ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছেন না চাষিরা

ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২১ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০২২
পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছেন না চাষিরা

শরীয়তপুর: প্রচণ্ড খরায় ক্ষেতেই শুকিয়ে মরে যাচ্ছে পাট। সময় পেরিয়ে গেলেও পানির অভাবে পাট কেটে জাগ দিতে না পেরে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ভেদরগঞ্জের চাষিরা।

খালে-বিলে পানি না০ থাকায় চরম ভোগান্তিতে এ উপজেলার পাট চাষিরা। বর্ষার ভরা মৌসুমেও পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়াসহ বর্ষার পানি খাল-বিলে না ওঠায় চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। তাই বাধ্য হয়ে আশপাশের ক্ষুদ্র জলাশয়, ডোবা ও পুকুরে পাট জাগ দিতে হচ্ছে। এতে স্বাভাবিক খরচের চেয়ে বেশি খরচ হওয়াসহ পাটের গুনগত মান কমে যাচ্ছে। আর পাটের শুভ্রবর্ণ বদলে কালো রং ধারণ করছে।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এ উপজেলার ১৩ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় পাট উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল চার হাজার হেক্টর জমির। সরকারি সহায়তা ও অনুদান পাওয়ায় উপজেলায় পাট চাষের লক্ষমাত্রা অতিক্রম করে তা পাঁচ হাজার ৫৫৪ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর এক হাজার ৫৫৪  হেক্টর অতিরিক্ত জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল হেক্টর প্রতি ৭ দশমিক ৫ মেট্রিক টন। সেখানে উৎপাদন হয়েছে ৮ দশমিক ৫ মেট্রিক টন।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, পানি না থাকায় কৃষকরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। উপজেলার নদী, মাছ চাষের পুকুর, খাল, বিল কোথাও পর্যাপ্ত পানি না থাকায় পাট জাগ দিতে পারছেন না তারা। কোনো উপায় না পেয়ে পাট কেটে ক্ষেতেই ফেলে রাখেছেন। অনেকে বন্যার পানির আশায় পাট না কেটে রেখে দিচ্ছেন।

আবার কেউ কেউ পর্যাপ্ত পানি না পেয়ে নিচু জায়গায় জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে জাগ দিচ্ছেন। তবে এতে করে ফলন ভালো হলেও পর্যাপ্ত পানির অভাবে পাটের আঁশ আর সোনালি না থেকে কালো ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে। এতে পাটের বাজারমূল্য অনেক কম হবে বলে আশংকা কৃষকের।

ভেদরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে চাষ করা বেশির ভাগ জমির পাট কাটা শুরু হয়েছে। বৃষ্টি না হওয়ার কারণে মাঠে পানি জমেনি। জমি থেকে নদী বা খালের দূরত্ব অনেক বেশি হওয়ায় শ্রমিকদের অতিরিক্ত মজুরি দিতে হচ্ছে। অনেকে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে নছিমন ও ভ্যানে করে নিয়ে নদী বা খালে জাগ দিচ্ছেন। তবে এতে খরচ বেশি হওয়ায় অনেকে পাট কেটে মাথায় করে নিয়ে পাশের খাল বা বাড়ির পুকুরে জাগ দিচ্ছেন।

উপজেলার চরভাগা ইউনিয়নরে কৃষক আলী আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, এ বছর বৃষ্টির পরিমাণ খুবি কম। পুরো আষাঢ় মাস গেল বৃষ্টিহীন। শ্রাবণেও বৃষ্টির দেখা নেই। তাই আমাদের এলাকায় এখনও কোথাও পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি নেই। বর্ষার পানির আশায় আছি। খালে সামান্য বৃষ্টির পানি জমছে। সেখানেই পাট জাগে ফেলতে হচ্ছে। প্রয়োজনীয় পানির অভাবে পাটের আঁশ ছাড়ানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

উপজেলা পাট অধিদপ্তরের পরিদর্শক ও উপ-সহকারী পাট কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এ বছর উপজেলার তিন হাজার চাষিকে বিনামূল্যে পাট বীজ ও জন প্রতি ১২ কেজি করে রাসায়নিক সার দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও উপজেলার ১৫০ জন চাষিকে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। 'উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর পাট ও পাট বীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ' প্রকল্পের মাধ্যমে উপজেলায় ২০টি প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু পানির অভাবে পাট পচাতে চাষিদের অনেকটা সমস্যা হচ্ছে। আমরা তাদের রিবনরেটিং পদ্ধতি অবলম্বন করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার ফাতেমা ইসলাম বলেন, এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় খালে-বিলে পর্যাপ্ত পানি নেই। তাই কৃষকরা পাট জাগ দেওয়া নিয়ে কিছুটা সমস্যায় পড়েছেন। পাট চাষের উপকারিতা হচ্ছে যে পাটের ঝরে পড়া পাতা জমিতে পচে জৈব সার তৈরি হয়। ফলে জমির উর্বরতা বেড়ে যায়। পরবর্তীতে যে কোনো ফসল করলে তার ভালো ফলন পাওয়া যায়।

তিনি আরও বলেন, জমি থেকে অনেক দূরে বহন করে নিয়ে পাট জাগে ফেলতে হচ্ছে। এতে করে পাট উৎপাদনে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু পাটের ন্যায্য দাম পেলে চাষিদের লোকশান গুনতে হবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৯ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০২২
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।