ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ মে ২০২৪, ০০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবির সমর্থনে সমাবেশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০২২
চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবির সমর্থনে সমাবেশ

ঢাকা: চা শ্রমিকদের দ্বি-বার্ষিক চুক্তি সম্পাদনে সময়ক্ষেপণের অপকৌশল বন্ধ করে দৈনিক নগদ মজুরি ন্যূনতম ৩০০ টাকা নির্ধারণসহ অন্যান্য ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট। সেই সঙ্গে আন্দোলনরত চা শ্রমিকদের কাছ থেকে ক্ষুদ্র ঋণের কিস্তি আদায় বন্ধ রাখারও দাবি জানিয়েছে তারা।

শুক্রবার (২৬ আগস্ট) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বুলবুলের সঞ্চালনায় এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

এতে বক্তব্য রাখেন সহ-সম্পাদক ইমাম হোসেন খোকন, অর্থ সম্পাদক জুলফিকার আলী, কেন্দ্রীয় সদস্য আফজাল হোসেন। সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশের সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ প্রমুখ।

বিক্ষোভ সমাবেশে নেতারা বলেন, দৈনিক নগদ মজুরি ৩০০ টাকা নির্ধারণসহ ৭ দফা দাবিতে চা শ্রমিকরা গত ১৫ দিন যাবত ধর্মঘট পালন করছেন। খাদ্যসহ নিত্য প্রয়োজনীয় প্রতিটি দ্রব্যের অগ্নিমূল্যের এই বাজারেও অমানবিক ১২০ টাকা মজুরি নিয়ে কাজ করা শ্রমিকরা ২০২১-২২ মেয়াদের চুক্তির জন্য ১৯ মাস অপেক্ষার পরও মালিক এবং সরকারের ঘুম না ভাঙার কারণে ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে কর্মবিরতী, সড়ক অবোরোধের মতো কর্মসূচি পালনে বাধ্য হয়েছেন। শ্রমিকরা মজুরি ও  রেশন বিহীন অবস্থায় অর্ধাহার-অনাহারে দিনযাপন করেও ন্যূনতম মানসম্পন্ন মজুরির দাবি উত্থাপন করছে। সেই সময় রাষ্ট্রের জমি ইজারা নিয়ে মালিক বনে যাওয়া ইজারাদাররা সোনারগাঁ হোটেলে বসে হাজার টাকা দামের চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে চা শ্রমিকদের দৈনিক ৪২২ টাকা মজুরি দেওয়ার মিথ্যা গল্প শোনাচ্ছেন।

নেতারা বলেন, বাগান মালিকরা একর প্রতি বাৎসরিক ৩০০ টাকা খাজনা পরিশোধ করে। সেই ক্ষেত্রে প্রতি চা শ্রমিকের জন্য অর্ধ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত ঘরের জন্য কীভাবে দৈনিক ৭৬ টাকা ব্যয়ের হিসাব করা যায়? রেশন বলতে নিম্নমানের যে চাল বা আটা দেওয়া হয় তার জন্য দেখানো হিসাব প্রকৃত ব্যয়ের চেয়ে অনেক কম। আবাসন, রেশন, নামমাত্র চিকিৎসা সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধা বাবদ ব্যয় কোনোভাবেই ৮০ থেকে ১০০ টাকার বেশি নয়। বাগান মালিকদের ভাষ্য অনুসারে শ্রমিকদের আন্দোলনের ফলে দৈনিক ২০ কোটি টাকার চা পাতা নষ্ট হচ্ছে। অর্থাৎ চা শ্রমিকরা প্রতিদিন ২০ কোটি টাকার উৎপাদন করে তার বিপরীতে ১ লাখ ৪ হাজার স্থায়ী আর ৩৬ হাজার অস্থায়ীসহ মোট ১ লাখ ৪০ হাজার শ্রমিকের মজুরির জন্য ব্যয় করে মাত্র ১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। ৩০০ টাকা হারে নগদ মজুরি আর অন্যান্য সুবিধাসহ মজুরি বাবদ দৈনিক ৪০০ টাকা ব্যয় করলেও মজুরি বাবদ দৈনিক মোট ব্যয় হবে ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা আর উদ্বৃত্ত থাকবে ১৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা। তাই যৌক্তিক মুনাফার বিচারে চা শ্রমিকদের ৩০০ টাকা মজুরির দাবি মানতে কালক্ষেপণ আধুনিক দাস ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার অপকৌশল মাত্র।

নেতারা আন্দোলনরত অনাহারক্লিষ্ট চা শ্রমিকদের কাছ থেকে ক্ষুদ্র ঋণের কিস্তি আদায় বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, চা শ্রমিকরা সন্তানদের লেখাপড়া করানোর খরচ চালাতে যেয়ে কিংবা চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে সুদের জালে জড়িয়ে অমানবিক কষ্টের মধ্যে পড়েন। দেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় পানীয় উৎপাদনকারী এই শ্রমিকদের সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য রাষ্ট্রকে সুদবিহীন দীর্ঘমেয়াদী ঋণ বা বৃত্তির ব্যবস্থা করতে হবে। চা বাগান মালিকদের নামমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্র নয়, হেলথকার্ডের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে।

নেতারা বলেন, প্রশাসনের যেসব কর্তাব্যক্তি আন্দোলনের পেছনে বহিরাগতদের উস্কানি খুঁজছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, রাষ্ট্রের কর্মচারী হিসেবে ব্যাক্তি মালিকের তোষণ নয় বরং সংবিধান অনুসারে বৈষম্যহীন ভাবে প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা আপনাদের দায়িত্ব ছিল। নিজেদের প্রশ্ন করুন দৈনিক ১২০ টাকা মজুরিতে আপনারা বা আপনাদের কোনো স্বজনের মৌলিক চাহিদা পূরণ হয় কি? যদি তা না হয় তাহলে শ্রমিকদের মানবিক মজুরি আদায় করে দিতে ব্যর্থতার মধ্যে দিয়ে সংবিধানের ১৫ নং অনুচ্ছেদের নির্দেশনা লঙ্ঘিত হচ্ছে।

তার বলেন, দেশের প্রতিটি মানবিক মানুষের দায়িত্ব আধুনিক দাস ব্যবস্থার বিরুদ্ধে চা শ্রমিকদের লড়াইয়ে তাদের পাশে থাকা। তাই ষড়যন্ত্র, উস্কানি ইত্যাদি শব্দমালা দিয়ে নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করার অপচেষ্টার পরিবর্তে চা শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি আদায়ে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মচারীদের মানবিক ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০২২
এইচএমএস/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।