ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

সুফিবাদ শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে: পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২২
সুফিবাদ শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে: পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী

ঢাকা: সুফিবাদ জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একত্রিত করে বিশ্বে শান্তি সমাজ গড়ে তুলছে বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম।

তিনি বলেন, সুফিবাদ আমাদের সমাজে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে এবং সারা বিশ্বে শান্তি ছড়িয়ে দিচ্ছে।

এক্ষেত্রে সারা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফ ব্যাপক অবদান রাখছে।

বুধবার (১২ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর হোটেল রেডিসন ব্লু-তে আয়োজিত ‘এ বার্থ অব প্রফেট (সা.) এ বার্থ অব ন্যাশন’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী।  

সুফি ইউনিটি ফর ইন্টারন্যাশনাল সলিডারিটির (এসইউএফআইএস) উদ্যোগে আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

ড. শামসুল আলম বলেন, আমরা শাস্তিতে বিশ্বাস করি। আমাদের অন্যের অধিকার, বিশ্বাসকে সম্মান করতে হবে। শাস্তি প্রতিষ্ঠা না হলে উন্নয়ন টেকসই হবে না। একে অপরকে সম্মান করতে হবে। সবাই এক সঙ্গে মিলে মিশে বসবাস করতে হবে।

শামসুল আলম বলেন, সুফিবাদ শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। মাইজভাণ্ডারীর উদ্যোগে বাংলাদেশে সুফিবাদ এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশে বিভিন্ন জেলা মাইজভাণ্ডারী ভক্ত আছেন, যারা সুফিবাদের বিশ্বাস করেন, তারা শাস্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছেন।

‘আমি এ ধরনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে জীবনে প্রথম অংশ নিলাম। এই শান্তি সম্মেলনে অংশ নিতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। ’ যোগ করেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী।  

বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বে রোল মডেল। সারা পৃথিবীতে শান্তির বার্তা নিয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমৃদ্ধ অর্থনীতি গড়ার মধ্য দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলছে। আমি এ ধরনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে জীবনে প্রথম অংশ নিয়ে অত্যন্ত আনন্দিত।

শান্তি সম্মেলনে অনলাইনে যুক্ত থেকে ভারতের আজমীর শরীফের বর্তমান সাজ্জাদানশীন আল্লামা সালমান চিশতী বলেন, হযরত মুহাম্মদ (সা.) মানবতার কল্যাণ ও শান্তির দূত হিসেবে পৃথিবীতে আগমন করেন। তাই ঈদে মিলাদুন্নবী এবং হযরত মুহাম্মদের (সা.) আদর্শ আমাদের প্রত্যেকের ধারণ এবং লালন করতে হবে।  

তিনি বলেন, আজমীর শরীফের মঈনুদ্দীন চিশতী সৈয়দ হাসান সানজরী হযরত শাহ জালাল, গাউছুল আ’যম মাইজভাণ্ডারীসহ বিশ্বের অলিরা পৃথিবীতে শান্তি স্থাপন করে চলেছেন। সারা বিশ্বের মুক্তির কান্ডারী। বাংলাদেশে শাহসুফি সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ আল-হাসানী ওয়াল হোসাইনী আল-মাইজভাণ্ডারীকে এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য মোবারকবাদ জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।

সভাপতির বক্তব্যে সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ বলেন, প্রিয় নবীর (সা.) পৃথিবীতে শুভ আগমনকালকে ইতিহাসে আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগ বলা হয়। সে সময়ে মানুষ এমন নিষ্ঠুর ও বর্বর ছিল যে, তারা খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, গোত্রে গোত্রে যুদ্ধ, চুরি, ডাকাতিসহ নানাবিধ অনৈতিক কাজে লিপ্ত থাকতো। ওই সময়ে নারী জাতির কোনো সম্মান ও মর্যাদাই ছিল না। নারী জাতি এমনই ভোগ বিলাসের পণ্য ছিল যে, কোনো কোনো গোত্রে একজন পিতা কলঙ্ক ও সম্মানের ভয়ে কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দিতেও দ্বিধাবোধ করতো না।  

এসইউএফআইএস চেয়ারম্যান আরও বলেন, এই জাহেল আরব জাতিকে রাসূলে পাকের (সা.) ক্ষমা, উদার্য, মহানুভবতা ও প্রেম ভালবাসা ও হেকমত দিয়ে বিশ্বের সবচেয়েই সভ্য জাতিতে পরিণত করেন। রাসূলের (সা.) জীবনী গভীরভাবে উপলব্ধি করলে আমরা তাঁর মধ্যে সব মানবিক গুণাবলীর সমাবেশ দেখতে পাই। তাঁর এবং তাঁর সঙ্গীদের ওপর মক্কাবাসীর নির্মম নির্যাতন নিপীড়ন ও কঠোরতা এতোই ভয়াবহ ছিল; যা বর্ণনাতীত। রাসূলে পাকের (সা.) মক্কা বিজয়ের পর শত্রু পক্ষের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ থাকা স্বত্ত্বেও তিনি মক্কাবাসীকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। শুধু তাই নয়, সব জাতির মধ্যে সমতা, ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় তিনি প্রণয়ন করেন ‘মদিনা সনদ’। প্রতিষ্ঠা করেন মানবিক ও কল্যাণময় মদিনা রাষ্ট্র। আজকের পৃথিবীতে দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার, নিপীড়নে মানবতার করুন আর্তনাদ চলছে। কেউ কারও কথা শুনছে না। কথায় কথায় যুদ্ধের হুমকি, যুদ্ধের উস্কানী ও নিজদের আধিপত্য বজায় রাখতে গিয়ে অমানবিক কাজের ভাগারে পরিণত করছে পৃথিবীকে। নিজেদের আধিপত্য বাজায় রাখতে মানুষ হত্যা ও সভ্যতা ধ্বংশ করতেও কুণ্ঠাবোধ করছেন।  

তিনি বলেন, মানবিক ও কল্যাণকর রাষ্ট্র বিনির্মাণে মানুষের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধের জাগরণ ঘটাতে হবে। প্রিয়নবীর (দ.) আদর্শ অনুসরণই মানবতার করুন বিপর্যয় থেকে পরিত্রাণ দিতে পারে।

আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সুফিজের চেয়ারম্যান আওলাদে রাসূল (সা.) শাহসুফি সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী ওয়াল হোসাইনী আল-মাইজভাণ্ডারী। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলনের আহ্বায়ক শাহজাদা সাইয়্যিদ মাশুক-এ-মইনুদ্দীন আল-হাসানী।  

অনুষ্ঠানে অতিথি ও আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বীর বিক্রম, অ্যামেরিকান বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড. আতাউর রহমান মিয়াজি, গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, নোয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. ওয়াহিদুজ্জামান, তুরস্কের দারুল ইসলাম কলেজের ডীন শায়খ ড. সৈয়দ মোহাম্মদ ই এল হোসাইনী, মরক্কোর ওয়াজদা কমিশন ইউনিভার্সিটির প্রফেসর শায়খ ড. মো. লাকদার দারফুফি, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব সুফিজমের উপদেষ্টা, ড. শায়খ আহমদ তিজানি বিন ওমর, ইরানিয়ান অ্যাম্বাস্যাডর ড. আফরোজ, ভারতের ইসলামিক স্কলার শায়খ মো. সাখাওয়াত হোসাইন বারাকাতী, প্রফেসর ড. রফিকুল আলম প্রমুখ।  

বাংলাদেশ সময়: ০১৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০২২
এসজেএ/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।