ঢাকা, সোমবার, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ মে ২০২৪, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রোহিঙ্গা সমস্যার ৫ বছর

‘প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হলেই বার্মায় যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়’

সুনীল বড়ুয়া,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০২২
‘প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হলেই বার্মায় যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়’

কক্সবাজার: ‘রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হলেই বার্মায় যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। মারামারি, কাটাকাটি, লড়াই শুরু হয়।

এসব হচ্ছে মিয়ানমারের ছলচাতুরি। এমন পরিস্থিতিতে আমরা আদৌ আমাদের ভিটে মাটিতে ফিরতে পারবো কিনা তা নিয়ে সন্দিহান। ’ 

২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আসার পাঁচ বছর পূর্ণ হলেও এমন আশঙ্কার কথা জানালেন রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের ইসি মেম্বার ও উখিয়ার বালুখালী নয় নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দা মাস্টার শফি উল্লাহ (৫২)।  

মিয়ানমারের আরাকানের বর্তমান সময়ের পরিস্থিতির কথা জানিয়ে শফি উল্লাহ বলেন, এখনও আরাকানের ১৪টি জেলায় সেদেশের সেনাবাহিনী এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে যুদ্ধ চলছে। বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘসহ আন্তজার্তিক সম্প্রদায় প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নিলেই সেখানে যুদ্ধ শুরু হয়।  

আরাকানে রোহিঙ্গা নির্যাতন নতুন কিছু নয়। ১৯৬২ সাল থেকে পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালিয়ে আসছে দেশটির সেনাবাহিনী ও মগেরা। এর মধ্যে নির্যাতনের শিকার হয়ে জীবনে আমি তিন তিন বার বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছি। যাই আর আসি। কিন্তু ২০১৭ সালের পর এখন যে পরিস্থিতি দেখছি, আমার মনে হচ্ছে না, অধিকার নিয়ে আমরা সেদেশে ফেরত যেতে পারবো।

শুধু রোহিঙ্গা নেতা শফি উল্লাহ নন, একই শিবিরের ষাটোর্ধ্ব রোহিঙ্গা মিজান আহমেদও জানালেন তাঁর শঙ্কার কথা।  

তিনি বলেন, মিয়ানমারে আমার বাড়ি ছিল আরাকানের মংডুর বলি বাজার এলাকায়। আমরা বাবা অলি আহম্মদ সেদেশের সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। আমার বয়সও অনেক হয়েছে। আর কতদিন বাঁচবো তাও বলতে পারছি না।

আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, বার্মা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে যা শুরু করেছে সব তামাশা। বাস্তবে রোহিঙ্গাদের সেদেশে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে নেই দেশটির।  

‘রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেবে নেবে সময় ক্ষেপণ করছে মিয়ানমার। এটা নাটক। বাস্তবতা হচ্ছে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নেবে না। আর রোহিঙ্গারাও তাদের সব অধিকার ফেরত না পেলে সেদেশে যাবে না। ’ এভাবে বললেন বালুখালীর ৯ নম্বর শিবিরের আরেক রোহিঙ্গা মো. আলম (৩৫)।  

রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মুহিব উল্লাহকে গুলি করে হত্যার পর প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আরও থমকে গেছে বলে জানান রোহিঙ্গা নেতারা।  

সংগঠনটির বর্তমান সেক্রেটারি মো. জুবায়ের বাংলানিউজকে বলেন, মাস্টার মুহিব উল্লাহ আমাদের নেতা ছিলেন। তিনি সব রোহিঙ্গাদের পক্ষে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে প্রত্যাবাসনের জন্য জোরালো দাবি তুলেছিলেন।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন যেন দ্রুত শুরু করা হয়, সেজন্য কাজ করতেন তিনি। কিন্তু তাকে হত্যার পর সবকিছু স্থবির হয়ে গেছে।  

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় বাংলাদেশ সরকার চেষ্টা চালিয়ে গেলেও কোনো কাজ হচ্ছে না।  

এদিকে মুহিব উল্লাহর মৃত্যুতে রোহিঙ্গাদের ভয়েসও ছোট হয়ে গেছে। তবে সরকারের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই বলেন জুবায়ের।

তবে আন্তজার্তিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা অর্জনসহ প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শামছুদ্দৌজা নয়ন।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এ পর্যন্ত আমাদের পক্ষ থেকে ৮ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারের কাছে পাঠানো হয়েছে। তারা সেগুলো যাচাই-বাছাই করছে। প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য বাংলাদেশ জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।  

প্রসঙ্গত মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। এর আগে আসা রোহিঙ্গাসহ নতুন পুরনো মিলে এখন ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা শিবির এবং নোয়াখালীর ভাসান চরে বসবাস করছে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৭০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০২২
এসবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।