মাদারীপুর: মাদারীপুরে স্বাস্থ্য বিভাগের ১১-১৭ গ্রেডের চাকরির লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের কপি চাকরিপ্রার্থী স্ত্রী ও শ্যালিকাকে সরবরাহ করার অভিযোগ উঠেছে মাদারীপুর সিভিল সার্জন অফিসের দুই কর্মচারীর বিরুদ্ধে।
পরীক্ষায় তাদের স্ত্রী ও শালিকা উত্তীর্ণ হলে বিষয়টি নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
অভিযুক্তরা হলেন - সিভিল সার্জন কার্যালয়ের হিসাবরক্ষক খাইরুল আলম ও পরিসংখ্যানবিদ (ভারপ্রাপ্ত) মীর রিয়াজ আহমেদ।
মাদারীপুর সিভিল সার্জন কার্যালয় ও এর নিয়ন্ত্রণাধীন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ১১-১৭ গ্রেডের বিভিন্ন পদে ৭৩ জনবল নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা ছিল গত ১০ মে শুক্রবার। ওই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রস্তুত করেছে মাদারীপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) বিকেলে ডিউটি শেষ হলেও সারারাত অফিসে ছিলেন হিসাবরক্ষক খাইরুল আলম ও পরিসংখ্যানবিদ মীর রিয়াজ আহমেদ।
অভিযোগ উঠেছে, স্বজনকে প্রশ্নপত্র সরবরাহের জন্যই তারা সারারাত অফিসে ছিলেন।
প্রশ্ন তৈরির রাতে অফিস করার কথা স্বীকার করলেও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দুই অভিযুক্ত কর্মচারী।
তারা দাবি করেছেন, কোনো প্রশ্নপত্র সরবরাহে নয়; অফিসের কাজেই সেদিন সারারাত ডিউটি করেছেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, ২০২২ সালের ৭ আগস্ট ৭৩ জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। ১০ মে (শুক্রবার) প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা হয়। এতে টিকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হন ৩৪৫ জন। তাদের মধ্যে হিসাবরক্ষক খাইরুলের স্ত্রী আছিয়া (স্টোরকিপার পদে) ও শ্যালিকা আয়শা (স্বাস্থ্য সহকারী পদে) এবং পরিসংখ্যানবিদ মীর রিয়াজের স্ত্রী আফসানা খান আঁখি রয়েছেন।
তারা জানান, নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঢাকা বিভাগীয় পরিচালক ফরিদ হোসেন মিঞার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি দল মাদারীপুর আসে। লিখিত পরীক্ষার আগের দিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে সিভিল সার্জন অফিসে প্রবেশ করেন তারা। প্রশ্নপত্র তৈরি করতে সব ধরনের সরঞ্জাম নিয়ে যান দ্বিতীয় তলায়। রাত ৪টা পর্যন্ত সেখানে কাজ করেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কর্মচারী খাইরুল ও মীর রিয়াজ।
পরদিন (শুক্রবার) সকালে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন তাদের স্বজন। তারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় গুঞ্জন। উত্তীর্ণ ৩৪৫ প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় গত সোমবার, মঙ্গলবার ও বুধবার।
এদিকে জানতে চাইলে খাইরুল ইসলাম ও মীর রিয়াজ দুজনেই বলেন, ‘আমরা সেদিন রাতে প্রশ্ন তৈরির কক্ষে যাইনি। নিয়োগ-সংক্রান্ত ডেটাবেজ তৈরি ও হাজিরা সিট তৈরির কাজ ব্যস্ত ছিলাম। ’
স্ত্রী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে স্বীকার করলেও, শ্যালিকার কথা অস্বীকার করেছেন খাইরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী মেধার কারণে উত্তীর্ণ হয়েছে। ’ এদিকে মীর রিয়াজের দাবি, তার স্ত্রী লিখিত পরীক্ষা দেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অফিসের এক কর্মচারী জানান, প্রশ্নপত্র তৈরির দিন রাত ৪টার দিকে তড়িঘড়ি করে বাসায় চলে যান খাইরুল ও রিয়াজ। তখনও জানা ছিল না তাদের স্বজন চাকরিপ্রার্থী। লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর জানা যায়, তারা মৌখিক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের স্বজনের জন্য অনেক মেধাবী প্রার্থী চাকরি থেকে বঞ্চিত হবেন।
আরেক কর্মচারী বলেন, যাদের স্বজন পরীক্ষার্থী, তারা মৌখিক পরীক্ষার সময় ডিউটি করেন এবং ভাইভা বোর্ডে তারা ঘন ঘন যান। তদন্ত করলে সব বেরিয়ে আসবে।
এদিকে স্বাস্থ্য সহকারী পদে নিয়োগের জন্য রোকসানা আক্তার নামে অফিসের এক কর্মচারী এক চাকরিপ্রার্থীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে চাকরি পাইয়ে দেওয়ারও আশ্বাস দেন বলেও জানা গেছে।
নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে মাদারীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মুনির আহমেদ বলেন, ‘স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে। কেউ টাকার লেনদেন করছে– এমন অভিযোগ থাকলে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৮ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২৪
এসএএইচ