় নির্বাচন সফল করেছে। বাংলাদেশেই রেকর্ড আছে নির্বাচন তিন মাসে সম্ভব। কিন্তু আজ দেখছি ১০ মাস হয়ে গেল, অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করছে না।

ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন, বললেন প্রধান উপদেষ্টা

বিএনপি বারবার ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে এলেও অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সবশেষ অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসে। আজকের সমাবেশ থেকেও এলো নির্বাচনের দাবি।

জাপান সফররত প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে আগামী বছরের জুনের মধ্যে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া সংস্কার কার্যক্রম সামনে এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে।

বুধবার জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং জাপান-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ লিগের (জেবিপিএফএল) সভাপতি তারো আসো টোকিওর ইম্পেরিয়াল হোটেলে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার তিনটি প্রধান বিষয়ে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে—সংস্কার, খুনিদের বিচার এবং সাধারণ নির্বাচন আয়োজন।

এনডি/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।