কেরানীগঞ্জ (ঢাকা): পুলিশের পরিপাটি পোশাক, সাজসজ্জা আর দাপুটে চলাফেরা অনেককেই পুলিশ হতে আগ্রহী করে তুলে। লাখো তরুণ-তরুণীদের স্বপ্ন- বড় হলে পুলিশ হবো, দেশ ও জাতী গঠনে ভূমিকা রাখবো।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা চত্বরের জরাজীর্ণ ভবনের ছোট একটি কক্ষে পাশাপাশি চৌকি বিছিয়ে গাদাগাদি করে থাকেন ১৯ জন। যেখানে নেই পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা। ছোট এই ভবনটিতে দিনের বেলায়ও থাকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে প্রায়ই চর্মরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এখানকার পুলিশ সদস্যরা। পাশে পুলিশ কর্মকর্তার ঘিঞ্চি পাকা কক্ষে বাঁশে ঝুলানো বৈদ্যুতিক সিলিং ফ্যানটি বলে দেয় ভবনটির করুন অবস্থা। এখানে সাময়িকভাবে পানির ব্যবস্থা করা গেলেও সংকীর্ণ টয়লেটটি যেন এক টুকরো নরক! ভবনটিতে কোনো মতে বিদ্যুতের সরবরাহ করা গেলেও নড়বড়ে ভাঙা সুইচের সঙ্গে খোলা বৈদ্যুতিক তার বাড়িয়েছে মৃত্যু ঝুঁকি। তাছাড়া স্বাভাবিকের চেয়ে একটু জোরে বাতাস এলেই দেয়ালের পলেস্তারা থেকে বালি খসে পড়ে। ভবনের ছাদে এবং দেয়ালের বড় বড় গর্ত জানান দিচ্ছে যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। পরিবার-পরিজন রেখে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আসা পুলিশ সদস্যরাই এখানে আছেন অনেকটা নিরাপত্তাহীনতায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ২০০৭ সালে জরুরি প্রয়োজনে কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের একটি পুরাতন ভবনের কবি সিরাজুল ইসলাম পাবলিক লাইব্রেরি বন্ধ করে সেখানে স্থাপন করা হয়েছে একটি পুলিশ ফাঁড়ি। সাময়িক সময়ের জন্য এটি করা হলেও ১৬ বছররেও লাইব্রেরি ফেরত পায়নি স্থানীয়রা। উপজেলা প্রশাসন ও ঢাকা জেলা পুলিশ নতুন ভবন নির্মাণ করে লাইব্রেরি ও পুলিশ ফাঁড়ি আলাদাভাবে স্থানান্তর করার কথা দিলেও আলোর মুখ দেখেনি সেটি। তাই উপজেলার বইপ্রেমী মানুষেরা পাশাপাশি কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরাও।
এ ব্যাপারে কোনাখোলা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ভুক্তভোগী পুলিশ পরিদর্শক মো. ফজলুল হক বাংলানিউজকে বলেন, একটি কক্ষে থাকেন ২০ জন। এখানে নেই মালখানা, হাজতখানা, নেই অস্ত্রাগারও, তাই বিছানার পাশে অস্ত্র রেখে ঘুমাতে হয় পুলিশ সদস্যদের। আর যে শৌচাগার রয়েছে তা ব্যবহার অনুপযোগী।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ জামান বাংলানিউজকে বলেন, আধুনিক পুলিশ ফাঁড়ির কোনো সুযোগ-সুবিধাই নেই ফাঁড়িটিতে। তাছাড়া আমরা চাই না পাঠাগারে পুলিশ ফাঁড়ি থাকুক। আমরা উপজেলার ভেতরে বা আশেপাশে কোনো ভবন বা জমি পেলে পুরাতন ভবনটি ছেড়ে দেব।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কেরানীগঞ্জ সার্কেল) শাহাবুদ্দিন কবির বাংলানিউজকে বলেন, কোনাখোলা পুলিশ ফাঁড়িটির অবস্থা বলার মতো নয়। জীর্ণশীর্ণ ভবনটি যে কোনো মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে। বিষয়টি আমরা একাধিকবার উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছি, কোনো সমাধান পাইনি। আমরা আবারও আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে বসবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেদি হাসান বাংলানিউজকে বলেন, পাঠাগার ও পুলিশ ফাঁড়ি দুইটি নিয়েই আমরা কাজ করছি। স্থানীয় জনসাধারণ ও পুলিশের পক্ষ থেকেও আমাদের কাছে একাধিক আবেদন এসেছে, প্রয়োজনীয় জমি পেলেই আমরা লাইব্রেরি ও ফাঁড়িটি অন্যত্র স্থানান্তর করবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০২২
এসআরএস