ঢাকা, শনিবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

চাকরি করে বাবার হাতে টাকা দিতে পারলেন না শাহরিয়ার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২২
চাকরি করে বাবার হাতে টাকা দিতে পারলেন না শাহরিয়ার

দিনাজপুর: ইচ্ছে ছিল অনার্স শেষ করেই চাকরি করবে আমার ছেলে। চাকরির টাকা তুলে দেবে বাবার হাতে।

বড় ভাইয়ের মতো পরিবারের হাল ধরবে। চাকরির পাশাপাশি মাস্টার্স করবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন থেমে গেল; তার ইচ্ছা আর পূরণ হবে না।

ঠিক এভাবে না বললেও বিলাপরত অবস্থায় এ কথাগুলোই বলছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী গোলাম মোস্তাক শাহরিয়ারের মা শাহানারা বেগম। রাবির হবিবুর রহমান হলের তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে পড়ে নিহত হন শাহরিয়ার।

বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে চারটায় দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ৬ নম্বর ভান্ডারা ইউনিয়নের বেতুরা গ্রামে জানাজা হয় শাহরিয়ারের। পরে তার মরদেহ সমাহিত করা হয় বাড়ির পাশে। এর আগে বুধবার (১৯ অক্টোবর) রাত ৮টার দিকে মৃত্যু হয় শাহরিয়ারের।

ছেলের মৃত্যুর আগে বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা হয়। বাংলানিউজের এ প্রতিবেদন শাহরিয়ারের বাড়ি গেলে সেই কথাগুলো জানান শাহানারা বেগম ও তার স্বামী গোলাম মোস্তফা।

শাহনারা বলেন, বুধবার সন্ধ্যার দিকে আমার সাথে শাহরিয়ারের কথা হয়। খারাপ স্বপ্ন দেখার কথা আমি তাকে জানিয়ে সাবধানে থাকতে বলি। সেও আমাদেরকে সাবধানে থাকতে বলে। আমার ছেলে সবসময় বলত, আমি অনার্স শেষ করে চাকরি করব, চাকরি করার পাশাপাশি মাস্টার্স করব। আর চাকরির টাকাগুলো তার বাবার হাতে তুলে দিবে। কিন্তু তার আগেই আল্লাহ আমার ছেলেকে নিয়ে চলে গেল।

শাহরিয়ারের বাবা গোলাম মোস্তফা বলেন, ছেলের সাথে আমাদের বুধবার সন্ধ্যায় শেষবার ফোনে কথা হয়। ওর মা কয়েক দিন থেকে খারাপ স্বপ্ন দেখছে। তাই সাবধানে থাকতে বললাম। তখন শাহরিয়ারও আমাদের সাবধানে থাকতে বললো। স্বপ্নে সাপ দেখলে লাঠি দিয়ে মেরে ফেলতে বলল। সন্ধ্যায় ও খেতে বের হচ্ছে বলে আমাদের জানায়। রাতে আমরা খবর পাই ও হলের বারান্দা থেকে পড়ে মারা গেছে। আমার ছেলে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ছিল না। ও পড়ালেখায় বেশি মনোযোগী ছিল।

নিহত শাহরিয়ারের কয়েকজন প্রতিবেশীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শান্ত স্বভাবের শাহরিয়ার ছোটো বেলা থেকেই পড়ালেখায় ভালো। কারও সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ ছিল না তার।

তিন ভাই-বোনের মধ্যে শাহরিয়ার দ্বিতীয়। বড় ভাই সারোয়ার শাকিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরপ্রবি) শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। ছোট বোন মুসরাত জাহান মুশফিকা দিনাজপুর সরকারি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিককে পড়ালেখা করছেন। শাহরিয়ার দিনাজপুর জেলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও দিনাজপুর সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। পরে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কেটিং বিভাগে ভর্তি হন। ছোট থেকে ইঞ্জিনিয়ার হতে চেয়েছিলেন কিন্তু সুযোগ না হওয়ায় ভর্তি হন রাবির মার্কেটিং বিভাগে।

উল্লেখ্য, বুধবার রাতে রাবির হবিবুর রহমান হলের তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে পড়ে মারাত্মক আহত হন শাহরিয়ার। সহপাঠীরা তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেছে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা দেন। তিনি রাবির মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২২
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।