ঢাকা, শুক্রবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ মে ২০২৪, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

থানা হেফাজতে মৃত্যু: ‘পুলিশ তখন কী করছিলো?’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০২২
থানা হেফাজতে মৃত্যু: ‘পুলিশ তখন কী করছিলো?’

ঢাকা: রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় সুমন শেখ নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। চুরির মামলায় গ্রেফতার সুমন শুক্রবার (১৯ আগস্ট) মধ্যরাতে নিজের ট্রাউজার খুলে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ দেখানো হলেও স্বজনদের জিজ্ঞাসা, থানায় একজন আত্মহত্যা করলো তখন পুলিশ কী করছিলো? তাদের দাবি, পুলিশের অবহেলার কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।

এছাড়া, সুমনকে মারধর করা হয়েছে, তার শরীরে অসংখ্য নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে বলেও দাবি করেছে পরিবার।

শনিবার (২০ আগস্ট) বিকেলে বিক্ষুব্ধ স্বজনরা হাতিরঝিল থানার সামনে এ নিয়ে বিক্ষোভও করে। বিকেলে সুমনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের মর্গে পাঠায় পুলিশ।

সুমন শেখের মৃত্যুর বিষয়ে তার স্বজন মো. সোহেল আহমেদ বলেন, গতকাল দুপুরে একটি চুরির মামলায় সুমন শেখকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সুমন রামপুরায় পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতেন। আজ আমরা জানতে পারি সে থানার ভেতরে মারা গেছে।

সুমন থানায় আত্মহত্যা করেছে- এমন সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশ স্বজনদের দেখিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ফুটেজে দেখা যায়, রাত সাড়ে ৩টায় সুমন তার পরা ট্রাউজার দিয়ে থানার গ্রিলের সঙ্গে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করছে। আমাদের প্রশ্ন, থানায় পুলিশের হেফাজতে একজন লোক কীভাবে আত্মহত্যা করে, পুলিশ তখন কী করছিল?

সুমনের স্ত্রী জান্নাত আরা জানান, রামপুরা টিভি সেন্টারের পাশে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন সুমন। সেখানে চুরির অভিযোগে তাকে মারধর করা হয়। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। রাতে পুলিশ তাকে থানায় আনার সময় মারধর করেছে। এরপর থানা হাজতে এনেও তাকে নির্যাতন করা হয়।

তিনি বলেন, গতকাল রাতে আমি থানায় সুমনকে দেখতে আসছিলাম। আমারে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে বের করে দেওয়া হয়েছে।

ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক বলেন, হাতিরঝিল থানায় সুমন শেখ নামে এক আসামির আত্মহত্যার ঘটনা তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে থানায় ওই সময় দায়িত্বরত দুই পুলিশ সদস্যকে দায়িত্ব অবহেলার জন্য সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

ডিসি বলেন, একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন সুমন শেখ। ওই অফিসের ৫৩ লাখ টাকা চুরির ঘটনায় গত ১৫ আগস্ট একটি মামলা হয়। এ ঘটনায় তিন জনকের গ্রেফতার করা হয়েছিল। গ্রেফতার আসামিরা হলেন আল আমিন, সোহেল রানা ও অনিক হোসেন।

পরে এই তিন জনের দেওয়া তথ্য ও অফিসের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে চুরির সঙ্গে সুমন শেখের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। পরে তাকে শুক্রবার বিকেলে গ্রেফতার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, গ্রেফতারের পর সুমন শেখকে নিয়ে রাতে তার বাসায় অভিযান চালিয়ে  ৩ লাখ ১৩ হাজার ৭০০ টাকা জব্দ করা হয়।

আসামি সুমনের শেখের আত্মহত্যার বর্ণনা দিয়ে তেজগাঁও বিভাগের ডিসি বলেন, অভিযান শেষে সুমন শেখকে রাতে হাতিরঝিল থানা হাজতে রাখা হয়। শনিবার সকালে রিমান্ড আবেদন করে তাকে আদালতে হাজির করার কথা ছিল। কিন্তু শুক্রবার দিবাগত রাত ৩ টা ৩২ মিনিটে সুমন তার পরনে থাকা ট্রাউজার দিয়ে গলায় ফাঁস দেয়। যা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে। এই ফুটেজ নিহতের স্ত্রীসহ স্বজনদেরও দেখানো হয়েছে।

এ ঘটনায় তদন্ত চলমান রয়েছে বলেও জানান ডিসি।

বাংলাদেশ সময়: ২২৩৯ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০২২
পিএম/ইআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।