ঢাকা, বুধবার, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ মে ২০২৪, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আশ্রয়ণ প্রকল্পের নামে বালু উত্তোলন শ্রমিকলীগ নেতার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২২
আশ্রয়ণ প্রকল্পের নামে বালু উত্তোলন শ্রমিকলীগ নেতার

মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জের সিংগাইরে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্প উন্নয়নের কথা বলে ধলেশ্বরী নদী থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার (খনন যন্ত্র) বসিয়ে বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলীর বিরুদ্ধে।

ধলেশ্বরী নদী থেকে মাটি উত্তোলন করায় দেখা দিয়েছে ভাঙন।

অবৈধ ড্রেজার বন্ধ না করা গেলে আগামী বর্ষায় ভাঙন আরও বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। কোটি টাকা ব্যয়ে ধলেশ্বরী নদী খনন করা হলেও ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ না হওয়ায় তার সুফল কতটা পাওয়া যাবে তা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।

জানা যায়, সিংগাইরে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্প উন্নয়নের জন্য নদী থেকে কিছু বালু উত্তোলনের জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে মৌখিক অনুমতি নেওয়া হয়। এই মৌখিক অনুমতিকে ব্যবহার করে দিন রাত বালু উত্তোলন করে মিনি ট্রাক ও ট্যাফে ট্রাক্টরে করে সেগুলো বিক্রি করা হচ্ছে হরহামেসাই। প্রথম দিকে নদীতে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনে বাধা দিয়েছিলেন স্থানীয়রা। তবে সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) অনুমতি থাকায় তারাও আর পরে সাহস দেখাননি। উপজেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী, যুবলীগ নেতা মনির মিয়া, আনোয়ার হোসেন এবং ছাত্রলীগ কর্মী মো. সায়েদুর এই বালু উত্তেলনের কাজ করছেন।

এদিকে অপরিকল্পিতভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলনের জন্য বৈদ্যুতিক পাঁচটি পিলার রাস্তার ওপর কাত হয়ে পড়ে গেছে। তাতে বন্ধ রয়েছে সংযোগ।

নদীর আশেপাশের বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, উপজেলা ও স্থানীয় নেতারা মিলে এখানে ড্রেজার বসিয়েছেন। প্রথম দিকে বাঁধা দিয়েছিলাম। কিন্তু পরে যখন শুনলাম নদী থেকে বালু উত্তোলনের জন্য এউএনও অমুমতি দিয়েছেন, তখন আর আমরা বাধা দেওয়ার সাহস পাইনি।

অন্যদিকে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও ভূমি অফিসের নায়েব জানান, সরকারি কাজে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। পরে বালু উত্তোলনকারীরা সরকারি কাজে বাধা দিলে মামলার হুমকি দেওয়া হয়।

ড্রেজার ব্যবসায়ী মো. সায়েদুর বলেন, উপজেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী আমাকে বলেছেন নদী থেকে বালু উত্তোলন করতে। এই বালু সরকারি কাজে ব্যবহার হবে। প্রতিদিন নদী থেকে বালু উত্তোলন করছি আর মাঝে মধ্যে বালু বাইরে বিক্রি করি।

অভিযুক্ত সিংগাইর উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি। তবে তিনি দাবি করেন যে অনুমতি আছে জন্যই তিনি নদী থেকে বালু উত্তোলন করছেন।

বায়রা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা ঝিলন খান বলেন, আমি ওই খান থেকে ড্রেজার সরিয়ে অন্যত্র নিতে বলেছি যাতে করে কারো কোনো ক্ষতি না হয়।

মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, নদী খনন প্রকল্প এই জেলায় শেষ হয়েছে। এছাড়া নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ অবৈধ। সরকারি কাজের জন্য নদী থেকে বালু উত্তোলন করতে হলে অবশ্যই সেক্ষেত্রে সার্ভে করে নিতে হবে।

সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দিপন দেবনাথ বাংলানিউজকে বলেন, ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনে নদীর পাড় ভেঙে যাচ্ছে এ ধরনের কোনো খবর আমি পাইনি। বিষয়টি আমি খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

ধলেশ্বরী নদী বাঁচাও আন্দোলন কমিটির আহবায়ক অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম আরজু বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্প বা সরকারি প্রকল্পে কাজ করার জন্য বাজেট আছে। আর সেই অর্থ দিয়েও মাটি-বালু সরবরাহ করা যায়। আর নদী থেকে ম্যাপ অনুযায়ী বালু তোলা হয় না। ফলে এক দিকে জনস্বার্থে সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়, অন্যদিকে নদী থেকে বালু তোলায় জনস্বার্থ বিঘ্নিত হয়।

নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, মাটি ও বালু ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী সরকারি প্রকল্পেও বালু মহালের বাইরে থেকে উত্তোলনের সুযোগ নেই। এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২২
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।